বিচিত্র এক চরিত্র। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের আড়ালে থাকা এক চরিত্র। ট্রান্সফার মার্কেটে তাঁকে নিয়ে নেই কোনো মাতামাতি, নেই কোনো শোরগোল। তবে, আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ দেশের জার্সিতেই যেন হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য এক মহাপ্রাচীর; বনে যান প্রতিপক্ষের হতাশার কারণ। ডিসাইসিভ সব সেভ করে নিজ হাতে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেন তিনি।
আর্জেন্টান স্থানীয় ক্লাব ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তে থেকে যাত্রা শুরু, তারপর আর্সেনালের বেঞ্চ, লোনে খেলা অসংখ্য ক্লাব, অতপর অ্যাস্টন ভিলা এবং সবশেষে ২০২১ সালে মিললো দেশের জার্সিতে দুনিয়া কাপানোর সেই সুবর্ন সুযোগ। একে একে জিতলেন কোপা আমেরিকা, ফিনালেসিমা আর স্বপ্নের বিশ্বকাপ।
এই গোলরক্ষকের সাফল্যের ঝুলি দীর্ঘদন শূণ্য থাকলেও, এবার যেন তা বেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার আসরে সেরা গোলরক্ষক, তাঁর পরের বছর তিনি বিশ্বকাপের মঞ্চেও গড়েন একই কীর্তি; সেই সাথে ২০২৩ সালে ইয়াশিন ট্রফি আর সর্বশেষ কোপা আমেরিকাতেও পেয়েছেন সেরা গোলরক্ষকের তকমা। চারিদিকে এখন শুধুই দিবুর জয়জয়কার।
আর্সেনালের বেঞ্চ থেকে সর্বশেষ কোপা আমেরিকা, তাঁর এই দীর্ঘ পথচলায় ক্লান্তি, হতাশা আর অগণিত অপেক্ষার প্রহরের শেষে ছিল সুখের হাসি, আনন্দের অশ্রু।
যদিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁকে দলের হয়ে কমই খেলতে দেখা গিয়েছে, বরং অন্য ক্লাবের হয়ে ধারেই খেলতে গিয়েছেন বেশি। একেক মৌসুমে একেক ক্লাবের হয়ে খেলেই সময় পার হতো দিবুর।
এক এক করে জায়গা পেলেন আর্সেনালের বেঞ্চে, সেখান থেকে মূল একাদশে। অত:পর খেলার সুযোগ পেলেন ইংলিশ প্রিমিয়য়ার লিগ আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি খেলেন অ্যাশটন ভিলায়। তাও সেখানেও তিনি অপরিহার্য্য কেউ নন।
কারণ, নিজের শতভাগ যে তিনি জমা করে রাখেন আর্জেন্টিনার জন্য, জাতীয় দলের জন্য। আর আর্জেন্টিনার গোলবারে দাঁড়ানো মাত্রই তিনি হয়ে ওঠেন অতিমানবীয় এক বাজপাখি। আর এই বাজপাখির ডানায় ভর করেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে একের পর এক শিরোপা জিতে চলেছে আর্জেন্টিনা।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। আসলে এটুকু দিয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের পুরোটা বলা যায় না। ধারের খেলোয়াড় রোজ রোজ কাউকে বিশ্বকাপ কিংবা কোপা জেতায় না। আর্জেন্টিনার ইতিহাসে দিবু তাই এক কাল্ট ফিগারের নাম।
মূল শক্তি তাঁর দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। ম্যাচের চূড়ান্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোতে নিজের স্নায়ু নিয়ন্ত্রেণে এনে প্রতিপক্ষ তিনি আতঙ্কে রাখতে জানেন। সব ভরসার পাহাড় ভেঙে পড়লেও আর্জেন্টিনা তাই ভরসা হারায় না। গোলবারে যে দিবু আছেন!