স্পিন ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত রফিক

স্পিনারদের উর্বর ভূমি হিসেবেই বাংলাদেশকে চেনে সবাই। সর্বশেষ দুই যুগে বাংলাদেশ ক্রিকেট পেয়েছে অনেক প্রতিভাবান স্পিনার; যাদের পারফরমেন্সে নতুন উচ্চতায় গিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। আর এই যাত্রার শুরুটা হয়েছিলো মোহাম্মদ রফিকের হাত ধরে। সেই রফিকই এখন চিন্তিত বাংলাদেশের স্পিনারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

রফিকের হাত ধরেই বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের স্পিন অস্তিত্বের জানান দিয়েছিলো বাংলাদেশ। বেশির ভাগ টেস্টেই দুই ইনিংসে বল করার সুযোগ না পেয়েও প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে মাত্র ৩৩ টেস্টে একশো উইকেট শিকার করেছিলেন মোহাম্মদ রফিক। শুধু স্পিনার হিসাবেই সফল ছিলেন না তিনি। রফিক বিদায়ের আগে নিজ হাতে গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তার উত্তরসূরিদের।

কক্সবাজারে বাংলাদেশের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত লিজেন্ড’স চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলতে এসে রফিক জানিয়েছেন সাকিব-রাজ্জাককে অনুশীলনে সব শেখাতেন তিনি। সময়ের পরিবর্তনে সেই সাকিব হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আর রাজ্জাকের ঝুলিতে রয়েছে ওয়ানডেতে দেশের হয়ে প্রথম একশো উইকেট শিকার করার রেকর্ড।

কিছু দিন আগেই সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে রাজ্জাক এখন বিসিবির নির্বাচক। রাজ্জাকের পর বাংলাদেশের স্পিন বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু ক্যারিয়ারের শেষ গগণে থাকা সাকিবের বিকল্প তৈরি হয়নি এখনো। মোহাম্মাদ রফিক তাই চিন্তিত মানসম্মত কোন স্পিনার না আসলে শূন্যস্থান তৈরি হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটে।

তিনি বলেন, ‘সাকিব আল হাসান ও বা অন্যরা, যাদের যখন নির্বাচকরা নিয়ে আসে, তারা কিন্তু আমার হাত ধরেই এসেছে। নির্বাচকরাই বল- রফিক এটা সাকিব, এটা রাজ্জাক- এভাবে। আমিও তাদের নিয়ে অনুশীলন করতাম; এটা এভাবে করো, ওভাবে করো। সবচেয়ে বড় কথা ওদের কাছ থেকেও আমি অনেক কিছু শিখতে পারি, ওরা আমার কাছ থেকে। শেখার কোনো শেষ নেই।’

রফিক আরো বলেন, ‘আজকে এদের দিয়েছি, কিন্তু এদের পরে কে আসবে? এ ধরনের খেলোয়াড় কিন্তু এখন তৈরি হচ্ছে না। এখন যদি তৈরিই না হয় আর এই জায়গাটায় শূন্যস্থান পড়ে, সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটেই শূন্যস্থান তৈরি করবে।’

রফিকের কথার প্রমাণ মিলেছে সদ্য শেষ হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই। চোটের কারণে টেস্ট সিরিজে ছিলেন না সাকিব আল হাসান। ওয়ানডেতে স্পিনের সামনে অসহায় আত্নসমর্পণ করে হোয়াটওয়াশ হওয়া ক্যারিবিয়ানরা টেস্ট সিরিজে সাকিববিহীন স্পিন আক্রমণকে অনায়াসে খেলে উল্টো হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশকেই।

রফিক মনে করেন স্পিনারদের উপর অতি আত্ববিশ্বাসী হয়ে জেতার আগেই নিজেদের জয়ী ভেবেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্পিনাররা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি একটুও।

রফিক বলেন, ‘যেকোনো জিনিসই আপনি যদি ভালোভাবে না করেন, জিততে পারবেন না। আমি সমর্থক হিসেবে যা দেখেছি মনে হয়েছে ওরা জেতার আগেই জিতে গেছে। ওরা চট্টগ্রামে হেরে যাওয়ার পর ম্যাচে ফেরা কিন্তু কঠিন ছিল। হতে পারে ঢাকায় ফিরে ওরা প্রত্যাবর্তন করবে বলে আশাবাদী ছিল। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারের পর জিনিসটা কঠিন হয়ে যায়। তার মধ্যে ম্যানেজমেন্টের একটা চাপ ছিল, মিডিয়া ও সমর্থকদের চাপ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা এখানে সব পেশাদার ক্রিকেটার খেলে।’

তবে বর্তমানে পেশাদার ক্রিকেটার না হয়েও পরিবর্তন হননি রফিক। এখনো স্পিন জাদুতে বিমোহিত করছেন সবাইকে। লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে মোহাম্মাদ রফিকের অলরাউন্ডার পারফর্মে ভর করে শিরোপা জিতেছে একমি স্টাইকার্স। টুর্নামেন্টে বল হাতে ৮ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৭৫ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন মোহাম্মদ রফিক। ফাইনালে ৫ উইকেট শিকার করে হয়েছেন ম্যাচ সেরাও। রফিক জানিয়েছেন মানসিক শক্তি দিয়েই এমন পারফর্ম করেছেন তিনি।

রফিক বলেন, ‘অনেক জায়গায় এ ধরণের টুর্নামেন্ট খেলছি, প্রচুর ফ্রাই ডে ক্রিকেটও খেলি। এ বছরও করোনার মাঝ থেকে করোনার পর মিলিয়ে ৫টি টুর্নামেন্ট খেলেছি। আমরা তো ওরকম কাজ করি না। দেখা যায় আসি, হাত ঘুরাই, খেলি, মজা করি। এটা মানসিকতার ব্যাপার। আমার যে বয়স আমি কিন্তু এই বয়সে একজন বাচ্চার সাথে আমি পারবো না। আমার খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতাটা ব্যবহার করি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link