টেস্টের বাস্তবতাটা একটু দেরীতে বুঝতে শুরু করেছে আফগানিস্তান। সাদা পোশাকে প্রথম জয় পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে না হলেও এবার ‘হোম ভেন্যু’ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁরা নেমে এল মাটিতে। যদিও, এই ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে আলোর মশাল কিছুটা হলেও আফগানদের হয়ে জ্বলতে পেরেছেন এক আফগান।
তিনি হলেন আমির হামজা।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতার পর বল হাতে স্পিন ভেলকি দেখিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের নাচিয়েছেন এই ৩০ বছর বয়সী বাঁ-হাতি স্পিনার! মোটে খেলতে নেমেছেন নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট, আর এতেই শিকার করে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় পাঁচ উইকেট।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি। এক প্রকার বল হাতে জিম্বাবুইয়ানদের নিজের আঙুলের ডগায় নাচিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে আফগানদের দূর্বল আত্মপ্রকাশ না হলে হয়তো হামজার শিকার করা ৬ উইকেটের মূল্য অনেক বেশিই হতো। ব্যাটসম্যানদের সহায়তা পেলে ম্যাচের ফলাফলটা অন্যরকম হতে পারতো।
২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর উইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই শিকার করেন ক্যারিয়ারের মেইডেন ফাইফর। এরপর প্রায় ১ বছরের বেশি সময় পর আবারো সাদা পোশাকে খেলতে নেমেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শিকার করলেন ২য় বারের মতোন পাঁচ উইকেট বা তার বেশি।
পুরো নাম আমির হামজা, তবে আরেক নাম হামজা হটাক। নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সবশেষ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের হয়ে খেলেছিলেন তিনি। পূর্ণ সদস্য লাভের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১২ সালে আফগানিস্তানের খেলা প্রথম ওয়ানডেতে অভিষেক হয় এই হামজার।
২০১৮ সালে আহমেদ শাহ আবদালী ৪ দিনের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন আমির হামজা। ১০ ম্যাচে মোট ৬৭ উইকেট নেন তিনি। একই বছর আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগে (এপিএল) কান্দাহারসের হয়ে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে বর্তমানে খেলে থাকেন স্পিন ঘর টাইগার্সের হয়ে।
মে ২০১৮, ভারতের বিপক্ষে আফগানিস্তানের ইতিহাসে খেলা প্রথম টেস্টের স্কোয়াডে ছিলেন হামজা। যদিও সে ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়নি তার। পরের বছর নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পান তিনি, তবে এবার
আর বাইরে বসে কাটাতে হয়নি তাকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ২৭শে নভেম্বর টেস্ট অভিষেক হয় তার। অভিষেক টেস্টেই স্পিন ভেলকিতে শিকার করেন মেইডেন ফাইফর। একমাত্র আফগান বোলার হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই পাঁচ উইকেট শিকার করার কৃতীত্ব করেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানে ছয় উইকেটে নেওয়া আমির হামজা এখন পর্যন্ত ২* টেস্টে নিয়েছেন ১২ উইকেট! ২.৮ ইকোনমিতে মাত্র ১৩ গড়ে এই উইকেট শিকার করেন তিনি। ওয়ানডেতে ৩২ ম্যাচে ২৫ গড়ে ২১ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ৩০ ম্যাচে ২৫ গড়ে নিয়েছেন ২৮ উইকেট। ওয়ানডেতে সেরা বোলিং ১৭ রানে চার উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে সেরা ৩৯ রানে তিন উইকেট।
সাদা পোশাকে একদমই নতুন দল আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দলের খেলোয়াড়েরা বিশ্বের বিভিন্ন লিগে সুনাম কুড়ালেও টেস্ট ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ভিত গড়তে পারেননি। টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্য্যর খেলা, টেস্ট ক্রিকেট আত্মমর্যাদা আর সম্মানের লড়াই। এই টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পাড়ি দিতে হবে আরো বহুদূর। তবে রাশিদ খান, আমির হামজাদের মতো প্রতিভাবান এই স্পিনারদের ভেলকিতে এক সময় হয়তো বড় বড় দল নাকানিচুবানি খাবে ২২ গজে।