ক্রিকেট এখন হয়েছে আধুনিক, লেগেছে যন্ত্রের ছোঁয়া। ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবাই চেষ্টা করছে খেলাটাতে কিভাবে আরো বেশি টেকনিক্যাল সুবিধা যোগ করা যায়, এই সুবিধা দিয়ে কিভাবে খেলাটাকে আরো বেশি নির্ভুল করা যায়।
তাঁতে খেলাটা আরো বেশি ‘নির্ভুল’ হওয়া উচিৎ। অনেক ক্ষেত্রেই অবশ্য তা হয় না। এই সুবিধাতেই মাঝে মাঝে বেঁধে যায়, যন্ত্রের ভুলে বিপাকে পড়তে হয় সবাইকে। সেসব যন্ত্রের বিপত্তির ঘটনাগুলো জেনে নিলে কেমন হয়?
- মাতিশা পাথিরানার ১৭৫ কিমি/ঘন্টা গতি
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ২০২০ আসর পাথিরানা ছিলেন শ্রীলঙ্কা দলের পেসার। মূলত লাসিথ মালিঙ্গার মত বোলিং অ্যাকশনের জন্যে শুরুতেই সবার নজর কাড়েন তিনি। তা অ্যাকশনে শুরু থেকেই নজর কাড়লেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রীতিমত তিনি হইচই ফেলে দেন। যশস্বী জয়সোয়ালকে করা ডেলিভারিটার পর স্পিডোমিটারে দেখা যায় বলের গতি ছিল ১৭৫ কিমি/ঘন্টা, যেটা কিনা শোয়েব আখতারের করা সবচেয়ে দ্রুতগতির বল (১৬৩.১ কিমি/ঘন্টা) থেকেও বেশি ছিল।
প্রথমে ১৭ বছরের কারো থেকে এমন গতি পেয়ে তাজ্জব বনে গেলেও, পরে অবশ্য জানা যায় স্পিডোমিটারের ভুল হয়েছে!
- স্কোরবোর্ডে ভুল
১৮৯৮ এ জন টুনিক্লিফ আর জ্যাক ব্রাউন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম উইকেটে ৫৫৪ রানের জুটি গড়েন। এই রেকর্ড ১৯৩২ সালে পারসি হোমস আর হার্বার্ট সাটক্লিফ ইয়োর্কশায়ারের হয়ে ৫৫৫ রানের জুটি গড়ে ভেঙে দেন। তো ম্যাচের দ্বিতীয় দিন স্কাটলিফ আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে অধিনায়ক ব্রায়ান সেলার্স ইনিংস ঘোষণা করে দেন। আর তখনই দেখা যায়, স্কোরকার্ডে আছে ৫৫৪!
পরে অবশ্য ঘটনা শিথিল করেন আম্পায়ার টাইগার স্মিথ, তিনি স্কোরারকে বলেন তিনি একটি নো বল হিসাব করতে ভুলে গিয়েছিলেন।
- জেমস প্যাটিসনের রান আউট
২০১৮-১৯ এর বিগ ব্যাশ লিগের ম্যাচ। ব্রিসবেন হিটের জেমস প্যাটিসন রান নেওয়ার সময় ডাইভ দিলে অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের খেলোয়াড়েরা আউটের আপিল করে। থার্ড আম্পায়ার রিভিউ তে দেখা যায় প্যাটিসনের ব্যাট পরিষ্কার ভিতরে ছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও আম্পায়ার তাকে আউট দিয়ে দেন।
এতে নন স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা ক্রিস লিন ক্কখিপ্ত হয়ে ওঠেন আর অ্যাডিলেড অধিনায়ক আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত পাল্টানোর অনুরোধ জানান। এতে প্যাটিসন ‘নট-আউট’ হলেও আসল ঘটনা জানা যায় একটু পর। কমেন্ট্রি বক্সে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট বলেন সমস্যাটা আসলে ছিল ‘রেডিও কমিউনিকেশন’-এ!
- কাজী অনিকের ১৬০ কিমি/ঘন্টা ডেলিভারি
এই ঘটনাটাও স্পিডোমিটারের। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, ২০১৮। নিউজিল্যান্ডে হওয়া সে বিশ্বকাপের ভারতের সাথে ম্যাচটাতে পৃথ্বী শ কে আউট করেন কাজী অনিক। একটু পর স্পিড দেখতে গেলে দেখা যায় ডেলিভারিটাতে কাজী অনিকের বলের গতি ছিল ১৬০ কিমি/ঘন্টা যেখানে কাজী অনিক বেশিরভাগ বলই করেন ১৪০ এর আশেপাশে গতিতে।
পরে অবশ্য আসল ঘটনাটা বোঝা যায়। কাজী অনিক বল করার আগেই বলের গতি দেখিয়ে ফেলেছিলন স্পিডোমিটার আর এটা ছিল একটা কারিগরি ত্রুটি।
- শচীন টেন্ডুলকার আউট?
২০১১ এর আইপিএল ম্যাচের ঘটনা। শচীন টেন্ডুলকারের ৩৮তম জন্মদিনে ডেকান চার্জারের বিপক্ষে মাঠে নামছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। সে ম্যাচেই একটা বিতর্কিত আউটের মুখে পড়েন শচীন । অমিত মিশ্রর সে ওভারের দ্বিতীয় বলে তিনি লং অফে দাঁড়ানো ডেল স্টেইনের হাতে তালুবন্দী হন। এরপর নো বল চেক করতে গেলে তিন রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
স্ট্যাম্প ক্যামেরা থেকে দেখা যায় এটা নো বল হতে পারে, মিড উইকেট থেকে দেখা রিপ্লেতে পরিষ্কার কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না, আবার কাভার থেকে দেখা রিপ্লে অনুসারে নো বল না হবার সম্ভাবনাই ছিল বেশি। মোটামুটি সব সম্ভাবনাই ছিল ডেলিভারিতে। পরে অবশ্য আম্পায়ার শচীনকে নট আউট দেন।