এক মাঠের রাজা

একজন ক্রিকেটারের উপর কিংবদন্তি কিংবা সর্বকালের সেরা উপাধি গুলো তখনই বসানো হয় যখন তিনি যেকোনো কন্ডিশনে, যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ধারাবাহিক ভাবে রান করে যান। ব্যাটাসম্যানদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। তবে গ্রেট ব্যাটসম্যানরাও অনেক সময় রান ক্ষরায় ভুগেন। কিন্তু তারা সেই দুঃসময় খুব দ্রুত কাটিয়ে উঠেন। আবারো ফিরে আসেন তাদের চেনা রূপে রানের ফুলঝুরি নিয়ে।

তবে এই ফিরে আসার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস খুব বড় ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করে। খারাপ সময়ে অনেক ক্রিকেটারই তাঁদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ফলে তাঁদের আর গ্রেট হয়ে ওঠা হয় না। অবশ্য এই আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সহজ উপায় হচ্ছে চেনা মাঠ, চেনা দর্শক, চেনা কন্ডিশন। প্রতিটা ক্রিকেটারেরই এমন কিছু চেনা স্টেডিয়াম থাকে যেখানে তারা আত্মবিশ্বাস পান। নিজেদের সেরাটা খেলেন। টেস্ট ক্রিকেটে এই একটি স্টেডিয়ামে কোনো একজন ব্যাটসম্যান সর্বোচ্চ কত রান করেছেন তা নিয়েই খেলা ৭১-এর আজকের আয়োজন।

  • মাহেলা জয়বর্ধনে (শ্রীলঙ্কা): সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব, কলম্বো

শ্রীলংকার এই ক্লাসিক ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে পছন্দের মাঠ ছিল কলম্বো স্টেডিয়াম। এই মাঠে তিনি একাই করেছেন ২৯২১ রান। যা কোনো একজন ব্যাটসম্যানের কোনো নির্দিষ্ট স্টেডিয়ামে করা সর্বোচ্চ রান। এখানে তিনি টেস্ট খেলেছেন মোট ২৭টি। কলম্বোতে তার ব্যাটিং গড় প্রায় ৭৫।

যেখানে ২৭ টেস্টে রয়েছে ১১ টি সেঞ্চুরি ও ৯ টি হাফ সেঞ্চুরি। বলা যায় কলম্বো স্টেডিয়ামের পিচ, কন্ডিশন, দর্শক সবই একবারে হাতের তালুর মত চেনা এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের। ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে তিনি এই মাঠে তার সর্বোচ্চ রান করেন। খেলেন ৫৭২ বলে ৩৭৪ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস।

  • মাহেলা জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা): গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানেও শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যান। এবার শুধু স্টেডিয়ামটা বদলেছে। তবে এখানেও রানের ফুলঝুরি নিয়ে বসেছিলেন জয়বর্ধনে। গল স্টেডিয়াম তিনি টেস্ট খেলেছেন মোট ২৩ টি।

তবে এই ২৩ টেস্টে ৭০ গড়ে করেছেন ২৩৮২ রান। এখানে তার রয়েছে ৭ টি সেঞ্চুরি ও ১২ টি হাফ সেঞ্চুরি। এই মাঠে তার সেরা ইনিংসটি আসে ২০০৪ সালে। এবারো সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন ২৩৭ রানের ইনিংস।

  • কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা): সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব, কলম্বো

এই মাঠেই সর্বোচ্চ রানের মালিক তাঁর বন্ধু মাহেলা জয়াবর্ধনে। তাই তিনিই বা বাদ যাবেন কী করে। শ্রীলঙ্কার এই ব্যাটসম্যান এই মাঠে একাই করেছেন ২৩১২ রান। ২২ টেস্টে প্রায় ৭৫ গড়ে এই রান করেন তিনি।

এই মাঠে তাঁর রয়েছে ৮ টি সেঞ্চুরি ও ৭ টি হাফ সেঞ্চুরি। ২০০৬ সালে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে যেই ম্যাচে বন্ধু জয়াবর্ধনে ৩৭৪ রানের ইনিংস খেলেন সেদিন তিনিও এই মাঠে তার সর্বোচ্চ ২৮৭ রানের ইনিংস টি খেলেছিলেন।

  • জ্যাক ক্যালিস (দক্ষিণ আফ্রিকা): কেপটাউন স্টেডিয়াম, নিউল্যান্ডস

বিশ্বক্রিকেটের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন জ্যাক ক্যালিস। এই অলরাউন্ডারের প্রিয় মাঠ নিউল্যান্ডের কেপটাউন স্টেডিয়াম। এখানে ২২ টেস্ট খেলে করেছেন ২১৮১ রান।

এই মাঠে তার ব্যাটিং গড় ৭২.৭০। এখানে তার ঝুলিতে রয়েছে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৯ টি হাফ সেঞ্চুরি। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখানে তার সর্বোচ্চ ২২৩ রানের ইনিংসটি খেলেন তিনি।

  • গ্রাহাম গুচ (ইংল্যান্ড): লর্ডস, লন্ডন

ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান তাঁর রানের ঝুলি নিয়ে বসেছিলেন লর্ডসে। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামে ২০১৫ রান করেছেন তিনি। এখানে তিনি ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ২১ টি। ২১ টেস্টে ৫৩ গড়ে এই রান করেন গ্রাহাম গুচ।

এখানে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলেছিলেন ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে। সেই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন এই ব্যাটসম্যান। ৪৮৫ বলে খেলেন ৩৩৩ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link