এ যেনো ইংলিশ মাশরাফি!

কেভিন পিটারসনকে নেটে বল করছে ১৫ বছরের এক কিশোর।

হঠাতই পিটারসনের একটি ড্রাইভ ছেলেটার মাথার পাশ দিয়ে ছুঁয়ে গেলো। তারপর ওই কিশোরকে হসপিটালে নিয়ে সেলাই দিতে হলো। পরে অবশ্য পিটারসন ছেলেটিকে তাঁর অটোগ্রাফ সহ ব্যাট ও নানারকম জিনিসপ্ত্র উপহার দিয়েছিল।

২০০৯ সালে সেই প্রথম হেডলাইনে এসেছিলেন ইংল্যান্ডের উঠতি পেসার রিসি টিপলে। তারপর অবশ্য অনেকবার নিজের যোগ্যতাতেই হয়েছেন খবরের শিরোনাম। তবে প্রথমবারের মত ইনজুরিই তাকে বেশী খবরে এনেছে। তখন থেকেই ইনজুরি তাঁর পিছু ছাড়েনি। অসম্ভব রকমের প্রতিভা নিয়ে এসেও ২৭ বছরের এই পেসার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন মোটে ১১টি ওয়ানডে ও ৬টি টি-টোয়েন্টি।

২০১১ সালে প্রথম তাঁর বোলিং নিয়ে আলোচনায় আসেন এই পেসার। ১৭ বছরের এই বাঁহাতি পেসার ইসেক্সে প্রথম খেলতে নামেন সেবছর। তাঁর প্রথম তিন ম্যাচেই ১৪ উইকেট নিয়ে মোটামুটি সোড়গোল ফেলে দেন। কিন্তু ওই সিজনে আর কোনো ম্যাচ না খেলেই তিনি ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর স্কুলে। কেননা রিসি টোপলের বাবা ছিলেন সাবেক এসেক্সের ক্রিকেটার এবং তাঁর স্কুল স্কুল টিচার। ফলে খেলা কিংবা পড়াশোনা কোনোটাকেই অপশনাল হিসেবে দেখার সুযোগ ছিল তাঁর।

পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় অনুর্ধব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ড দলে জায়গা করে নেন এই পেসার। সেই আসরে ইংল্যান্ডের হয়ে নেন সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট। তবে দলের সেরা বোলার হওয়ার তারপর থেকে অতিরিক্ত বল করানো হয় তাঁকে দিয়ে। তবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড ও এসেক্স তাঁর চাপের ব্যাপারে সাবধানী হয়। তাঁকে অন্য পেসারদের সাথে রোটেট করে খেলানো শুরু হয়। ২০১৩ সালে এসেক্সে সবমিলিয়ে ৮০টিরও বেশি উইকেট নেন। তবে সেবছরই শ্রীলঙ্কা সফর থেকে ইনজুরির কারণে বাদ পড়েন  এই পেসার। তখনই হয়তো ইসিবিকে এই পেসারকে নিয়ে আরো সাবধানী হওয়া উচিৎ ছিল।

তারপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তাঁর। তারপর পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ পারফর্মেন্স ও করেন। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্যও তাঁকে বিবেচনা করতে থাকে ইংল্যান্ড। তবে আবার বাঁধা দেয় ইনজুরি।

২০১৭ সালে স্ট্রেস ইনজুরির জন্য সারাবছরে মাত্র ১১২ ওভার বল করতে পেরেছিলেন তিনি। তারপরের বছর আবার এ দলের হয়ে ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। তারপর আবার ইনজুরিতে পরলে প্রায় বছরখানেক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন তিনি। আবার ২০১৯ সালে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা শুরু করেন এবং ১৭ উইকেট পান।

সবমিলিয়ে পাঁচ বার স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হয় এই পেসারের। ফলে যতবার দলে এসেছেন তারপরই আবার ইনজুরির কারণে ছিটকে যেতে হয়েছে। আবার একটা লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবার তাঁকে দলে ফিরতে হয়েছে। তবে তিনি ফিরে এসেছেন বারবার, যেভাবে চ্যম্পিয়নরা ফিরে আসে।

২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ওয়ানডে খেলার পর চার বছর আর ওয়ানডে খেলতে পারেননি তিনি। আবার ২০২০  সালে আগস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। তারপর আবার সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে ফিরে এসেছেন তিনি। এখন শুধু প্রার্থনা আবার না কোনো ইনজুরিতে পড়ে ছুরি-কাচির নিচে যেতে হয় এই পেসারকে।

পুরো গল্পটা শুনে এক জনের সাথে মিল পেলেন না?

হ্যা, এ যেনো ইংল্যান্ডের মাশরাফির গল্প।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link