রিয়ালের ম্যাচ তখনও শেষ হয়নি। ২-০ গোলে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
সমর্থকদের মনে তখন আনন্দের জোয়ার। ভঙ্গুর রিয়াল এমন পারফরম্যান্স দিবে, ম্যাচের শুরুতে হয়তো কেউই ভাবেনি! টুইটারে তখন সমর্থকদের আনন্দের জোয়ার। সেই জোয়ার থেকে রিয়ালের বাকি অর্ধেক দল বাদ যাবে কেন? তার মধ্যে ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদ নারী দলের গোলরক্ষক মারিয়া ইসাবেলও। নিজের উল্লাস টুইটারে প্রকাশ করেছিলেন মার্কো এসেন্সিওর ছবি দিয়ে।
মৌসুমটা খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না এসেন্সিওর। তাই লিভারপুলের জালে বল পৌছে দিয়ে রিয়ালের লোগো ধরে বুনো উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন মার্কো। আর সেই ছবির সাথে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মাদ্রিদ ডার্বি জেতার পর নিজের ছবি দিয়ে টুইট করেছিলেন মারিয়া। আর তার ক্যাপশন ছিল ‘Misma Pasion’, যার অর্থ ‘Same Passion’ বা ‘Same Energy’। কিন্তু বাকি ঘটনা হয়তো মারিয়া চিন্তাও করেননি।
রিয়ালের ম্যাচ শেষও হতে পারেনি, তার টুইটের নিচে জড়ো হতে থাকলো রিটুইট, বেশীরভাগই তার বিপক্ষে। তাদের কথা- মেয়েদের ফুটবলে কী এমন করে ফেলেছেন মারিয়া যে মার্কো এসেন্সিও সাথে নিজের ছবি আপলোড দিতে হবে তাকে? অ্যান্টি ফ্যামিনিস্ট টুইট, পরিবারকে নিয়ে কটু কথা, কী বাকি ছিল না? মাদ্রিদের জয়ের দিনে এমন কথা শুনে যেন দিনটাই মাটি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ম্যাচ শেষ হতে না হতেই সেই টুইট ডিলিট করে দেন মারিয়া।
ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচের পর থেকে। ম্যাচের পরপরই ডিলিট করার আগে টুইট চোখে পরেছিল মার্কো এসেন্সিওর। চাইলেই এই ঘটনা চেপে যাওয়া যেত। চাইলেই নিজের গোলের, নিজের দলের সাথে আনন্দে মাততে পারতেন তিনি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ বলতে তো শুধু তারা নয়, রিয়াল মাদ্রিদ ফেমিনিও তাঁদের একটি অংশ। এসেন্সিও সেই একই টুইট করলেন, মারিয়ার আপলোড দেওয়া ছবি দিয়ে।
‘Misma pasión. Que nada ni nadie te impida decir lo que piensas’, যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘একই প্যাশন। কখনও লোকে কী ভাবলো বা বললো, সেজন্য নিজের মতামত জানাতে পিছপা হয়ো না, মারিয়া।’
এটুকুই যথেষ্ট ছিল লোকের চোখে পরতে। বাকিটুকু শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়। এসেন্সিওর টুইট রিটুইট করলেন থিবো কর্তোয়া, একই ক্যাপশনে টুইট করা শুরু করলেন বর্তমান-সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ খেলোয়াড়েরা। দানি কারভাহাল, লুকাস ভাজকেজ, মার্সেলো থেকে শুরু করে আলভারো আরবেলোয়া, অ্যন্তোনিও আদান, এস্তেবান গ্রানেরো; কে নেই এখানে?
শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যে থেমে থাকলে তো হতোই। আস্তে আস্তে পুরো স্পেন, এরপর পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পরলো ‘মিসমা প্যাশন’ টুইট। বার্সেলোনা, ভ্যালেন্সিয়া, হুয়েস্কা, লেগানেস, স্পোর্টিং গিজন, রেসিং সান্তান্দের, জিরোনা, রিয়াল বেটিস, আলবাসেতে- নিজেদের নারী দলের সাথে পুরুষ দলের ছবি দিয়ে একই টুইট ছড়িয়ে দিতে থাকলো বাকি সকলে। ইউরোপে টটেনহাম, এভারটন, ফ্রাঙ্কফুর্ট, উলভসবার্গ থেকে শুরু করে লাতিন আমেরিকার বোকা জুনিয়র্স, ইন্দিপেন্দিয়েন্তে, করিন্থিয়ান্স; কে সমর্থন জানায়নি?
মারিয়ার গল্পটাও কম বড় নয়। রিয়াল মাদ্রিদের নারী দলের সূচনা হয়েছে এই মৌসুমেই। রিয়ালের আগে মারিয়া খেলতেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের লিগ জয়ে আনন্দ মিছিলে বের করায় বের করে দেওয়া হয় তাকে। মারিয়া যখন দল ছাড়া মৌসুম কাটানোর অপেক্ষায়, তখনই তাকে কিনে আনে রিয়াল মাদ্রিদ। বানায় রিয়াল মাদ্রিদের গোলপোস্টের রাণী! মারিয়া তার প্রতিদানও দিয়েছেন ভালো ভাবেই। আজ রিয়াল মাদ্রিদ পুরুষ দলের খেলোয়াড়েরা ঠিক সেই প্রতিদানই দিলেন। তার পাশে থেকে। একতাবদ্ধ হলে এভাবেই আটকে দেওয়া যায় নারীর প্রতি প্রতিটি কটুবাক্য। প্রতিবাদ হয় এভাবেই!