বাংলাদেশের ‘অপরিচিত’ দিন

বোর্ডে জমা হয়েছে ৩০২ রান, সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র দু’জন ব্যাটসম্যান। একজনের অপরাজিত সেঞ্চুরি। একজন নব্বইয়ের ঘরে গেছেন। আরেকজন হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাট করছেন।

টেস্ট ক্রিকেটে এরকম একটা দিন বাংলাদেশের জন্য অপরিচিতই বলা যায়। ক্যান্ডির পালেকেল্লে স্টেডিয়ামে তারই দেখা মিললো। বাংলাদেশ দল প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে নি:সন্দেহে চালকের আসনেই আছে।

আর দিনের সবচেয়ে বড় নায়কও ‘অপরিচিত’। সব ফরম্যাটে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও দল তাঁর উপর আস্থা রাখছে অনেক দিন হলোই। সেই ধারাবাহিকতায় শ্রীলঙ্কা সফরের দলেও ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে বলেছিলেন এটা ধরে রাখতে চান টেস্টেও। সিরিজের প্রথম টেস্টেই ধৈর্য ও নির্ভরতায় ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে নিজের কথা রাখার সাথে আস্থার প্রতিদানও দিলেন এই ব্যাটসম্যান।

পাল্লেকেলের উইকেটে ঘাস ছিলো প্রচুর। তাই শুরুতে ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেকটা কঠিনই ছিলো। তবে এরকম উইকেটে রোদ ওঠার পর আদ্রতা কমে গেলেই ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ হয়ে যায়। তাই টসে জিতে ব্যাট করার চ্যালেঞ্জ নেওয়া বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিলো আত্ববিশ্বাসী শুরুর।

দুর্দান্ত সব শটের পসরা সাজিয়ে বাংলাদেশকে কাঙ্খিত সেই শুরুই এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু দারুণ খেলতে থাকা তামিম সেঞ্চুরি মিস করে আউট হয়ে যাওয়ার পর সারা দিন আস্থা ও নির্ভরতার প্রতিক হয়ে ব্যাট করে সেই আক্ষেপ দূর করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আর সময়ের দাবি মিটিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়েছেন মুমিনুল হক।

নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি এবং তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকের হাফ সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৩০২ রান সংগ্রহ করেছে সফরকারীরা।

তবে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাইফ হাসান। এই ওপেনারের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৪৪ রান যোগ করেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।

ইনিংসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করা তামিম ১০১ বলে ৯০ রান করে আউট হয়ে গেলে ভাঙে এই জুটি। তামিমের সেঞ্চুরি মিসের সাথে এই জুটিও মিস করে দারুণ এক রেকর্ড। দেশের বাইরে দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমরের দখলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পেশোয়ারে ২০০৩ সালে ১৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। আর ২১ রান করতে পারলেই রেকর্ডটা নিজেদের করে নিতে পারতেন তামিম-শান্ত।

রেকর্ড না হলেও এই জুটি দিয়েই প্রায় এক যুগ পর দেশের বাইরে দ্বিতীয় উইকেটে শত রানের জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেন্ট ভিনসেন্টে দ্বিতীয় উইকেটে শত রানের জুটি দেখেছিলো বাংলাদেশ। সেখানেও জড়িয়ে আছে তামিম ইকবালের নাম। জুনায়েদ সিদ্দিক ও তামিমের সেই জুটি ছিলো ১৪৬ রানের।

কিন্তু দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে দ্বিতীয় উইকেট জুটির এই রেকর্ড ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমানের দখলে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই দ্বিতীয় উইকেটে ২৩২ রানের জুটি গড়েছিলেন দুজন।

তবে তামিম ফিরে গেলেও পথ হারায়নি বাংলাদেশের ইনিংস। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের ব্যাটিং নৈপুণ্যে দ্বিতীয় সেশনও নিজেদের করে নিয়ে ২ উইকেটে ২০০ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় সফরকারী। আর দিনের শেষ শেসন পুরোটাই নিজেদের করে নিয়ে বাংলাদেশ যোগ করে আরো ১০২ রান।

শান্ত-মুমিনুলের অবিচ্ছন্ন ১৫০ রানের জুটিততে ২ উইকেটে ৩০২ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত আছেন ২৮৮ বলে ১২৬ রান করে। অনবদ্য এই ইনিংস খেলার পথে ১৪ টি চারের সাথে ১ টি ছয় মেরেছেন শান্ত। আর মুমিনুল হক অপরাজিত রয়েছেন ৬৪ রান করে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ২ টি উইকেটই শিকার করেন ফার্নান্দো।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)

টস: বাংলাদেশ

বাংলাদেশ: ৩০২/২ (ওভার: ৯০; তামিম- ৯০, সাইফ- ০, নাজমুল- ১২৬*, মুমিনুল- ৬৪*; ফার্নান্দো- ২/৬১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link