পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্ভাগা ক্রিকেটার কে?
আপনি স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের কথা ভাবতে পারেন। শেন ওয়ার্নের কারণে যার জীবনের সেরা সময়টা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা হয়নি। আপনি করুন নায়ারের কথা ভাবতে পারেন। ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও জাতীয় দলে স্থায়ী হওয়া হয়নি। এমনকি আকিব জাভেদের কথাও মনে করতে পারেন। ওয়াসিম-ওয়াকারের কারণে পাকিস্তান দলের হয়ে সেরাটা দিতে পারলেন না।
আপনার ভাবনা ভুল, তা নয়। তবে আপনার ভাবনা এসবে আটকে থাকার মানে হলো আপনি স্টুয়ার্টের নাম শোনেননি-অ্যান্থনি স্টুয়ার্ট। এই অ্যান্থনি কৌন হ্যায়?
আমাদের আজকের গল্পের নায়ক অ্যান্থনি। নায়ক না বলে ট্রাজেডির চরিত্র বলা ভালো। বলা ভালো, অ্যান্থনি স্টুয়ার্ট সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্ভাগা ক্রিকেটার। যিনি হ্যাটট্রিক করে, পাঁচ উইকেট নিয়েও পরের ম্যাচেই আর দলে জায়গা পাননি; আর কখনোই জাতীয় দলে জায়গা পাননি। মাত্র ১২ দিনেই গল্প শেষ হয়ে গেছে অ্যান্থনি স্টুয়ার্টের।
অ্যান্থনি নিউ সাউথ ওয়েলসের মানুষ। পরিচয়ে ছিলেন ফাস্ট বোলার। স্বপ্ন দেখতেন অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে একদিন ম্যাকগ্রাদের মতো করে বিশ্ব কাপাবেন। সেই ম্যাকগ্রা, ফ্লেমিংদের অনুপস্থিতিতেই ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে ভাগ্য খুলেছিলো তাঁর।
ডানহাতি পেসার অ্যান্থনির জন্য সেটা ছিলো স্বপ্নের একটা ব্যাপার।
পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে সেবার বসলো অস্ট্রেলিয়ার সাড়া জাগানো ত্রিদেশীয় সিরিজ-কার্লটন অ্যান্ড ইউনাইটেড সিরিজ। সেটা অস্ট্রেলিয়ার মৌসুমের ব্যস্ততম সময়। মার্ক টেলরের দলে তাই বেশ কিছু খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিলো। তাদের জায়গায় দলে এসেছিলেন অ্যান্থনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেলেন জানুয়ারির পাঁচ তারিখে। আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেললেন ১৬ জানুয়ারি। এই ১২ দিনের মধ্যে রূপকথা লিখে ফেললেন অ্যান্থনি। এই তিন ম্যাচে নিলেন আট উইকেট। এর মধ্যে শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন এবং নিলেন পাঁচ উইকেট। সবমিলিয়ে তিন ম্যাচে তার বোলিং গড় ১৩.৬২।
২৬ বছর বয়সী অ্যান্থনি তখন নিশ্চয়ই দারুণ একটা ক্যারিয়ারের স্বপ্ন দেখছিলেন। আসলে যে কারোরই দেখার কথা!
বিশ্বাস করুন, এরপর আর কখনো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা হয়নি তাঁর; ওখানেই শেষ ক্যারিয়ার। বিষ্ময়ের এখানেই শেষ নয়। অ্যান্থনি এরপর আর বেশীদিন গুরুত্বপূর্ন ক্রিকেটই খেলতে পারেননি।
ঘটনা হলো, এই সিরিজের পর অ্যান্থনি দল থেকে বাদ পড়ে গেলেন। কারণ, দলের নিয়মিত খেলোয়াড়রা তখন দলে ফিরে এসেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া তখন টেস্ট সিরিজ খেলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। অ্যান্থনিকে হয়তো পরের ওয়ানডে সিরিজের জন্য বিবেচনা করা হতো। কিন্তু অ্যান্থনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে যাচ্ছেতাই পারফরম করা শুরু করলেন।
এতোটাই খারাপ করা শুরু করলেন যে, ১২ মাসের মধ্যে তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস (এনএসডব্লু) মূল দলেও জায়গা হারিয়ে ফেললেন। এক সময় এনএসডব্লু দ্বিতীয় দলেও জায়গা হচ্ছিলো না তার। সিডনির গ্রেড ক্রিকেট খেলা শুরু করলেন। পেশাদার ক্রিকেট থেকে ছিটকে গেলেন প্রায়।
তবে অ্যান্থনি একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৯৯ সালের দিকে আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। এনএসডব্লু দলে জায়গা হচ্ছিলো না বলে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটরিতে যোগ দেন অনাবাসিক খেলোয়াড় হিসেবে। এখানে ৬ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে একটা সম্ভাবনাও তৈরী করেছিলেন। কিন্তু পরের মৌসুমে আবার যেই কে সেই।
পরের বছরই সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন। নিজের দল এনএসডব্লুতে কোচিং দলে যোগ দেন। সেখানে ভালোই করছিলেন। একসময় এনএসডব্লুর প্রধাণ কোচ নিয়োগ পান। ২০১২ সালে অবশ্য তাকে বরখাস্ত করে চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ওয়েলিংটন দলের সাথে কাজ করেছেন। সর্বশেষ এনএসডব্লুর ডেভেলপমেন্ট কোচ হিসেবে কাজ করছিলেন।
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে অ্যান্থনি বলছিলেন, ‘আমার দ্রুত ফর্ম হারিয়ে ফেলাটা মনে হয় ভালোই ছিল। আর কিছু না হোক, কোচিংটা তো আগে আগে শুরু করতে পেরেছি।’
সেটাই বা ঠিকমতো করতে পারলেন কই! সেখানেও তো থিতু হওয়ার লক্ষণ নেই।