৮৩’র আনসাঙ হিরো

৫৫৬ রান, গড় ৩০.৮৯। উঁহু, নাক কোঁচকাবেন না। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ আরম্ভে ভারতীয় দলে একদিনের ম্যাচে পাঁচশোর ওপর রান ও ৩০-এর ওপর গড় – এই কম্বিনেশন আর কারও ছিল না। এবং ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে প্রথম ধাক্কাটি এই ছোট খাটো ভদ্রলোকই দিয়েছিলেন। যে সে টিমকে নয়, খোদ ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

তিনি যশপাল শর্মা। প্রতিভা বা টেকনিক – দুটোর কোনটাতেই পাশ মার্কের বেশি না পেলেও যেটায় ডিস্টিঙ্কশন পাবেন সেটা হচ্ছে কলজের জোর। সেই কলজের জোরেই সীমিত প্রতিভা স্বত্বেও এই শর্মা ভারতের বিশ্বজয়ের অন্যতম নায়ক। বলা যায়, আনসাঙ হিরো।

এবং কপিল দেবের ১৭৫ বাদ দিলে, ভারতের হয়ে ’৮৩ বিশ্বকাপে সর্বাধিক রানের ইনিংসটিও তারই খেলা। মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস, মার্শাল, জোয়েল গার্নারের সম্মিলিত আক্রমনের বিরুদ্ধে ১২০ বলে ৮৯। যার ওপর ভর দিয়ে নিজের প্রথম ম্যাচেই ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এ যাবত বিশ্বকাপে প্রথম পরাজয় উপহার দেয়।

এছাড়াও দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন যশপাল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত নক আউট ম্যাচে ৪০ এবং সেমি ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬১। ৮৯, ৪০ এবং ৬১ – তিনটি স্কোরই দলের হয়ে সেই ম্যাচগুলিতে সর্বাধিক স্কোর ছিল। টুর্নামেন্টে কপিলের পর ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানও তারই।

তবে আর সেই সোনালী ফর্ম ছুঁতে পারেননি যশপাল। বিশ্বকাপের পর আর মাত্র সাতটি ম্যাচে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। একবারও তার স্কোর ৫০ পেরোয়নি। কিন্তু আসল সময়ে খেলে দিয়েছিলেন। দুঃখের কথা, বিশ্বকাপ জয়ী সদস্যদের মধ্যে একমাত্র তিনিই আজ আমাদের মধ্যে নেই।

সেমি ফাইনালে তার একটি শট এখনও চোখে লেগে রয়েছে। উইলিসের প্রায় ইয়র্কার লেন্থের বল কব্জির মোচড়ে ফ্লিক করে গ্যালারিতে ফেলে দিয়েছিলেন যশপাল। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাকেও।

ইদানিং এই ধরনের শট খেলতে দেখা গেছে বিরাট কোহলিকে এবং আরও রিসেন্টলি শুভমান গিলকে। তবে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বিখ্যাত ফ্লিক খেলেছিলেন, কে আবার, স্বয়ং স্যার ভিভ রিচার্ডস, ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শেষ বলে। অফের দিকে সরে এসে হেন্ড্রিকের ইয়র্কার স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ভিভ।

কোথায় ভিভ, আর কোথায় যশপাল! কিন্তু সালটা ১৯৮৩, যে বছর যশপালদের (পড়ুন আন্ডারডগদের), ভিভদের নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link