Social Media

Light
Dark

তাসমান সাগরের যুদ্ধক্ষেত্র

ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে হয় ঐতিহাসিক অ্যাশেজ সিরিজ; অস্ট্রেলিয়া আর ভারতের মাঝে হয় বর্ডার গাভাস্কর ট্রফি। তেমনি তাসমান সাগরের দেশ নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া খেলে দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি। দুই দলের এই লড়াই তুলনামূলক অনিয়মিত হলেও রোমাঞ্চের কোন অভাব নেই। মাঠে গড়ানোর পর থেকেই ক্রিকেটপ্রেমীদের বিনোদন দিয়ে আসছে এই সিরিজ।

করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে আবারো চালু হয়েছে দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি। চলতি সিরিজ উপলক্ষে এই ট্রফির অতীতের কিছু শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচ নিয়ে কথা বলা যাক।

  • মেলবোর্ন (২০০৪)

দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি শুরু হয়েছিল ২০০৪ সালে ৷ আর সেবারই দেখা মিলেছিল টান টান উত্তেজনাকর এক ম্যাচ। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৪৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া। একটা সময় জয়ের জন্য তিন ওভারে ৩০ রান প্রয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডের।

সে সময়কার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ফেভারিট ছিল অজিরা। কিন্তু মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ এক পাঁচ ওয়াইড সহ বাইশ রান হজম করে ম্যাচ তুলে দেন কিউইদের হাতে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাঁচ রান দরকার হলে দুই বল আর চার উইকেট বাকি রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দল।

  • ওয়েলিংটন (২০০৫)

পরের বছর নিউজিল্যান্ডের মাঠে আয়োজিত হয়েছিল দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি। এবারও আগে ব্যাট করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। ১০১ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেলা অজিদের সামনে তখন অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল। কিন্তু অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস এবং মাইকেল ক্লার্কের ২২০ রানের জুটি তাদের বড় সংগ্রহ এনে দেয়।

পাহাড়সম টার্গেটে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ড অবশ্য বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। শেষ ওভারে জয় থেকে মাত্র ছয় রান দূরে ছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু অভিষিক্ত মাইক লুইসের ওভারে তিন রানের বেশি তুলতে পারেনি তারা।

  • ক্রাইস্টচার্চ (২০০৫)

ওয়েলিংটনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি নিউজিল্যান্ডকে। সেই ম্যাচের তিন দিন পর ক্রাইস্টচার্চে দেখা মিলেছে আরেকটি রান বন্যার ম্যাচ। এবারও আগে ব্যাট করতে নেমে মাইক হাসির ঝড়ো ৮৮ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া ৩৩১ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করায়।

স্কট স্টাইরিসের সেঞ্চুরিতে জয়ের পথে এগুতে থাকা কিউইরা। শেষ সাত ওভারে ৭৪ রান প্রয়োজন ছিল তাদের, হাতে ছিল মাত্র দুই উইকেট। এসময় ত্রাতা হয়ে আসেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তাঁর ২৫ বলে করা হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে এক ওভার হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড।

  • হ্যামিল্টন (২০০৭)

 

২০০৭ সালের দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি অস্ট্রেলিয়ার জন্য দু:স্বপ্নের মত ছিল। সিরিজের সব কয়টি ম্যাচ হেরে গিয়েছিল তারা। এর মাঝে শেষ ম্যাচে অজিদের জন্য ছিল বেশ বেদনাদায়ক। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ম্যাথু হাইডেনের অপরাজিত ১৮১ রানের উপর ভর করে ৩৪৬ রান করতে সক্ষম হয় তারা। এরপর কিউইদের টপ অর্ডার ধ্বসিয়ে দিতেও ভুল হয়নি দলটির বোলারদের। কিন্তু ৪১ রানে চার উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড আশা ছাড়েনি।

ম্যাকমিলানের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির কল্যানে শুরুর বিপদ সামলে জয়ের কাছাকাছি চলে আসে তারা। ৮ ওভার বাকি থাকতে লক্ষ্য থেকে ৪৪ রান দূরে ছিল নিউজিল্যান্ড, হাতে ছিল মাত্র দুই উইকেট। মার্ক গিলেস্পি রান আউট হওয়ার আগে ১৫ বলে ২৮ রান করে কাজ অনেকটাই সহজ করে দেন। এরপর শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে করে বাকি পথ পাড়ি দেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।

  • অকল্যান্ড (২০১৫)

এই সময়ে অবশ্য অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল দ্য চ্যাপেল হ্যাডলি ট্রফি। তবে নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে। দুই দল মিলে মাত্র ৫৫ ওভারে শেষ হওয়া সেই ম্যাচটি পুরোটাই ছিল রোমাঞ্চে ভরা। আগে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভাল হলেও ট্রেন্ট বোল্টের দাপটে হঠাৎ-ই তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে। এক পর্যায়ে এক উইকেটে ৮০ রান করা অজিরা অলআউট হয়েছিল ১৫১ রানে।

ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ঝড়ো ব্যাটিং দেখে জয় তখন সময়ের ব্যাপার মনে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের জন্য। কিন্তু এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ম্যাচ জমিয়ে তোলেন মিশেল স্টার্ক। চার উইকেটে ১৩১ থেকে কিউইদের স্কোরকার্ড হয়ে যায় ৯ উইকেটে ১৪৬। তবে ক্রিজের একপাশ ধরে রাখা কেন উইলিয়ামসন মিচেল জনসনের বলে লং অন দিয়ে একটি ছয় হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link