দুয়ারে তিন দুশ্চিন্তা/চিন্তা

ওয়ানডে সিরিজে হারের পর খুব বেশি সময় পাচ্ছেনা বাংলাদেশ দল। দ্রুতই তাঁদের আবার খেলতে নামতে হবে এই নিউজিল্যান্ডের সাথেই, টি-টোয়েন্টি সিরিজে। নতুন ফরম্যাট উপলক্ষ্যে তাই নতুন করেই ভাবতে হবে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে সিরিজের পারফরম্যান্স দেখে টি-টোয়েন্টিতে কিছু ক্ষেত্রে কাজে কাজে লাগাতে পারে, কিন্তু টি-টোয়েন্টির চিন্তার সাথে কোনভাবেই ওয়ানডের চিন্তাকে মেলানো যাবেনা। সেক্ষেত্রে তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যুতে বাংলাদেশকে ভাবার সময় এসেছে।

  • টপ অর্ডার

টি-টোয়েন্টিতে এই সিরিজে টপ অর্ডারে তামিম ইকবাল নেই। তামিম ইকবালের না থাকা অবশ্য বাংলাদেশের অন্যান্য ওপেনারদের জন্যে সুযোগ হিসেবেই আসার কথা ছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের অন্য সব ওপেনার এই সুযোগটা নিতে বরাবরই ব্যার্থ হচ্ছেন। সে যাক, এবারের সিরিজে তাও ওপেনারদের ওপর চোখ থাকবে সবার। সেটার কারণ তামিম ইকবাল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই নন এমন একটা কথা উঠছে জোরেশোরে। তামিমের অনুপস্থিতিতে ওপেনাররা কেমন করেন সেটা তাই দেখার বিষয়।

তামিমের অনুপস্থিতিতে ওপেন করার মত আমাদের হাতে আছেন মোট তিনজন খেলোয়াড়। যদিও খুব সম্ভবত ১-৩ পজিশনে এরা তিনজনই খেলবেন। যা হোক, দেশের বাইরে এই তিনজনের পারফরম্যান্স সংযুক্ত করা হল।

এখানে দেখা যাচ্ছে, দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টিতে লিটন আর সৌম্য দুজনেরই গড় বেশ খারাপ। তবে লিটনের ক্ষেত্রে গড় খারাপ হলেও স্ট্রাইক রেটটা বেশ ভাল হওয়ায় তিনি হয়ত কাল আবারও ওপেন করতে নামবেন। সমস্যা হবে, লিটনের সাথে নামবেন কে? সৌম্য নাকি নাঈম শেখ?

নাঈম শেখ এর মধ্যে দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ৫টা, এই ৫টার সবকয়টিই আবার উপমহাদেশের দলগুলির বিপক্ষে। তার অর্থ নাঈম শেখ উপমহাদেশের দলগুলির বিপক্ষে কেমন করেন সেটা এখনও প্রমাণিত নয়। সেটা প্রমাণ করার সেরা মওকা অবশ্য হতে পারে আজকের ম্যাচটা। কিন্তু, সৌম্য সরকারও তো লিটনের সাথে ওপেনিংয়ে নেমে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ’-এ ভাল করেছিলেন।

তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লিটন আর সৌম্য পার্টনারশিপ গড়েছিলেন মোট নয়বার, রান করেছেন ২২৮। সবচাইতে আশাব্যাঞ্জক যে ব্যাপারটা, এই জুটি ক্রিজে থাকলে দলের রান উঠেছে ওভারপ্রতি ৯.১২ করে, লিটন-নাঈমের জন্যে যেটা ওভারপ্রতি ৭.৩৬। আগুনে শুরুর আশায় তাই বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট লিটন-সৌম্যকে ওপেনিংয়ে পাঠাতেই পারে।

  • বোলিং লাইন আপ 

টি-টোয়েন্টির বোলিং লাইনআপ নিয়ে বাংলাদেশের ভাবার সময় হয়েছে। বিশেষত এবারের ম্যাচ হবে যেখানে, সেই হ্যামিল্টনে মাঠ কিছুটা ছোট হওয়ায় বোলারদের আরো চৌকস বোলিং করতে হবে। পেসারদের মধ্যে বাংলাদেশের চয়েজ লিস্টে আছে তাসকিন, মুস্তাফিজুর, রুবেল, আল-আমিন আর সাইফুদ্দিন। এর মধ্যে মুস্তাফিজ যে অটো-চয়েজ হিসেবে থাকবেন সেটা নিশ্চিত। বাকি দুটো জায়গার মধ্যে ব্যাটিং বিবেচনায় হয়তো সাইফুদ্দিন টিকে যেতে পারেন কিন্তু সত্যি বলতে সেটা ভাল হবেনা।

আমরা যদি মুস্তাফিজ ছাড়া বাকি চারজনের ঘরের বাইরে টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ের পরিসংখ্যান দেখি তাহলে সেখানে পাব –

  • তাসকিন আহমেদ ১১ ম্যাচ খেলে ৪৩.৫০ বোলিং গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৬টা, ইকোনমি রেট ৯.৩৭
  • আল আমিন হোসেন ১৩ ম্যাচ খেলে ২৭.১০ বোলিং গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১০টা, ইকোনমি রেট ৭.৩২
  • রুবেল হোসেন ২০ ম্যাচ খেলে ২৮.১৩ বোলিং গড়ে উইকেট নিয়েছেন ২৩টা, ইকোনমি রেট ৯.০০
  • সাইফুদ্দিন ৪ ম্যাচ খেলে ৪০.০০ বোলিং গড়ে উইকেট নিয়েছেন তিনটা, ইকোনমি রেট ১০.০০

স্পষ্টতই ঘরের মাঠের বাইরে আল আমিন হোসেনের বোলিং পরিসংখ্যান যথেষ্ট উজ্জ্বল। এছাড়াও তিনি ডেথ ওভারে চাপও সামলাতে পারেন, বাংলাদেশ তাই দলে আল-আমিন হোসেনকে নিতেই পারে। বিশেষত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আল-আমিন হোসেনের কার্যকারিতার প্রমাণ আগেও পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ অবশ্য তিন পেসারের পাশাপাশি আরেকজন স্পিনার নেবে বলে মনে হচ্ছে, সেটা আপাতদৃষ্টিতে মেহেদি মিরাজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু ঘরের বাইরের টি-টোয়েন্টিতে মেহেদি মিরাজের টি-টোয়েন্টির বোলিং পরিসংখ্যান যথেষ্টই মলিন। ঘরের মাঠের বাইরে তিনি এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মোট ১০টা, এই ১০ টি-টোয়েন্টিতে তিনি উইকেট নিয়েছেন মোট ৩টা তাও বছর তিনের আগের ঘটনা। ওয়ানডেতে মেহেদি মিরাজের রান আটকনোর একটা সুনাম আছে, টি-টোয়েন্টিতে তিনি সেটাতেও ব্যার্থ। ঘরের বাইরে মিরাজের বোলিং ইকোনমি ৮.৪১, সব মিলিয়ে যেটা ৯.১৬!

বাংলাদেশ যদি তাই একজন স্পিনার খেলাতে চায় সেটা আরেক মেহেদি হলেই মঙ্গলজনক হবে। তিনি নতুন বলে যেমন সাবলীল বল করতে পারেন, তেমনই চাপ সামলে রানও আটকে রাখতে পারেন। এর আগে অবশ্য তাঁরও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়েছিল, ব্যার্থ হয়ে বাদ পড়েছিলেন দল থেকে।

  • মিডল অর্ডার

বাংলাদেশকে ভাবতে হবে মিডল অর্ডার নিয়েও। চার নম্বরে সম্ভবত মুশফিকুর রহিম নামবেন। পাচ, ছয়, সাতের মধ্যে রিয়াদ সম্ভবত সাতে বা ছয়ে নামবেন। বাকি দুটো জায়গা হয়তো আফিফ-মিঠুন আর সৈকতের একজনকে দিয়ে পূরণ করা হবে। তবে দেশের বাইরে এই তিনজনের পারফরম্যান্স যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে সেখানে পাব-

  • মোহাম্মদ মিঠুন ৯ ম্যাচে ৮৮.৪৬ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬৯ রান, গড় ১৩.৮০
  • আফিফ হোসেন ৫ ম্যাচে ৯২.৩০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩৬ রান, গড় ৯.০০
  • মোসাদ্দেক হোসেন ৯ ম্যাচে ১০০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১০৫ রান, গড় ১৭.৫০

মোসাদ্দেকের স্ট্রাইক রেট ভাল থাকায় আর এর আগে লোয়ার অর্ডারে সুখস্মৃতি থাকায় মোসাদ্দেককে হয়তো দলে দেখা যেতেও পারে। তবে এদিকে আফিফ আর মিঠুনকে একেবারে ফেলনা ভাবা যাবেনা। মিথুনের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটা ঘটবে, তিনি সদ্য শেষ হওয়া ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচে সবার যাওয়া আসার মিছিলে ভাল করেছিলেন আর আফিফের তো এখানে গোটা বিশ্বকাপ খেলারই অভিজ্ঞতা আছে। মিডল অর্ডার গঠনে টিম ম্যানেজমেন্টকে তাই যথেষ্ট চৌকস হতে হবে।

তবে এতকিছুর পরও কে না জানে, ম্যাচ জিততে হলে ক্যাচ মিস করা যাবে না!

লেখক পরিচিতি

আদ্যোপান্ত স্টোরিটেলার!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link