Social Media

Light
Dark

যে রেকর্ড ভুলে যাওয়াই উত্তম!

এক মিনিট কম দেড় ঘন্টা। ৮৯ মিনিটও বলা চলে। মাত্র ১০৮ বলের ইনিংস। প্রায় ৫০০ দর্শকদের সামনে সেদিন এক লজ্জাজনক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। চামিন্দা ভাস, পারভেজ মাহরুফদের বোলিং জাদুতে আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে সর্বনিন্ম রানের রেকর্ডের লজ্জায় পড়ে আফ্রিকার দেশটি।

২০০৩ সাল। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের করণ দশার শুরুর সময়। বর্ণবাদ আর রবার্ট মুগাবে সরকারের স্বৈরাচারিতায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে তখন ধসের শুরু। ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’ দাবি করে জিম্বাবুয়ের দুই তারকা ক্রিকেটার হেনরি ওলোঙ্গা ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার মাঠে নামে কালো আর্মব্যান্ড পড়ে। এরপরই বাদ পড়লেন দু’জনে। জাতীয় দলের দরজা বন্ধ।

বছরখানেক বাদেই শ্রীলঙ্কা তখন জিম্বাবুয়ে সফরে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের জন্য জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে খেলোয়াড় সংকট। বোর্ডও বেশ বিপাকে! হিথ স্ট্রিককে বরখাস্ত করায় ফুঁসে উঠে সিনিয়র ক্রিকেটাররা। সাথে সাথে জাতীয় দলের ১৪ সিনিয়র ক্রিকেটার না খেলার অস্বীকৃতি জানায়।

এতে বিপাকে পড়ে তরুণদের নিয়ে দল সাজায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট (জেডসি)। টাটেন্ডা টাইবুকে অধিনায়ক করে ১৫ সদস্যের এক নতুন দল ঘোষণা করে জেডসি। একমাত্র শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার হিসেবে সেই দলে ছিলেন ব্রেন্ডন টেলর।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের দু:সময়ে ২০ এপ্রিল শুরু হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ। প্রথম দুই ওয়ানডেতেই লঙ্কানদের শক্তিশালী স্কোয়াডে কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। তারকা ক্রিকেটার বলতে টাইবু আর ডগলাস হন্ডোই ছিল।

সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে সিরিজ হারের সামনে সামনে দাঁড়িয়ে জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচে উপুল চন্দনা, নুয়ান জয়সা, মুত্তিয়া মুরালিধরনের মত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারকে বিশ্রামে দেয় শ্রীলঙ্কা। তাদের বদলি সুযোগ পান দিলহারা ফার্নান্দো, রঙ্গনা হেরাথ ও পারভেজ মাহরুফ। ওই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় হেরাথ ও মাহরুফের।

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। ১৮ রানে তখন জিম্বাবুয়ের এক উইকেট। সেখান থেকে মাত্র ১৮ রান যোগ করতেই অলআউট জিম্বাবুয়ে! এক অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় ব্যাপার। ফার্নান্দো, ভাসের বোলিং তোপে মুখ থুবড়ে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং শিবির। ১৮ রানেই পর পর দুই বলে আউট টেলর ও টাইবু। ১ রানের মাথায় জিম্বাবুয়ের চার উইকেট নেই। ১৯ রানেই দলের পাঁচ ব্যাটার প্যাভিলিয়নে।

এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৮ রানের জুটি গড়ার পথে অ্যালিস্টার মারেগুইড়েকে বোল্ড করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের ৩০০ তম উইকেট শিকার করেন ভাস। এরপর শেষ আঘাতটা মাহরুফের বলে। মাহরুফের তিন উইকেট শিকারে মাত্র ৩৫ রানেই শেষ জিম্বাবুয়ের ইনিংস।

৪, ৪, ৭, ০, ০, ২, ৪, ৩, ০, ৪, ০, ৭ – এই সংখ্যাগুলো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটারদের ওই ম্যাচের ব্যক্তিগত সংগ্রহ। সর্বোচ্চ সাত রান করে ডিওন ইব্রাহিম ও অতিরিক্ত খাত! শূন্য রানে ফিরেছেন চারজন।

২০০৩ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই পার্লে ৩৬ রানে অলআউট হয় কানাডা। সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এক অনাকাঙ্ক্ষিত লজ্জার রেকর্ড গড়ে জিম্বাবুয়ে। প্রতিপক্ষ এবারও শ্রীলঙ্কা!

মাত্র ৩৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে সামান জয়ন্থার ২৬ বলে ২৮ রানে ৯ উইকেটের দাপুটে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। জিম্বাবুয়ের পক্ষে একমাত্র উইকেটটি শিকার করেন ডগলাস হন্ডো। দলীয় ২৩ রানে রাসেল আরনোল্ড ৬ রানে ফিরলেও জয়ন্থার ২৮ ও মাহেলা জয়াবর্ধনের অপরাজিত ৩ রানে মাত্র ৫৬ বল খরচায় জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ সেরা হন চামিন্দা ভাস।

সেদিন দুই ইনিংস মিলিয়ে খেলা হয় মোটে ২৭ ওভার। লাঞ্চ বিরতির ৭০ মিনিট আগেই খেলা শেষ! পরের দুই ম্যাচও সহজেই জয় পায় সফরকারী লঙ্কানরা। ৫-০ তে জিম্বাবুয়ে ধবলধোলাই হলেও ৩৫ রানের সেই লজ্জার রেকর্ডটাই যেন কাল দাগ কেটে দেয় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে।

২০০১ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৫.৪ ওভারেই সাজঘরে ফিরেছিলেন জিম্বাবুয়ের সবাই। ১১ জনের রান সংগ্রহ ছিল মোটে ৩৮। এরপর ২০০৪ সালে হারারেতে সেই লজ্জার রেকর্ড!

সেই যে ধ্বংসের শুরু, এরপর মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করলেও আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। এখন ক্রিকেট দুনিয়ায় জিম্বাবুয়ে এক আক্ষেপের নাম।

লজ্জার এই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল, ২০২০ সালে। সেবার নেপালের বিপক্ষে তাঁরা ত্রিভূবন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অলআউট হয়েছিল ৩৫ রানে। অনাকাঙ্খিত এই রেকর্ডে এখন যৌথভাবে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও জিম্বাবুয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link