কোন একটা বিশেষ দিনের প্রতি আপনার হয়তো বিরাগ থাকতে পারে। কিংবা এমনও হতে পারে কোন একটা বিশেষ দিনকে আপনি মঙ্গলজনক ভাবেন। এই বিরাগ কিংবা মঙ্গল- ভাবনার পিছনে সবসময়ই যে আপনার কারণ থাকে এমনটাও কিন্তু নয়। তা আপনার কাছে কারণ না থাকতে পারে, বীরেন্দ্র শেবাগের কাছে কিন্তু আছে।
দিনটা ২৯ মার্চ!
- মুলতান, ২০০৪
২০০৪ সালের ২৮ শে মার্চ। মুলতানে ভারত-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটা তখন মাঠে গড়াচ্ছে। প্রথমে ব্যাট করা ভারত ম্যাচের প্রথম থেকেই লাগাম নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। সাকলাইন মুশতাক-মোহাম্মদ সামিতে সাজানো বোলিং লাইনআপ রীতিমত খাবি খাচ্ছিল ভারতের সামনে। এভাবে প্রথম দিনটা যখন শেষ হল, দেখা গেল ভারতের রান ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬। ক্রিজে ৬০ রান করে অপরাজিত আছেন শচীন টেন্ডুলকার। আর শেবাগ? ২২৮ রানে!
তখন অব্দি ভারতের টেস্ট ক্রিকেট কোন ট্রিপল সেঞ্চুরি দেখেনি। এক ইনিংসে তিনশো পার করা তখন তাই রীতিমত পাহাড় চড়ার মত। তা পাহাড়ের মত সাহস যার বুকে ছিল, সেই বীরেন্দর শেবাগের আবার এসব ভাবলে চলে নাকি। শেবাগ তাই যখন পরেরদিন ব্যাটিংয়ে নামলেন, সবার মনেই একটা মৃদু কৌতুহল ছিল। এই বুঝি টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড উড়িয়ে দিয়ে নতুন কিছু করে ফেলবেন বীরু।
হ্যা, শেবাগ নতুন কিছুই করেছিলেন। ২৯ মার্চ, যখন তিনি ২৯৫ রান করে ক্রিজে আছেন তখন পাকিস্তান বোলিংয়ে আনল সাকলাইন মুশতাককে। আগেই বলেছি, লোকটার ছিল পাহাড়ের মত সাহস। ২৯৫ থেকে ৩০০ পার করতে বীরেন্দর শেবাগ তাই নিলেন মাত্র একটা বল – মুশতাককে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে নিজের তো বটেই, ভারতের ইতিহাসেরই প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করে ফেলেন তিনি।
এই ছয়ের পর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি তিনি। মোহাম্মদ সামির করা এক বলে ৩০৯ রানের মাথায় তিনি ফিরে যান প্যাভিলিয়নে, শূন্যের মাথায় ব্যাটিংয়ে নামার ঠিক ৫৩০ মিনিট পর! শেবাগের এই ত্রিপল সেঞ্চুরিকে অবশ্য স্বাভাবিক করে দেখা যাবেনা, ৩৯ চার আর ৬ ছক্কাতে সাজানো এই মোনালিসা আঁকার সময় শেবাগের স্ট্রাইক রেট কত ছিল জানেন? ৮২.৪০!
- চেন্নাই, ২০০৮
আরেকটা মার্চ, আরেকটা ‘সিরিজের প্রথম টেস্ট’ আর আরেকবার বীরেন্দ্র শেবাগ!
নাহ, এবার আর দেশের বাইরে নয়। বরং নিজের দেশেই, চেন্নাইয়ে। ভারত সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে খেলতে নেমেছিল সিরিজের প্রথম টেস্ট। মাখায়া এনটিনির পেস ইউনিট নেতৃত্বে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেবার শেবাগ একাই দক্ষিণ আফ্রিকা দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে তৃতীয় দিনেই পেয়ে যান ত্রিপল সেঞ্চুরির দেখা।
শেবাগ যেদিন ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন, সেটা ছিল ২৮ মার্চ। রানের সংখ্যা বলছিল শেবাগ অপরাজিত আছেন ৩০৯ রানে। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে খেলা শেষে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার সময় শেবাগ কি মুলতানের কথা ভাবছিলেন? সেবারও তিনি ৩০৯ রানে আউট হয়ে গেছিলেন, এবার অবশ্য অপরাজিত আছেন। তবে তৃতীয় দিন অব্দি এটাই ছিল শেবাগের টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ স্কোর।
২৮ মার্চ নিজের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি পেলেও ২৯ মার্চকে শেবাগ মনে রাখবেন অন্য কারণে।যদিও ৩০৯ এর সাথে আর মাত্র ১০ যোগ করেই চতুর্থ দিনের সকালে মাখায়া এনটিনির বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান তিনি, তবুও নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানটা তিনি তো এই দিনেই করেন।
মানুষ প্রেমিকার প্রথম ছোঁয়া আর প্রথম প্রেমের দিন ভুলতে পারে না, শেবাগ কিভাবে নিজের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি আর ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ রানের দিন ২৯ মার্চকে ভুলবেন!