ভিন্ন দুই মহাদেশে চলছে ভিন্ন দুই ফুটবল যজ্ঞ, তবে সারা বিশ্বের সব দর্শকের মনোযোগ কেবল ঝমকালো ইউরোকে ঘিরেই। অন্যদিকে কোপা আমেরিকা খানিকটা অনাদরেই পড়ে আছে – কিন্তু কিছুটা হলেও মনোযোগ দেয়া উচিত সেখানে, লিওনেল মেসির শেষের শুরু বলে কথা।
চমকে যাওয়ার মত কথা নয় এটা, সবারি জানার কথা তিনি নিজের সম্ভাব্য শেষ কোপা আসরে খেলছেন এবার। যেকোনো ট্রেডমার্ক দৌড়, ডিফেন্স চেরা পাস কিংবা বাঁকানো ফ্রি-কিকে গোল হতে পারে তাঁর শেষ ফুটবলীয় মুহূর্ত। তাই মিস করতে চাইবে কোন ভক্তই।
আর এই টুর্নামেন্ট দিয়েই তো মেসির ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছিল। ক্লাব লিজেন্ড তকমা ঝেড়ে ফেলে ন্যাশনাল হিরো হয়ে উঠেছিলেন তিনি; ম্যারাডোনার ‘সে নেতা নয়’ এমন কটুক্তিকে পিছনে রেখেই হয়ে উঠেছিলেন ডি পল, ম্যাক অ্যালিস্টারদের অবিসংবাদিত নেতা – সবচেয়ে বড় কথা, জাতীয় দলের জার্সিতে তাঁকে প্রথম ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে দেখা গিয়েছিল মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চেই।
এরপর সেটার ধারাবাহিকতায় এই তারকা জিতেছেন কাতার বিশ্বকাপ, অবসান ঘটিয়েছেন কয়েক দশকের অপেক্ষার। এখন তাঁর সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ, ট্রফি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। ফুটবল ইতিহাসেই যা কম মানুষ করতে পেরেছে।
আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি অবশ্য সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন শিরোপা ধরে রাখার নিখুঁত পরিকল্পনা করা আছে। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয়, মেসি-ডি মারিয়া ছাড়া কিভাবে এগিয়ে যাবে দল তখন বোধহয় কিছুটা ভাবতে হবে তাঁকে। এটা সত্য যে, যতদিন এই দুজন আছেন ততদিন দলের মূল ভরসা তাঁরা-ই।
সেক্ষেত্রে দুই কিংবদন্তি যদি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলেন তাহলে তাঁদের খেলার ধরন অনুযায়ী টিম প্ল্যান সাজানো হবে। যতদিন যাচ্ছে মেসির দৌড়ের পরিমাণ কমছে, হাঁটছেন বেশি। ডি মারিয়ার তীক্ষ্ণতাও হ্রাস পাচ্ছে ধীরে ধীরে; তাই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে তরুণ জুলিয়ান আলভারেজ, এঞ্জো ফার্নান্দেজকে। আক্রমণ কিংবা রক্ষণের সময় পূর্বের তুলনায় বেশি অঞ্চল জুড়ে খেলতে হবে তাঁদের।
চলতি কোপা আমেরিকা এবং পরবর্তী বিশ্বকাপে স্থানীয় দর্শকের সমর্থন অবশ্য পুরোপুরি পাবে আর্জেন্টিনা; দুই বছর আগেও সেটা অবিশ্বাস্য ঠেকতো বটে কিন্তু ইন্টার মিয়ামির হয়ে খেলার সুবাদে সেখানকার জনগণের হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন ‘এলএমটেন’। এখন দেখার বিষয়, বারোতম খেলোয়াড় তথা সমর্থকদের শক্তিতে ট্রফি ধরে রাখতে পারে কি না আর্জেন্টিনা।