কথায় আছে মানুষের জীবন নাকি সিনেমার চিত্রনাট্যের থেকেও বেশি নাটকীয়। সেদিনও সিনেমার মতোই গল্প চলছিল, সেন্ট্রাল কোপেনহেগেনে বন্দুকযুদ্ধ। সেখানে উড়ে এসে পরলেন আমাদের গল্পের নায়ক। না, নায়ক উড়ে এসে তামিল সিনেমার মতন সবার বন্দুকের গুলি থামিয়ে দেননি, কিংবা তাদের অ্যারেস্ট করে থানায় নিয়ে যাননি। হলে তো সেটা বড় স্ক্রিনের জন্যই তৈরি হওয়া কোনো চিত্রনাট্য হতো। বরং এই গল্পে নায়ক রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিল, শরীরে চার চারটি গুলি নিয়ে। ৪ মাস পর যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিল, তখন ফুটবলই ছিল তার বেঁচে থাকার একমাত্র পন্থা।
প্রতিটি সিনেমার গল্পে টার্নিং মোমেন্ট থাকে, যেখান থেকে নায়কের গল্প একটা পুরো সার্কেলে ঘুরে আসতে থাকে। সিনেমার শুরুতে দেখানো হিরোর সাথে সিনেমার শেষে দেখানো হিরোর বিস্তর পার্থক্য; সিনেমার ভাষায় বলতে গেলে যেটাকে বলে ‘হিরো’স আর্ক’। জামাল ভুঁইয়ার হিরো’স আর্ক অনেক জায়গা থেকেই শুরু করা যায়, তাতে গল্পের প্লটে বিন্দুমাত্র প্রভাব পরবে না। তার গল্পটা ঠিক তার খেলার মতন; যেখানেই বাঁধা পেয়েছেন, সেখান থেকে নিজের মতো করে জায়গা তৈরি করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
বাবা-মা দু’জনেই ইউরোপ পারি জমিয়েছেন ষাটের দশকে। ডেনমার্কেই তাদের পরিচয়, পরিণয়। জামালের জন্মটাও সেখানে। ছোটবেলাটা কেটেছে প্রবাসী বাঙ্গালি বাবা-মায়ের স্বপ্নের মত করেই। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার, ছেলে পরে আছে ফুটবল নিয়ে মাঠে। ডেনমার্কের ব্রন্ডবিতে বেড়ে উঠা যেকোনো বাচ্চার জন্যই পথ হয় দু’টো, হয় ফুটবল নয়তো ড্রাগস। গোলাগুলি, ড্রাগস, গ্যাং; সবকিছুই যেন এখানে মিলেমিশে অদ্ভুত সংসার পেতে আছে। আর সেখানেই জামাল ভুঁইয়া আর ড্যানিয়েল ওয়াস এক টুকরো শান্তি পেয়েছিলেন ফুটবলে।
লোকাল স্কাউটদের চোখ থাকে এখানেই। পরিত্যাক্ত কয়লার খনিতে যদি কালেভদ্রে এক টুকরো হিরে পাওয়া যায়? পেলেন তো পেলেন একেবারে দুই হীরের টুকরোই পেয়ে বসলো ব্রন্ডবি। দুই বন্ধু, বয়সে পার্থক্য নেই বললেই চলে, গলায় গলায় বন্ধুত্ব। জামাল ভুঁইয়া আর ড্যানিয়েল ওয়াস। দুই রত্নকেই দলে ভেড়াল ব্রন্ডবি। সেখান থেকে তাদের যেন একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লড়াই। কিন্তু জামাল ঠিক খেল দেখালেন ডার্বিতে।
উইং দিয়ে এসে করা এক গোলে পরাজয়ের কালিমা লেপ্টে দিলেন রাইভাল কোপেনহেগেনের কপালে। কোপেনহেগেন তখন ডেমনার্কের সেরা দল, আর সেরা দলের বিপক্ষে সেরা খেলা খেলোয়াড়কে কী ফেলে রাখতে পারে কোপেনহেগেন? বরং তাকে তড়িঘড়ি করে কিনে আনল তারা। জামাল তখন সবে মাত্র পা দিয়েছেন ১৫-তে। জামাল-ওয়াসের দশ বছরের পাশাপাশি চলা শেষ হলো জামালের নতুন শুরু দিয়ে।
জামালের পথচলা বদলে গিয়েছিল কোপেনহেগেনে পা দিয়েই। উইংয়ে পরে থাকা জামালের বল কন্ট্রোল অ্যাবিলিটি দেখে এখানেই প্রথম পরামর্শ পেয়েছিলেন, পাকাপাকি মিডফিল্ডার হয়ে যাওয়ার। জামালও দেখেলন, ভুল কিছু তো বলেননি। তখন অবশ্য উইঙ্গারদের কাজ এখনকার মতন ফিনিশিং ছিল না, বরং বল নিয়ে উইং দিয়ে আক্রমণ তৈরি করে দেওয়া পর্যন্তই, সেটা মিডফিল্ড থেকে করলেই বা দোষের কী? এতদিন পর্যন্ত জামালের গল্প, স্বপ্ন, পথচলা স্বাভাভিক দশ-বারোটা ড্যানিশদের মতনই ছিল। কিন্তু তার গল্পের অনেকটা পথ তখনও লেখা বাকি।
১৫ নভেম্বর, ২০০৭। স্কুল থেকে ফিরছিলেন জামাল ভুঁইয়া। এর মধ্যেই কেউ একজন বলেছিলেন, আজকে তাড়তাড়ি বাসায় ফিরে যেও, দেরি করো না। তিনিও ভেবে পাননি হঠাৎ করে তার বন্ধু বান্দগব এমন কথা কেন বলবে? স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুতই বাসায় ফিরছিলেন জামাল। এর মাঝেই সেন্ট্রাল কোপেন হেগেনের ক্রিশ্চিয়ানিয়া কেঁপে উঠলো বন্ধুকের গুলির আওয়াজে। এলাকার আধিপত্য নিয়ে শুরু গ্যাংয়ের মধ্যে বিস্তর বন্ধুকযুদ্ধ। আর সেখানেই ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকার খেসারত দিয়তে হয় জামালকে। চারটি গুলি শরীরে নিয়ে সরাসরি কোমায় চলে যান জামাল। শুরু হয় তার গল্পের নতুন সূচনা।
দূর্ঘটনার পর কোমা থেকে বের হতে সময় লেগেছিল ২ দিন। তিন মাস লেগেছিল হাসপাতালের বেড থেকে উঠতে, আর বাসায় ফিরতে ৪ মাস। গলা দিয়ে খাবার নামতো না, বেঁচে থাকা ছিল স্যালাইনের উপর।
কথায় আছে, মাঝে মধ্যে দুই পা পেছাতে হয় সুন্দর একটা দৌড় শুরু করার জন্য। জামাল ভুইয়ার জন্য এই ঘটনা দুই পা পেছানো ছিল না, বরং ছিল এতোদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের সকল কিছু মুহূর্তে ধ্বংস হতে যাওয়ার সামিল। সেই ঘটনার ৭ মাস পর প্রথম ফুটবল মাঠে পা রাখেন জামাল। কিন্তু পথ চলতে ভীত, যে পথ এতদূর পেরিয়ে এসেছেনব, তা তো মুহূর্তেই ধূলিস্বাৎ। নতুন শুরুর অনুপ্রেরণা যখন পাচ্ছিলেন না, তখনই ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন সাবেক কোচ জনি লারসন।
জামালের লড়াই করার মনোভাবটা খুব ভালোমতোই বুঝতে পেরেছিলেন লারসন। তাই ৭ মাস পর মাঠে ফিরলেও তার উপর থেকে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হারাননি কোচ। ৭ মাসে ১৪ কেজি ওজন হারিয়ে জামাল যখন মাঠে ফিরলেন, আবার যেন শুণ্য থেকে শুরু করতে হলো তাকে। কোপেনহেগেন আর ভরসা রাখতে পারেনি তার উপর, ফলে ডেনমার্কের টপ ডিভিশনে খেলার সুযোগটা সেখানেই থামিয়ে দিয়তে হয় তাকে। শুরু করতে হয় ডেনমার্কের দ্বিতীয় বিভাগে। নিজেকে যখন আস্তে আস্তে তৈরি করছেন, তখনই তার কাছে কল আসে বাংলাদেশের কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের।
সালটা ২০১১, বাংলাদেশের কোচ তখন সাইফুল বারি টিটু। বাংলাদ্রেশে এসে ট্রায়াল দেওয়ার কথা শুনতে পান কারো মুখে। বাবা-মাকে সিদ্ধান্ত জানালে, না করেননি। বাবার কথা ছিল একটাই, ক্যারিয়ার শেষ করে যখন পেছনে ফিরে তাকাবে, তুমি নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করবে দেশকে কী দিতে পেরেছো? যদি উত্তর হয় কিছুই না, তবে দিনশেষে তোমারই খারাপ লাগবে। জামাল ভুইয়াও আর নিজেকে না করেননি। প্রথমবারের মতন বাংলাদেশে পা রাখেন ২০১১ সালে। লক্ষ্য বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে জড়ানো।
এক বছর আগেও চেষ্টা-চরিত্র করেছিলেন, কিন্তু ভিসা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি, কিন্তু এবার যখন এসেছেন, একটা হেস্ত-নেস্ত করেই ছাড়বেন। কিন্তু বিধি-বাম; সুযোগ পাওয়ার আগে তো মানিয়ে নিতে হবে! দেশে এসেই হাসি-তামাশার পাত্রে পরিণত হলেন জামাল। ইউরোপ থেকে বাংলাদেশের মতো দেশে এসে মানিয়ে নিতে নিতেই পার হয়ে গেল সময়। ভাষা, খাদ্য, আবহাওয়া; কোন জিনিসটা বিপক্ষে ছিল না তার। একটু দৌড়াতে না দৌড়াতেই হাঁপিয়ে পরছেন, পানি খাচ্ছেন, আবার দৌড়াতে উঠেই পরে যাচ্ছেন। এই ছেলেকে নাকি বাংলাদেশ দলে নেবে?
বাংলাদেশ ছাড়লেন হতাশায়, কিন্তু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে। লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশ দলের জার্সি একদিন না একদিন গায়ে জড়াবোই। সুযোগ এলো তার ঠিক দু’বছর পরে। এবার বাংলাদেশের ডাগ-আউটে ডাচ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফ। তার চাল-চলন কথাবার্তা বেশ আলাদা, ইউরোপীয়ান ধাঁচে খেলানোর চেষ্টা, তাই মামুনুলের পাশাপাশি আরেকজন মিডফিল্ডার দরকার তার, মিডফিল্ড হোল্ড করে রাখার জন্য।
খুঁজতে খুঁজতে চোখে পড়ল ২ বছর আগে ট্রায়াল দিয়ে যাওয়া জামালের দিকে। তাকেই আবার ডেকে পাঠেলেন ক্রুইফ। আগেরবার এসে ব্যর্থ হয়ে যাওয়া দৌর্দন্দ প্রতাপে। ক্রুইফের অধীনে থাকা ক্যাম্প থেকে শেষমেশ জাতীয় দলে ডাক পেলেন জামাল। টাক মাথার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়ে রইলেন বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাস।
৩১ আগষ্ট, ২০১৩; তারিখটা স্বর্ণ দিয়ে বাধাই করে রাখবেন জামাল ভুঁইয়া। নেপালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচেই ১৫ নম্বর জার্সিটা গায়ে চড়ে জামালের। সেখান থেকেই বাংলাদেশ দলের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠা। প্রথমবারের মতন বিদেশে জন্ম নেওয়া কোনো ক্রীড়াবিদের বাংলাদেশের জার্সি গায়ে জড়ানোর ঘটনা সেটা। পুরো বাংলাদেশ আনন্দে মেয়েছিল জামালের সাথে। কিন্তু সেই আনন্দ হতাশায় পরিণত হয়েছিল নেপালের কাছে ২-০ গোলে হেরে। কিন্তু জামালের গল্পটা সবে মাত্র শুরু।
ডেনমার্ক থেকে এসে বাংলাদেশে মানিয়ে নেওয়া খুব একটা সহজ কাজ ছিল না, শুরুতে একটু-আধটু বাংলা বলা জামালকে আপাদমস্তক পরিবর্তন করতে হতো নিজেকে, বাংলাদেশ দলে নিয়মিত হওয়ার জন্য। সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ক্যারিয়ার বনাম দেশ। সেই ভোটে দেশকেই বেছে নিয়েছিলেন জামাল। ডেনমার্কের প্রথম ডিভিশনের ক্লাবের অফার বাদ দিয়ে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন বাংলাদেশে। যোগ দেন শেখ জামালে; ইচ্ছে বাংলাদেশকে চেনা, বাংলাদেশে থিতু হওয়া, তাই আর দোটানায় ভুগেননি। ডেনমার্কের ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে নতুন শুরু করলেন বাংলাদেশে।
২০১৩ থেকে ২০২১; ৮ বছরে বাংলাদেশের ফুটবল আর জামাল ভুঁইয়ার ক্যারিয়ার দুটো চলেছে প্যারালাল দু’টি লাইনের মতন। একড়ি গ্রাফ শুধু উপরের দিকেই উঠে গিয়েছে, অন্যটি নিচের দিকে। ২০১৩ সালে দাটিয়ে থাকা ফুটবল মুখ থুবড়ে পড়েছিল ২০১৬-তে এসে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অস্ট্রেলিয়া, জর্ডানের সাথে হার না হয় মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু ভুটানের মতন দলের সাথে? বাংলাদেশ দলের বাঁচা মরার লড়াইয়ে ভুটানের সামনে দাঁড়িয়ে খেই হারিয়ে ফেলা দলটা আর কেউ ছিল না, ছিল এই বাংলাদেশের জার্সি পরা খেলোয়াড়েরাই।
জামাল ভুঁইয়াকে সেটা দেখতে হয়েছে মাঠেই বাইরে দাঁড়িয়ে। কারণ সেসময়ের কোচ টম সেইন্টফিল্টের মতে জামাল নাকি খেলার জন্যই ফিট ছিলেন না। নিজে দেখেছেন দলকে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে। দিনশেষে দলের পরাজয়ে নিজের সুনাম গাইবার জায়গা অতীতেও ছিল না, বর্তমানেও নেই, ভবিষ্যত্বো কোনদিন হবে না। ফুটবল খেলাটা এরকমই, নিজের ভালো ততদিন চোখে পরবে না যতদিন না পুরো দলের খেলা এক সমান্তরালে চলতে শুরু করবে।
জামাল ভুইয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল সেটাই। কোচদের প্রশংসা পাচ্ছেন, জামালের গুরুত্ব বোঝাতে ক্রুইফ তার তুলনা দিচ্ছেন আয়ারল্যান্ডের রয় কিন, হল্যান্ডের নাইজেল ডি জংদের সাথে। দক্ষিণ এসীয়ার সেরা মিডফিল্ডারের তকমা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কোচ নিকোলা কাভাজোভিচ। কিন্তু দিনশেষে রেজাল্ট তো শূন্য। ‘ভুটান ট্যাজেডি’র পর যখন আবার ফুটবল ফিরলো বাংলাদেশে, তখন বেছে বেছে জামালের হাতেই অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড তুলে দিল বাফুফে। এবার আর ভুল করেননি জামাল। নিজ গায়ে দায়ত্ব নিয়েছেন নিজের আর দলের শ্রেষ্ঠত্ব সকলের কাছে পৌছে দেওয়ার। এরপর থেকে আস্তে আস্তে যেন প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করে ফুটবল।
জামাল সেই কাজটিই করলেন, জয়-পরাজয় যাই হোক, নিজেদের খেলার ধরণটা পালটে যেতে দেননি জামাল। এখনও ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বুক চিতিয়ে লড়াই করার ব্যাপারটা স্পষ্ট জামালদের খেলায়। কাতারের বিপক্ষে ডি-বক্সের কোনা থেকে করা গোল, কিংবা কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়াম স্তব্ধ করে দেওয়া ফ্রি-কিক, সবকিছুতেই তার অধিনায়কত্বের অদ্ভুত এক ছোঁয়া। প্রতিটা মুহূর্তে যখন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলেন, তখন যেন অদ্ভুত শক্তি ভর করে তার গায়ে। টার্মিনেটরের ভবিষ্যৎ থেকে বর্তমানে আসার মতন, মিশন একটাই জন কোনরকে বাঁচিয়ে রাখা! জামাল ভুঁইয়াও নিরন্তর সেটাই করে যাচ্ছেন যেন, ফুটবলটাকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য।
এ বছর আই-লিগ খেলে এসেছেন কলকাতা মোহামেডানের জার্সিতে; মোনেম মুন্নার পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অধিনায়কত্ব করেছেন ভারতের মাটিতে। আইএফএ শিল্ড কাপে ফাইনালে তুলেছিলেন শেখ জামালকে, জিতেছেন ভুটানের কিংস কাপ। নিয়মিত স্পেন যাচ্ছেন লা-লিগায় কমেন্ট্রি করতে। কিন্তু দিনশেষে ক্লাবের সাফল্য আর গুনগান শুধু বাংলাদেশেই, জামালের লক্ষ্যটা অনেক বড়।
ইউরোপের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন, ক্লাব, ক্যারিয়ার ছেড়ে জীবন করেছেন এই ধুলোভড়া শহরে। যানজট আর দূঢিত বাতাসের শহরে বল নিয়ে ছুটে চলছেন অবিরাম। সবকিছু না থাকার মাঝেও কিছু একটা যেন আছে। ভালোবাসা। জামাল যখন বলেন, ‘It’s a special feeling to be a Captain of 170 million people’ – তখন কথাটা গায়ে লাগে, মনে হয় কিছু করতে এসেছেন জামাল। সেটা করতে দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছেন এই দেশে।
প্রতিটা ম্যাচে আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিতে। অথচ এই দেশ সম্পর্কে জেনেছেন নিজের ২০ বসন্ত কাটিয়ে দেওয়ার পর। ২১ বসন্ত পার করে প্রথম পা রেখেছেন এই দেশে। এই দেশে খেলবার জন্য। যখন ভেবেছিলেন বিধাতা সকল দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছেন তার জন্য, তখন দুয়ার খুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করে পুরো বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে পরিচিত করার নেশায় মত্ত তিনি।
ক্যারিয়ারে সব ছেড়ে বাংলাদেশে আসার লক্ষ্যটা তার এখনও পুরণ হয়নি। হয়রো ক্যারিয়ার অন্য সকলের মতন শুণ্য গাতেই শেষ করবেন জামাল। কিন্তু ক্যারিয়ার শেষে গর্ব করে জামাল নিজের বাবাকে ঠিকই বলতে পারবেন, দেশকে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি। কিছু পাই বা না পাই, দেওয়ার আনন্দে বিভোর আমি। এর থেকে বড় গর্বের বিষয় আর কী-ই বা হতে পারে?