ধুমকেতু হয়ে এসে নক্ষত্র হয়ে হারালেন

মাইক সেলভির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আসাটাই যেন এক নাটকীয় গল্প।

হঠাৎ করে ইংল্যান্ডের প্রায় আধ ডজন পেস বোলার ইনজুরিতে পড়ে গেল। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৭৬ সালের সিরিজের দলে ডাক পেলেন আনকোরা সেলভি, মাইক সেলভি। পুরো নামটা বিশাল – মাইকেল ওয়াল্টার উইলিয়াম সেলভি। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকও হয়ে গেল তার। আনকোরা একটা ছেলে হঠাৎ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে এসেই ভিভ রিচার্ডসদের ব্যাটিং লাইন আপ ধসিয়ে দিলেন।

এ যেন এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। তবে সেলভির গল্পটাতে আরেকটা লাইন যোগ করতে হবে। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন এবং হারিয়েও গেলেন।

তবে বল হাতে হারিয়ে গেলেও কলম হাতে সারা জীবন সংসার করে গেছেন এই ক্রিকেটের সাথেই।

ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার ১৯৪৮ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী এই সেলভি ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তবে ক্রিকেট ছিল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ১৯৭২ সালেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যাত্রা শুরু তার। নিয়মিত ক্রিকেট খেলে গেলেও তখনকার ইংল্যান্ড দলে পেসার হিসেবে জায়গা পাবার আলোচনায় কখনোই ছিলেন না তিনি।

তবে ১৯৭৬ সালে যেন এক নাটকীয় বাঁক নিলো তাঁর জীবন। তখনকার শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের টেস্ট সিরিজ চলছে। প্রথম তিন ম্যাচ মাঠে গড়াতেই ইংল্যান্ডের নিয়মিত ৫-৬ জন পেসার ইনজুরিতে পড়ে গেলেন। এই ইনজুরি নিয়ে যদিও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে প্রচুর। তবে এতে হঠাৎই অবিশ্বাস্য ভাবে ইংল্যান্ড দলে ডাক পেলেন সেলভি।

চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে অভিষেকও ঘটলো তাঁর। তবে এই নাটকীয়তা চরম রূপ নিল যখন সেলভি তাঁর প্রথম ২০ বলেই ৬ রান দিয়ে তুলে নেন তিন উইকেট। এই অবিশ্বাস্য স্পেলে তিনি নিয়েছিলেন রয় ফ্রেডরিকস ও ভিভ রিচার্ডসদের উইকেট।

ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই তিনি ৪১ রান দিয়ে তুলে নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের চারটি উইকেট। ওই ম্যাচে ১৫২ রান দিয়ে মোট ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই ম্যাচ বড় ব্যাবধানে হেরেছিল তাঁর দল ইংল্যান্ড। তবে এই পারফর্মেন্সের পর পরবর্তী ম্যাচেও সুযোগ পান তিনি। যদিও সেই ম্যাচে কোনো উইকেট পাননি তিনি।

তবুও এরপরের বছর ১৯৭৭ সালে ভারত সফরে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে আসেন এই ফাস্ট বোলার। তৎকালীন বোম্বে মানে এখনকার মুম্বাইয়ে, স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে তাঁর ক্যারিয়ারের তৃতীয় ম্যাচেও কোনো উইকেটের দেখা পাননি এই পেসার। ফলে সেটাই হয়ে যায় মাইক সেলভির ক্যারিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। মাত্র তিনটি টেস্ট ও ছয়টি উইকেটেই থামে তাঁর নাটকীয় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

তবে কাউন্টি ক্রিকেটের বড় নাম ছিলেন ইংলিশ এই পেসার। ১৯৭৬ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে মোট ৯০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দুই বছর বাদে নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে নিয়েছিলেন ১০১ উইকেট। সব মিলিয়ে ২৭৮ টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ২৬.৬৬ গড়ে মোট নিয়েছেন ৭৭২ টি উইকেট। ১৯৮৪ সালে ৩৬ বছর বয়সে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই পেসার।

তবে ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারেননি তিনি। সে বছরই দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার ক্রিকেট প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। তাছাড়া বিবিসি রেডিওতে ধারাভাষ্যও দিয়েছেন তিনি। প্রায় ৩১ বছর ক্রীড়া সাংবাদিকতা করে ২০১৬ সালে এই পেশা থেকে অবসর নেয় তিনি। ক্রিকেটার হিসেবে যতটা না – ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবেই তিনি বেশি খ্যাতি পান।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link