সত্যিকারের সিটিজেন

মাত্র তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ ‘বিদায়’।

শব্দটি আপাদমস্তক বিষাদে ভরা। শব্দটা কানে বাজতেই মনটা কেন যেন খারাপ হয়ে যায়। কেন এমন হয়? হওয়াটা স্বাভাবিক না? কারণ, বিদায় মানেই যে বিচ্ছেদ!

এক জীবনে মানুষকে কত বিদায়ের সম্মুখীন হতে হয়। এই যেমন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড সার্জিও আগুয়েরোর কথায় ধরুন। ম্যানসিটির ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছিলেন। দীর্ঘ দশ বছরের সম্পর্কের ইতি টানতে হলো তাঁকেও। এই মৌসুম শেষে সিটিজেনদের হয়ে আর খেলবেন না তিনি!

সার্জিও আগুয়েরো  যে আজকের ‘আগুয়েরো’ হয়ে উঠেছেন। তার পিছনে ম্যানসিটির ভুমিকাও কম নয়। তাঁর ক্যারিয়ারের যত অর্জন।  তার বেশিরভাগ তো সিটিজেনদের হয়ে। যে ক্লাবকে এতো কিছু দিয়েছেন, পেয়েছেন; সে ক্লাবকে বিদায় বলতে তাঁর খারাপ লাগাটা তো স্বাভাবিক।

আমরা একটু পিছনে ফিরে যাই।

২০১১ সাল। ২৮ জুলাই।রেকর্ড ট্রান্সফারে আগুয়েরোকে দলে নেন ম্যানচেস্টার সিটি। পাঁচ বছরের চুক্তিতে। তাঁর প্রথম মৌসুম শুরু হয় রবার্তো মানচিনির অধীনে।  খেলতেন ১৬ নম্বর জার্সি গায়ে। প্রিমিয়ার লিগে তাঁর অভিষেক হয় সোয়ানসি সিটির বিপক্ষে। বদলি হিসেবে নেমে অভিষেকেই গোল করেছিলেন কুন আগুয়েরো। অভিষেকে গোলের পাশাপাশি অ্যাসিস্টও করেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। নিজের প্রথম মৌসুমে ম্যানসিটিকে শিরোপা জিততে সহায়তা করেন এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার। ২০ গোল করে ৪৪ বছর পর ম্যানসিটিকে প্রিমিয়ার লিগের স্বাদ পাইয়ে দিতে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।

২০১২-১৩ মৌসুমে ইনজুরির কারণে তেমন সুবিধা করতে পারেননি আগুয়েরো। তাঁর দল ম্যানসিটিও প্রিমিয়ার লিগে রানার্স-আপ হয়। এরপরের মৌসুমে আবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে ম্যানচেস্টার সিটি। সার্জিও আগুয়েরো  বরাবরের মতো ছিলেন দুর্দান্ত। আগুয়েরো তাঁর প্রথম  তিন মৌসুমেই ২টা শিরোপা জিতেছেন! অবিশ্বাস্য।  এরপর আরো ২টা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিলেন। ইনজুরিও তাঁকে কম কষ্ট দেই নাই। শেষ দিকে এই ইনজুরি তাঁকে মাঠে দেননি অনেক ম্যাচ। এভাবে সাফল্য-ব্যর্থতায় দশটা বছর কেটে যায় সিটির জার্সি গায়ে।

ম্যানসিটির হয়ে  আগুয়েরোর সেরা ম্যাচের কথা বললে,  অবশ্যই প্রথমে আসবে একটা ম্যাচের কথা। এটা ছিল প্রিমিয়ার লিগ তথা ফুটবল ইতিহাসের সেরা ম্যাচের একটি।

২০১১-১২ মৌসুম।  প্রিমিয়ার লীগের শেষ ম্যাচ। কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের মুখোমুখি ম্যানচেস্টার সিটি। সমীকরণটা এমন, আগুয়েরোদের জিততে হবে। শিরোপা জিততে শুধু জিতলে হবে না। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। ম্যানইউ  জিতলে, সিটির গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে জিততে হবে।

৬৬ মিনিটে একজন লাল কার্ড পেলে, দশজনের দলে পরিণত হয় রেঞ্জার্স। তখনও তারা ২-১ এগিয়ে। ওদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সান্দারল্যান্ডকে তখন ১ গোল দিয়ে ফেলেছে। সিটি বস মানচিনি আক্রমণ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য  মারিও বালোতেল্লি,  জেকোদের নামিয়ে দেন।ওদিকে ম্যানইউ তাঁদের কাজটা করে রেখেছে।জয় দিয়ে শেষ করেছে তাঁরা।নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ! অতিরিক্ত পাঁচ মিনিটে শিরোপা জিততে হলে, সিটিকে আরো দিতে হবে ২ গোল! এডিন জেকো গোল করে ব্যবধান কমান। একদম অন্তিম মুহুর্তে বালোতেল্লির কাছ থেকে বল পেয়ে গোল করে সিটিজেনদের আনন্দে ভাসান সার্জিও আগুয়েরো। আগুয়েরো  বলেছিলেন, এটা তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল।

ভিনসেন্ট কোম্পানি বলেছিলেন, “আগুয়েরো কাঁদছেন”।এই কান্না তো খুশির। আগুয়েরোর সাথে পুরো ম্যানসিটি ভক্তরাও সেদিন কেঁদেছিলেন খুশির কান্না।

আগুয়েরার   তো বটেই। এটা ছিল ফুটবলের অন্যতম সেরা মুহুর্তের একটা।

ম্যানসিটির হয়ে চারটা প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন আগুয়েরো। এফএ কাপ ১টা, ইপিএল ৫টা; এফএ কমিউনিটি শিল্ড জিতেছেন ৩টা।

ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয় তাঁর।ম্যানসিটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিঁনি; ১৮১ গোল করে। প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা আগুয়েরো।  ইংল্যান্ডের বাইরের কোনো প্লেয়ার হিসেবে সর্বোচ্চ গোল তাঁর।ম্যানসিটি হয়ে ২০১৪-১৫ মৌসুমে জিতেছেন গোল্ডেন বুট। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকও তাঁর। ১২ টা হ্যাটট্রিক করে সবার উপরে প্রিমিয়ার লীগের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়।

‘দশ মৌসুমে সেরা অর্জন গুলা পেয়েছি এখানে। এই ক্লাবকে যারা ভালোবেসেছেন, তাদের বন্ধন অবিনশ্বর হয়ে থাকবে।আমাকে যারা ভালোবেসেছেন, তারা সবসময় আমার হৃদয়ে থাকবেন’- বিদায় বেলায় কথাগুলা বলেছেন আগুয়েরো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link