বেলা শেষে সুয়ারেজ রাজার বেলা শুরুর গান

ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট, কিংবদন্তিদের জন্য বয়স শুধুই একটা সংখ্যা। উরুগুয়ের স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ এর ক্লাস কতটা উঁচুতে, গত দুই দশকে অসংখ্যবার দেখেছে ফুটবল বিশ্ব।

লিভারপুলের হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ত্রাস ছড়িয়ে হাজির হয়েছিলেন বার্সেলোনাতে। লিওনেল মেসি এবং নেইমার জুনিয়রের সাথে মিলে গড়েছেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা আক্রমণত্রয়ী ‘এমএসএন’। মেসি-রোনালদোর যুগে, তাদেরকে হটিয়ে একমাত্র ফটবলার হিসেবে দুই দুইবার গড়েছেন এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

সময় বদলে যায়, সাইত্রিশ বছর বয়সী শরীর টানা নব্বই মিনিটের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ফুটবলের ধকল নিতে পারে না। ইউরোপিয়ান ফুটবল ছেড়ে বন্ধুর পাশে খেলতে তাই তো পারি জমিয়েছেন আমেরিকাতে।

জাতীয় দলের প্রথম একাদশেও  নিয়মিত দেখা যায়না তাঁকে। তরুণ ডারউইন নুনেজকে যায়গা ছেড়ে দিতে হয়, যেমনভাবে কালের পরিক্রমায় লিভারপুলেও তার উত্তরসূরী জায়গা নুনেজের দখলেই। কোন প্রতিবাদ ছাড়াই ডাগ আউটে বসে যান এক সময়ের উরুগুয়ান ফুটবলের রাজা।

অত:পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষন। নবীন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মর্যাদার লড়াইয়ে পিছিয়ে উরুগুয়ে। প্রথমবারের মত কোপা আমেরিকাতে খেলতে আসা কানাডার গতির বিপরীতের জবাব যেন নেই বহু যুদ্ধের রণকৌশল বাতলে দেয়া বিয়েলসার হাতে।

তরুণ নুনেজ ক্লান্ত, লড়াইয়ের শক্তি নেই আর। বিয়েলসা পুরোনো রাজার উপরে ভরসা করেন, ভরসা করে সমগ্র উরুগুয়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই যুদ্ধের ময়দানে আগমন লুইস সুয়ারেজের। শেষ সময় থেকে আর মাত্র তিন মিনিটের ব্যবধান। দম ফেলারও সময় নেই।

২-১ গোলে এগিয়ে থাকা কানাডা আর মাত্র তিনটা মিনিট খেলা ধরে রাখতে পারলেই কোপা আমেরিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করতে পারবে। ৯২ মিনিটে বক্সের ডানপাশ থেকে হিমিনেজের বাড়ানো বল সুয়ারেজের পায়ে, সামনে অসহায় গোলরক্ষক একা দাঁড়িয়ে। সময় থমকে যায়।

বৃদ্ধ জটায়ু ডানা ঝাপটায়, শেষবেলায় তবে দেখানো যাক আরো একবার বেলা শুরুর গান। শিকারের উপরে সমস্ত হিংস্রতা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে আজীবনের বিস্বস্ত বাঁ-পা। সময় উল্টো ঘুরে যায়। আয়াক্স, লিভারপুল, বার্সেলোনা হয়ে আমেরিকা, রাজা সুয়ারেজের বিজয়ী পতাকা উড়ল আরেকবার।

নির্ধারিত নব্বই মিনিট শেষে টাইব্রেকার তখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বিধাতা পাণ্ডুলিপি লিখে দিয়েছেন। সুয়ারেজের গোলেই নিশ্চিত হবে উরুগুয়ের মর্যাদার তৃতীয় স্থান। নিজের সম্ভাব্য শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে সুয়ারেজ আরো একবার প্রমান করবেন, ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট, বয়সটা স্রেফ একটা সংখ্যা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link