আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিল সিকান্দার রাজার। কিন্তু নানা জটিলতায় তিনি সেটা পারেননি। তবে তিনি না পারলেও আনতুম নাকভি কিন্তু ঠিকই পেরেছেন। বাণিজ্যিক বৈমানিক আনতুম নাকভি তবুও মাটিতে রেখেছেন পা। ২২ গজের ধূসর মাটিতে নিজের সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। সিকান্দার রাজার পথ ধরেই তিনি অপেক্ষায় আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার।
ভারত সিরিজের জন্যে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড। সেখানে নতুন নাম হিসেবে রয়েছেন আনতুম নাকভি। জন্ম তার পাকিস্তানে হলেও জিম্বাবুয়ের জার্সি গায়ে চাপাতে চলেছেন সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটার। অবশ্য তার এই যাত্রাও কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর।
আনতুমের জন্ম হয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। নিশ্চয়ই ভাবছেন, সেখান থেকে কি করে তিনি জিম্বাবুয়ে পৌঁছে গেলেন? গল্পটা বেশ লম্বা। পাকিস্তানি বংশদ্ভুত আনতুমের বাবা জুবায়ের নাকভিও একটা সময় ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি অবশ্য নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেট খেলেছেন তার সময়ে। এরপর জীবনের পরিক্রমায় জুবায়ের নাকভি তার দুই ছেলে আনতুম নাকভি ও আওয়াদ নাকভিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি-তে চলে যান।
আনতুমের ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় অস্ট্রেলিয়াতেই। সেখান থেকে ডারউইনে চলে যান ক্লাব ক্রিকেট খেলতে। সেখান থেকে পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটে চলে আসেন আনতুম। আর মূলত সেখানেই নজর কাড়েন তিনি। নিজের প্রথম শ্রেনী ক্রিকেটের প্রথম দুই ম্যাচেই শতক হাকিয়ে সোরগোল ফেলে দেন। তাছাড়া অফ স্পিন করেও উইকেট বাগিয়ে নিয়ে সকলের আলোচনার বিষয়ে পরিণত হন।
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্তারা বুঝে যান এই আনতুম হতে চলেছেন জিম্বাবুয়ের নতুন দিনের কাণ্ডারি। তাইতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সুরাহা করে তাকে দেওয়া হয় জিম্বাবুয়ের নাগরিকত্ব। তবে হুট করেই জাতীয় দলে এসে গেছেন তিনি, তা কিন্তু নয়। রীতিমত নিজেকে প্রমাণ করে তবেই ডাক এসেছে তার জাতীয় দলে।
জিম্বাবুয়ের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে স্বীকৃত কোন ক্রিকেটের ৩০০ রান করার রেকর্ডও গড়েছেন তরুণ এই ক্রিকেটার। দারুণ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে জিম্বাবুয়ের জাতীয় দলের দরজায় নেড়েছেন কড়া। তবে প্রথম শ্রেনী ক্রিকেটে সফলতা পেলেও তার ডাকটা এসেছে মূলত টি-টোয়েন্টি দলে। অবশ্য এই ফরম্যাটেরও সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন তিনি।
৫ ইনিংসে প্রায় ১৪৭ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। ১৩৮ রান করেছেন প্রায় ৩৫ গড়ে। তাছাড়া নামের পাশে ৯টি উইকেটও রয়েছে তার। এই পরিসংখ্যানের অবশ্য চমকপ্রদ হওয়ার মত কোন তথ্য নেই। কিন্তু তবুও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সার্ভিস দেওয়ার মত সম্ভাবনা রয়েছে আনতুমের। তাছাড়া তার ব্যাটিং দৃঢ়তার প্রমাণ তো ইতোমধ্যেই তিনি দিয়েছেন।
প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ১৩ ইনিংসের ৪টিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। লিস্ট এ ক্রিকেটে ৮ ইনিংসের ৩টিতে সেঞ্চুরি করেছেন, একটিতে করেছেন হাফসেঞ্চুরি। লাল বলে ২০ উইকেট বাগিয়েছেন, সাদা বলের দুই ফরম্যাট মিলিয়ে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। পরখ করেই তাকে দলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ের নির্বাচকরা।
তাদের হয়ত প্রত্যাশা অনেক আনতুমের প্রতি। কেননা দলটির ক্রিকেট যে পতনের ঢাল বেয়ে ক্রমশ নিচের দিকেই নামছে। সিকান্দার রাজাদের কঠিন কাজে সহয়তার জন্যে আনতুমের মত বলিষ্ঠ কাঁধের সন্ধানই হয়ত করছিল জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট। সকল প্রত্যাশা মেটাতে পারবেন তো আনতুম? উড়বেন কি তিনি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে সাথে নিয়ে?