হোলিওক ব্রাদার্স: ইংলিশ ক্রিকেটের দু:সহ ট্র্যাডেজি

জুন ৮, ২০০২। মাইক টাইসন ও লেনক্স লুইসের দশকসেরা লড়াই দেখতে মেম্ফিসে হাজির হয়েছেন হলিউড তারকা ডেনজেল ওয়াশিংটন, স্যামুয়েল এল জ্যাকসনসহ আরও অনেক দর্শক। তারা বসেছেন রিংয়ের কাছাকাছি, এ এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।

তাঁদের আশপাশেই আছেন ইংল্যান্ডের এক ক্রিকেটার, অ্যাডাম হোলিওক। হাজার ডলার খরচ করে রিংয়ের কাছে বুক করেছেন দুটো সিট, যার একটি ফাঁকা। একজন এসে জিজ্ঞেস করল, ‘এখানে কি বসতে পারি?’

অ্যাডাম বললেন, ‘না, অন্য কেউ আছে এখানে।’ দশ মিনিট পর একই ঘটনা ঘটল। অ্যাডাম নিষেধ করে দিলেন। সিটটা তখনও খালি।

লড়াই চলছে ৷ তখনও মানুষজন জিজ্ঞাসা করেই যাচ্ছে সিটটাতে বসা যাবে কিনা। অ্যাডাম হোলিওক নিষেধ করেই যাচ্ছেন।

কেন?

একটু পেছন ফিরে যাওয়া যাক।

২২ মার্চ, ২০০২। পার্থের সবচাইতে ভালো রেস্টুরেন্টে নৈশভোজ করতে এসেছে হোলিওক পরিবার। জন্ম অস্ট্রেলিয়ায় হলেও তাদের দুই ছেলে, অ্যাডাম ও বেন হোলিওক খেলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ছোট ছেলে বেন সদ্য নিউজিল্যান্ডের সাথে ওয়ানডে সিরিজ খেলে ফিরেছেন। অ্যাডাম নতুন মৌসুমের জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নৈশভোজে অ্যাডাম ও বেনের বাবা-মায়ের সাথে যোগ দিয়েছেন বোন ইবোনিও ৷ অ্যাডামের সাথে এসেছেন তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী শেরিন, বেন নিয়ে এসেছেন তার বান্ধবী জানায়াকে। ইবোনিও নিয়ে এসেছেন তার বন্ধু লিউককে৷ বেন বারবার শেরিনকে বলছিলেন, ‘ছেলে হবে তোমার।’

অ্যাডাম বেনকে বলছিলেন, ‘আড়াই মাস পর মেম্ফিসে মাইক টাইসন আর লেনক্স লুইসের খেলা। যাই হোক না কেন, আমরা দু’জন মেম্ফিস যাব। টিকিটের ভার তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও।’

নৈশভোজ-আড্ডা শেষ হতে হতে মধ্যরাত হয়ে গেল। নতুন মৌসুমের জন্য ইংল্যান্ড উড়ে যাওয়ার আগে পরিবার থেকে বিদায় নিলেন অ্যাডাম ও বেন হোলিওক। দুই ভাইয়ের বাসা ছিল এক কিলোমিটারের মত দূরত্বে।

সবাই নিজ নিজ গাড়ি করে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। অ্যাডাম বাড়ি পৌঁছার দশ মিনিট পর তার বাবার ফোনকল এল। হয়ত বাসায় পৌঁছেছেন তা জানাতেই কল করেছেন।

অ্যাডামের ঘুণাক্ষরেও ধারণা ছিল না যে সেই ফোনকলে তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খাবেন। বাবার কাছে শুনলেন যে, বেনের পোরশে গাড়িটা একটা দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। বেনের বান্ধবী জানায়া খুব মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে৷ তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

কিন্তু বেন?

বেনকে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হয়নি। দুর্ঘটনাস্থলে মারা গেছেন বেন হোলিওক, বড়ভাই অ্যাডামের মতে, যিনি ছিলেন স্যার ইয়ান বোথামের যোগ্য উত্তরসূরি। অথচ বাঁচলেন কেবল ২৪ বছর।

মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই নৈশভোজে বেন অ্যাডাম-পত্নী শেরিনকে তার অনাগত সন্তানের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী শোনাচ্ছিলেন। সেটাই সত্যি হয়েছিল পরে।

আর ছোটভাইকে দেয়া প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে মেম্ফিস ফাইটের দুটো টিকিট কেনেন অ্যাডাম। আসনটা খালি পড়ে থাকলেও সেখানে কাউকে বসতে দেননি অ্যাডাম। কারণ এত দর্শকের মাঝে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি জানেন যে, আসনে বসে আছেন বেন হোলিওক।

১৯৯৭ সালের সাত আগস্ট। সেদিন ট্রেন্টব্রিজে পঞ্চম অ্যাশেজ টেস্টে একইসঙ্গে অভিষেক হয়েছিল অ্যাডাম ও বেন হোলিওকের। টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাইক আথারটন।

সেবার দ্বিতীয়বারের মত কোনো ইংলিশ ভাইদের জুটি এক সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামেন। এর আগে সেই ১৯৫৭ সালে এক সাথে খেলতে নেমেছিলেন পিটার ও ডিক রিচার্ডসন। বেন-অ্যাডামের পর ভাইদের এক সাথে খেলার নজীর আর একবারই দেখেছে ইংল্যান্ড। তারা হলেন স্যাম ও টম কুর‌্যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link