সমালোচনা অনেক থাকার পরও বাংলাদেশের ক্রিকেটের এখন অভিজ্ঞতম খেলোয়াড়দের একজন মোহাম্মদ আশরাফুল। এ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট, জাতীয় দলকে হাতের তালুর মতো চেনেন। ভালো জানেন, দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের খবর।
সাকিব, মাশরাফি যখন দেশের ক্রিকেট নিয়ে অভিযোগ করছেন, সেসব ব্যাপার নিজে দেখেছেন আশরাফুলও। অবশেষে কথা বললেন এই দেশের ক্রিকেট নিয়ে, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে এবং জাতীয় দল নিয়ে। খেলা ৭১-কে বিস্তারিত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
আপনার এক সময়ের টিম মেট মাশরাফি অভিযোগ করেছেন, বোর্ড কর্মকর্তারা খেলোয়াড়দের পাশে থাকেন না। বরং তাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। আপনার অভিজ্ঞতাটা কেমন?
আসলে আমাদের খেলা যেভাবে চলে, আমাদের এটাও সেভাবেই চলে। এটা নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা করি না। হওয়া তো উচিত অনেক কিছুই। টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি ২১ বছর হলো। কিন্তু ওইভাবে তো আমাদের কিছুই হয়নি। কবে হবে জানি না। যেভাবে চলছে সেভাবেই আসলে মানায় নিতে হবে। অভিযোগ করলে তো আসলে করাই যায়। কর্মকর্তাদের নিয়ে অভিযোগ করার আগে দেখতে হবে, আদৌ একটা ক্রিকেট কাঠামো দাড়িয়েছে কি না। জাতীয় দলে আমরা যে সুযোগ-সুবিধা পাই, আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডে একটা প্রথম শ্রেনীর দলের সেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে!
২০০৭ সালে আমরা যখন নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিলাম তখন আমি অধিনায়ক ছিলাম। ওখানে গিয়ে তাদের স্টেট টিমের সঙ্গে আমাদের যে প্রস্তুতি ম্যাচ হলো তখন দেখলাম আমাদের জাতীয় দলের মতোই ওদের স্টেট টিমে বিদেশি কোচিং স্টাফ। আমাদের জাতীয় দলের মতোই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাদের ওদের স্টেট টিমে রয়েছে।
আমাদের এই সুযোগ সুবিধা নাই কেন?
আসলে আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্বে যারা আছেন, তাঁরাও জানেন আমদের কী প্রয়োজন। একজন ডিরেক্টরের কথা বলি; নাম বলবো না। উনি ক্রিকেট বোর্ডের ডিরেক্টর হিসেবে আছেন অলমোস্ট ২১-২২ বছর হবে। আমি মনে করি উনি পারতেন বাংলাদেশের ক্রিকেটটাকে ওই লেভেলে নিতে। ওনার যে মেধা এবং বিভিন্ন সেক্টরের মানুষের সাথে ওনার যে সম্পর্ক আমার মনে হয় উনি দেশের ক্রিকেটটাকে ওই লেভেলে নিতে পারতেন। পারতেন, কিন্তু করেন নাই। এটাই বাস্তবতা।
আবার প্রথম প্রশ্নে ফেরত আসি। মাশরাফি বলছে, খেলোয়াড়দের খারাপ সময়ে কর্মকর্তাদের উচিত পাশে থাকা। তা না করে তারা খেলোয়াড়দের নিয়ে খারাপ কথা বলেন। এটা আপনি ফেস করেছেন।
(খারাপ কথা) বলে তো অবশ্যই। সামনে হয়তোবা বলেনি, পেছনে তো বলেছে। বলবে, আর বলাটাও স্বাভাবিক। আমার নামে যদি কিছু বলেও থাকে, আমি ওইভাবে ভেবেছি যে, আমি পারফরম্যান্স করতে পারিনি। যাদের সম্পর্কে বলে, ওদের পারফরম্যান্স না থাকলে বলাটাই স্বাভাবিক। আবার আমি যখন পারফরম্যান্স করি তখন মাথায় উঠায়ে রাখে। আমি আসলে এভাবেই দেখি। এক একজন একেকভাবে দেখে। একএক জনের ভিউও একেক রকম। আমার ভিউও এরকম ছিল যে, আমাকে যদি কেউ গালি দেয়, আমি প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারিনি বলেই গালি দিচ্ছে।
মাশরাফির কথা হলো সমর্থকরা গালি দিতেই পারে, কিন্তু বোর্ডের পরিচালকরা কেনো গালি দিবে?
এখন যেটা হচ্ছে, সেটা কিন্তু একটু বিস্ময়কর। আসলে আমাদের সময়ে আমরা এরকম দেখিনি। শেষ তিন চার বছর ধরে এই জিনিসটা মিডিয়াতে বেশি দেখতেছি। আগে এত ছিল না, সাম্প্রতিক সময়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হারার পর দেখলাম এক ডিরেক্টর বললেন যে, প্লেয়ারা খেলতে চায় না, ছুটি কাটাতে চায়। আমি মনে করি এই কথাগুলো মিডিয়াতে বলা আসলে ঠিক হয়নি। কেন ঠিক হয়নি? ধরেন আমি ওখানে দায়িত্বে আছি, প্লেয়াররা যদি ছুটি চায় আর আমি মেনে নেই তাহলে আর এটা নিয়ে তো কথা বলা উচিত না। তাই না? ম্যাচ হারার পর আমরা এটা বলব, আমরা মনে হয় এই দিক থেকে উনি ভুল করেছেন। এরকম কিছু ঘটনা হচ্ছে। যা আগে হতো না।
এখন তো আমাদের বয়সভিত্তিক দল ছাড়া আর কোথাও থেকে কোনো ক্রিকেটার উঠে আসছে না। ঘরোয়া লিগ থেকে প্লেয়ার না উঠে আসার কারণ কী?আমরা কী তাহলে মানসম্মত ঘরোয়া লিগ আয়োজন করতে পারছি না?
আসলে আমরা ওইভাবে চাচ্ছি না যে, ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে খেলোয়াড় উঠে আসুক। খেলা হচ্ছে ভালো। আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটারদের নিয়ে চিন্তা করছি না। আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দেই। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের এইচপি টিম খেলল। সেখানে একজন বাঁ-হাতি স্পিনার ১৩ উইকেট পেল। তাঁকে নিয়ে মিডিয়া বলেন, জাতীয় দলের নির্বাচকরা বলেন সবাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন। এখন জাতীয় লিগে এসে সে চার ইনিংসে ৩ উইকেট পেয়েছে। জাতীয় লিগ যদি এতোই খারাপ হতো, তাহলে সে আরও বেশি উইকেট পেতো না? যে ছেলেটা আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ১৩ উইকেট পেল আর জাতীয় লিগে তিন ইনিংস বল করে মাত্র ৩ উইকেট পেয়েছে। তাহলে আপনি এখন কী বলবেন? তার মানে এই জাতীয় লিগে যারা ভালো করছে, তাদের একটা মূল্য আছে নিশ্চয়ই। সেই মূল্য আপনি দিতে যদি না চান তাহলে তো আর উন্নয়ন হবে না। এখন আসলে এইচপি বা বয়স ভিত্তিক টিমে না খেলে আসরে জাতীয় দলে সুযোগ মেলা কঠিন।
২০০৯ সালে সাকিব আমাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাতীয় লিগে দুই তিন ঘণ্টা ব্যাটিং করলে সেঞ্চুরি করা যায়। ফর্মে না থাকলেও সেঞ্চুরি করা যায়। আসলে কী আমাদের জাতীয় লিগ এই মানের?
হ্যাঁ, এটা করা যায়। যদি আপনি ওই মানের প্লেয়ার হন। আপনি যদি ট্যালেন্ট প্লেয়ার হন তাহলে তিন ঘণ্টায় সেঞ্চুরি করা সম্ভব। কিন্তু সেই জাতীয় লিগেই তো জাতীয় দলের প্লেয়াররা এখন খেলছে। মুমিনুলও চার ইনিংস খেলল। রান করেছে মাত্র ৫০ বা তার কাছাকাছি। তাহলে দুইটা দিকই আছে। তাহলে জাতীয় লিগের মান ভালো হয়েছে? নাকি ট্যালেন্টের অভাব?
বলা হয় যে ঘরোয়া লিগে ফাস্ট বোলারদের জন্য প্রাণবন্ত উইকেট থাকে না?
এটা আগে ছিল না। শেষ তিন চার বছর এখানে অনেক উন্নতি হয়েছে। আসলে যারা এসব বলতেছে, তাদের টোটাল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কয়টা সেঞ্চুরি আছে একটু দেখবেন! সৌম্য সরকারকে যখন টেস্টে অভিষেক করানো হলো তখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ওর কোনো সেঞ্চুরিই ছিল না। বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৫ বছর পর ২০১৫ সালে টেস্টে অভিষেক হয় সৌম্যর। এমন একটা ছেলেকে আপনি টেস্টে অভিষেক করালেন যে আগে জানতই না প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কিভাবে সেঞ্চুরি করতে হয়। একটা ফরম্যাটে ও ভালো খেলছে বলেই টেস্ট দলে সুযোগ করে দিতে হবে! ওই প্লেয়ারতো আর বলেনি যে ভাই আমাকে খেলান। দোষ আসলে সবারই, সব জায়গায়ই সমস্যা আছে।
জাতীয় লিগের খেলাগুলো যেখানে হয় সেটা কী আপ টু দ্য মার্ক? একটা দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কী এমন হওয়া উচিত?
না, হওয়া উচিৎ নয়। তবে মাঠ কিন্তু খারাপ না। রংপুরে যেখানে খেলা হয় সেটা আসলে অচল মাঠ। এছাড়ার রাজশাহী, বগুড়া, বরিশাল যেখানে খেলা হচ্ছে ঠিক আছে। সেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অবশ্যই হতে পারে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের যে আইডিয়াল সিনারিও, টিমগুলো নিজেদের হোমে প্রাকটিস করবে, ওখান থেকেই টিম করা হবে; এগুলো তো হচ্ছে না।
ভাই, সত্যি কথা হলো আমরা তো আসলে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট নিয়ে ফোকাস না। ২২ বছর হয় গেছে প্রত্যেকটা বছরে কবে খেলা হবে, তারই ঠিক থাকে না। আমি নিষেধাজ্ঞার সময় তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানে এত ক্রিকেট দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে আমরা কী ক্রিকেট খেলি!
ওদের যতগুলো স্টেট আছে প্রতিটি স্টেটে শনিবার-রবিবার খেলা হয় এবং ওদের বছর শেষ হওয়ার আগেই ক্রিকেট ক্যালেন্ডার প্রস্তুত হয়ে গেছে যে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে আর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে শেষ হবে। আমি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার দেখেই অবাক হয়েছি। অথচ আমরা ১৫-১৬ বছর আগে টেস্ট মর্যাদা পেয়েছি অথচ আমাদের কোনো ক্রিকেট ক্যালেন্ডার নেই। আজকে মনে হলো চার দিনের ম্যাচ খেলালাম, কালকে মনে চাইলো টি-টোয়েন্টি খেলালাম এভাবেই আমাদের ক্রিকেট চলছে।
আমাদের সূচীগুলো দেখেন, প্রথম শুরু করে জাতীয় লিগ, এরপর শুরু করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিপিএল। ছেলেরা বিপিএলে সুযোগ পাওয়ার জন্য জাতীয় লিগে চার দিনের ম্যাচে গিয়ে পাওয়ার হিটিং ক্রিকেট খেলে। কারণ বিপিএলে চান্স পেতে হবে, পাওয়ার হিটিং ক্রিকেট না খেলে উপায় নেই। বিপিএল শেষে হয় বিসিএল, তারপর শুরু করে ওয়ানডে ফরম্যাটের ঢাকা লিগ। আমাদের সিস্টেমেই বড় সমস্যা।
জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ছাড়া ক্লাবগুলো কেউ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে চায় না। সে জন্যই সূচী দাড় করানো যায় না।
হ্যা। জাতীয় দলের ১৫-২০ জন ছাড়া আমরা ঘরোয়া লিগ কল্পনাই করতে পারি না, সেটা ক্লাব বলেন সবকিছুতেই। এই যে দেখেন, আমাদের জাতীয় লিগটা শুরু করল কখন, এইচপি টিমের জন্য আমাদের জাতীয় লিগটা শুরু করতে এক মাস পিছিয়ে গেল। এখন যখন আবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেল লিগ বন্ধ করে দিল। অথচ বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পরপরই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির দিকে করোনা পরিস্থিতি যখন কিছুটা ভালো ছিল তখন জাতীয় লিগটা আমরা শুরু করতে পারতাম। যদি আমরা চাইতাম তাহলে অবশ্যই করা যেত। কিন্তু আমরা আসলে সব সময় ওয়েট করি জাতীয় দল আর এইচপির জন্য। আরে ভাই জাতীয় দল আর এইচপির ৫০টা প্লেয়ার বাদ দিলে তো আরো ১০০ প্লেয়ার আছে। পৃথিবীর কোথায় জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের জন্য ঘরোয়া লিগ বন্ধ থাকে না। ইংল্যন্ডে যখন বিশ্বকাপ হলো তখনও ওদের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ বন্ধ ছিল না। শুধু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই নয়, অ্যামেচার ক্রিকেটও হয়েছে।
জাতীয় লিগকে অনেকেই বলেন, পিকনিক ক্রিকেট।
তা তো বলবেনই। আপনি জাতীয় লিগের পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন না করলে এটা তো পিকনিক ক্রিকেটই হয়ে যাবে। খেলোয়াড়রা মনে করবে, আমাদের পারফরম্যান্সের মূল্য নেই। ফলে তাদের সিরিয়াসনেস কমে যাবে।
সমস্যা হয়ে গেছে আমাদের সিলেকশন প্যানেল। ওনারা বলছেন জাতীয় লিগে পিকনিক ক্রিকেট হয়, নিজেরা গিয়ে দেখতে চাইছেন না। এই যে জাতীয় লিগের দুই রাউন্ডের খেলা হয়ে গেল। নির্বাচকরা কি খেলা দেখতে মাঠে গেছে? স্কোর কার্ড দেখে বা কোচের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে দল সিলেকশন করলে তো হবে না, আপনাকে উপস্থিত থেকে খেলা দেখে তারপর তো আপনি সিলেকশন করবেন।
জাতীয় লিগে পারফরম্যান্স করে এসে জাতীয় দলে খারাপ করার নজীরও তো আছে?
জাতীয় লিগে পারফরম্যান্সের পর তাঁকে তৈরি করতে তো হবে। আপনারা এরকম কেন করেন না? যারা জাতীয় লিগে নিয়মিত পারফর্ম করছে তাদের কেন মূল্যায়ন করেন না। পৃথিবীর সবজায়গায় ঘরোয়া লিগের পারফর্মারদের মূল্যায়ন করা হয়। তুষার ইমরান, শাহরিয়ার নাফীস, নাইম ইসলামরা তো পারফর্ম করছে। তাঁদের নিয়ে কেন ক্যাম্প করা হয় নাই? এরা তো অভিজ্ঞ পারফরমার। এরা জানে, টেস্ট ক্রিকেট কী, কেমনে খেলতে হয়; খেলে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল ড্রেসিংরুমটা কী সেটা এরা জানে। এখন প্রয়োজন কী? ফিটনেস, তাই না? ওদের নিয়ে একটা ফিটনেস ক্যাম্প করাতেন। তিন মাস ট্রেনিং করলেই তো ওদের ফিটনেস ঠিক হয়ে যাবে। তাহলে তো আপনার বারবার নতুন প্লেয়ার প্রয়োজন হয় না। আমাদের জাতীয় দলটা এখনও কেন ঠিক মতো দাঁড়াতে পারেনি, আসলে চিন্তা ভাবনার সমস্যার কারণে এমনটা হচ্ছে।
আপনি একবার বলেছিলেন যে, বিপিএলের সময়ও আরেকটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট চালানো উচিত?
২০১৬ সালে আমি সুজন ভাইকে (খালেদ মাহমুদ সুজন) বলেছিলাম যে ভাই, বিপিএলে সবমিল ৬০-৭০ জন প্লেয়ার খেলে। তখন অন্য যে প্লেয়াররা আছে তাদের নিয়ে আরেকটা টুর্নামেন্ট শুরু করা যেতে পারে। ধরেন রাজশাহী, বগুরা বা কক্সবাজের দুইটা মাঠে চারটা টিম নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে দেয়া যায়। কারণ আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের তো আর কোচের অভাব নেই তাই না, ওরাতো বইসা থাকে। বিপিএল যখন হয় তখন ওই আট বা ছয়টা টিম নিয়ে ক্রিকেট বোর্ডসহ সারা দেশ ব্যস্ত থাকে। তখন ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে যেসব কোচ চাকরি করেন তারা কিন্তু সবাই ঘরে বইসা থাকে। সুজন ভাইকে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলাম যে, ভাই যখন বিপিএলে দুই তিন ম্যাচ খেলা হয়ে যায় তখন সবাই লোকাল প্লেয়ার খুঁজতে থাকে। কারণ তখন কেউ দেখা যায় ইনজুরি বা ফর্মে নেই। তখন খোঁজ করে কাকে পাওয়া যাবে! অথচ বিপিএলের সময়ে চারটা দল নিয়ে অন্য আরেকটা টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হলে সেখানে যারা সেরা পারফর্মার তাদেরকে বিপিএলের প্রয়োজনে নেয়া যেতে পারে। তখন তাদের কিছু টাকা দিলেও ওরা খুশি মনে খেলবে। কারণ তখন ওরা খেলার মধ্যে থাকবে।
আপনি যদি সেই সময় ওই টুর্নামেন্টের কোচদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন যারা ভালো করে তাদের আপনি সেখানে থেকে সরাসরি বিপিএলে খেলাতে পারেন। আমার এমন পরামর্শ শুনে সুজন ভাই খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি বলেছেন আরে তুমিতো ভালো একটা পরামর্শ দিয়েছ। এই যে এসব চিন্তাভাবনা এগুলো ওনারা চিন্তাই করতে পারেন না। কারণ ওনারা আছেন চিন্তায় যে, বিপিএলে আমাকে ওই দলে থাকতে হবে। বোর্ডের ২৪ জন পরিচালকই বিভিন্ন দল বা টুর্নামেন্টের সঙ্গে যুক্ত হতে চান।
পুরো বিসিবিই তো আসলে বিপিএল নিয়ে ব্যস্ত থাকে…
সব পরিচালকেরই কেন বিপিএলের স ঙ্গে যুক্ত হতে হবে! জাতীয় দলের নির্বাচকদের কেন বিপিএলের এক একটা টিমের মেন্টর হতে হবে! এটা যদি হয় তাহলে জিনিসটা কী ফেয়ার হইল!
সেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের সমস্যা। নির্বাচক তো আসলে কোনো দলের সাথে থাকতে পারে না।
না থেকে উপায়ও নাই। নির্বাচকদের তো টাকার দরকার। যেমন ইনজামাম উল হক যখন নির্বাচক হলো ওর বেতন ছিল ১২ লাখ রুপি। আপনি এখন তামিম-সাকিবকে জাতীয় দলের জন্য নির্বাচন করছেন আপনার বেতন দেড় থেকে দুই লাখ আর সাকিব-তামিম পাচ্ছে ছয় লাখ। তখন আপনি ওর সঙ্গে কী কথা কইবেন? আপনি নির্বাচক হিসেবে যদি দেড় লাখ-দুই লাখ টাকা পান আর যাকে সিলেকশন করবেন সে যদি ছয় লাখ পায় তাহলে আপনার কী অথরিটিটা থাকল! নির্বাচক হিসেবে আপনাকেও ‘এ’ ক্যাটাগরির যে ক্রিকেটার বা তার সমান অথবা তার চেয়েও বেশি সম্মানি দিতে হবে। আপনার তো মূল্যায়ন ওইভাবে করতে হবে।
এ জন্যই একেক জন বিপিএলে একটা টিমের মেন্টর হয়। যখন আপনি একটা টিমের মেন্টর হবেন, স্বাভাবিকভাবেই ওই টিমের একটা প্লেয়ারের প্রতি আপনার দুর্লতা থাকবে। তখন কিন্তু জাতীয় দল নির্বাচন ফেয়ার হবে না।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে যারা উঠে আসছে, তাদের নিয়ে এইচপি, এমার্জিং; সব চলছে। জাতীয় দল থেকে যারা পারফরম্যান্সের কারণে বের হয়ে যাচ্ছে, তাদের টেক কেয়ারের তো কিছু নেই?
আমি আসলে এইচপির বিষয়টা বুঝতেছি না। এবার যারা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসল তাদের ১৪ জন থেকে ১২ জনকে এইচপিতে রাখা হলো। আগের যারা ছিল তাদের তাহলে কি অবস্থা হবে! এটা একটা সমস্যা। আমরা ২১ বছর ধরে খেলছি, ‘এ’ দল তো কখনই ছিল না। ‘এ’ দল হলেও জাতীয় দলের ৮-৯ জনকে সেখানে রাখা হয়। জাতীয় দলের ৮-৯ জন একটা দলে থাকলে সেটাকে তো আর এ দল বলা যায় না!
এখন জাতীয় দল ঠিকঠাক চলছে?
মোহাম্মদ মিঠুনকে আপনি তিন ফরম্যাটে খেলাচ্ছেন। সে তো তিন ফরম্যাটের প্লেয়ার না। আপনি নাজমুল হোসেন শান্তকে নেতৃত্ব দিয়ে গত তিন বছরে ওকে ব্যস্ত করে দিলেন, বলছেন সে ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। অথচ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টিতে আপনি অধিনায়ক বানালেন লিটনকে। এটা কেমন হইল? এটা কার দোষ? লিটনের তো দোষ না। টিম ম্যানেজমেন্টেরই তো দোষ।