সাইড বেঞ্চ হয়ে উঠেছিল শরিফুল ইসলামের সঙ্গী। ক্যারিয়ারের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠছিলেন তিনি। মাঝ পথে দম হারিয়ে যেন থমকে গিয়েছিলেন। অবশ্য সে দায় তার নয়। ইনজুরিই তাকে বাধ্য করেছিল। সেখান থেকে আবারও নিজের ছন্দ ফিরে পাওয়ার প্রয়াশ করেও হয়েছিলেন ব্যর্থ। কিন্তু যার ধমনীতে বইছে চ্যাম্পিয়ন রক্ত, তাকে তো দমিয়ে রাখা দায়।
শরিফুলকে দমিয়ে রাখা যায়নি বেশিদিন। আপন গতিতে তিনি ছুটছেন আবার ক্রিকেটের সবুজ আঙিনায়। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে স্বরূপের শরিফুল ছড়িয়েছেন স্বস্তির সুবাতাস। এখন অবধি দুই ম্যাচ খেলেছেন তিনি। উইকেট বাগিয়েছেন দুইটি। সেটাই বরং বসন্তের আগাম বার্তা দিচ্ছে না।
বোলিংয়ের ধার ক্রমশ ফিরতে শুরু করেছে তার। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে মেইডেন আদায় করে নিয়েছেন তিনি। শরিফুলের করা ছয়টি বলে একটিও রান নিতে পারেননি অজি ক্রিকেটার অ্যাস্টন অ্যাগার। ব্যাট-বলের সংযোগ ঠিকঠাক করতে দেননি শরিফুল।
সেদিন দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তিনি। নির্ধারিত চার ওভারে রান দিয়েছিলেন মাত্র ১৬টি। অবশ্য উইকেটের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে একেবারে ইনিংসের শেষ অবধি। উইকেট শিকার শরিফুলের মূল লক্ষ্য নয়। তিনি খুব করে চাইছেন যেন নিজের হারানো ছন্দটা ফিরে পেতে। বলের লাইন আর লেন্থের সংমিশ্রণের সাথে গতির তারতম্য ঘটিয়ে ব্যাটারকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখার প্রয়াশটাই এখন ভেসে উঠছে।
সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে বাংলা টাইগার্স মিসিসাউগার হয়ে খেলা দ্বিতীয় ম্যাচেও। সে ম্যাচে অবশ্য নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট বাগিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচেও ইকোনমিক্যাল বোলিং করে গেছেন। ৪ ওভারে রান দিয়েছেন মোটে ১২টি।
একজন খেলোয়াড়ের ক্যারিয়ারের উত্থান-পতন নিত্যদিনের ঘটনা। কিন্তু পতনের সময়টায় খানিক ধৈর্য ধারণ করতে হয়। স্থির করতে হয় নিজের লক্ষ্য়। ধাপে-ধাপে চিরচেনা রূপে ফিরে আসার লড়াইটা করতে হয়। একজন খেলোয়াড়কেই বুঝতে হয় যে, তার জন্য ঠিক কোন জিনিসটা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সে প্রক্রিয়াতে শরিফুল হয়ত লেটার মার্ক পাওয়ার প্রত্যাশাই করছেন।
তবে তার এই প্রক্রিয়া মেনে, নিজের বোলিংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার ফলাফল দ্রুতই পাবেন না, সে বিষয়টিও শরিফুলের হয়ত জানা। তাইতো তিনি চমকে দেওয়ার কাজ এখন করছেন না। বরং নিজের ‘বেসিক’ ঠিক রেখে, খয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন। সহসাই ফলাফলের প্রত্যাশা না করে প্রক্রিয়া ঠিক রাখার এই যাত্রাটা নিশ্চয়ই উৎরে যাবেন। এরপর আগের চাইতে ভয়ংকর হয়ে উঠবেন শরিফুল- তেমনটাই হয়ত প্রত্যাশা সকলের।