বাংলাদেশ দলের মানসিকতায় যে পরিবর্তনগুলো চান রাসেল ডমিঙ্গো, সেসবের একটি হলো, ‘সময়মতো ইনিংস ঘোষণা করা।’ মানে প্রতিপক্ষকে অলআউট করার যথেষ্ট সময় যেন থাকে।
দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ কোচের এই কথাটি গত ম্যাচের প্রেক্ষাপটে যথেষ্টই ইঙ্গিতবহ। সম্ভবত সেদিকে ইঙ্গিত করেই তিনি আলাদা করে এটা উল্লেখ করেছেন।
গত টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণার সময় নিয়ে অনেক আলোচনা-বিতর্ক দেখেছি সোশাল সাইটে। ওই সময় দলের ভেতরও আলোচনা চলছিল বেশ। দ্বিতীয় দিনে ২৫ ওভার খেলা না হওয়ায় দলের ভাবনায় গোলমাল হয়ে যায়। যতটা জানতে পেরেছি, তৃতীয় দিন সকালে, দলের ক্রিকেটারদের এবং ম্যানেজমেন্টের দেশীদের চাওয়া ছিল, লাঞ্চ পর্যন্ত ব্যাট করা, অন্তত ৬০০ রান করা। যাতে বাংলাদেশের ড্র শতভাগ নিশ্চিত হয় এবং শ্রীলঙ্কার জয়ের এক ভাগ সম্ভাবনাও না থাকে।
মুশি সেই ভাবনাতেই ব্যাট করছিলেন। কিন্তু ডমিঙ্গোর চাওয়া ছিল, সকালে দ্রুত ইনিংস ঘোষণা করা এবং বোলারদের যথেষ্ট সময় দেওয়া। ড্রেসিং রুমে এটা নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলছিল। এক পর্যায়ে কোচের কথা মেনেই হুট করে ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
এবার আজকের প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশ দলের মানসিকতা পরিবর্তন নিয়ে কোচের পুরো কথাটা শুনি:
‘এটা হতাশার, যখন একটি ড্র টেস্টকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। আমি এখানে টেস্ট ড্র করতে আসিনি। আমরা অবশ্যই টেস্ট হারতে চাই না। তবে মানসিক একটি পরিবর্তন আমাদের প্রয়োজন। স্রেফ ড্রয়ে খুশি থাকলে চলবে না, জয়ের জন্য খেলতে হবে আমাদের।’
‘দলের সঙ্গে এখন আমার ছয়-সাত টেস্ট হয়ে গেল, মনে হয় দলকে ও দলের সংস্কৃতি এখন বুঝি। আমি জানি কোন জায়গাগুলোয় আমাদের উন্নতি করতে হবে, বিশেষ করে টেস্টে মানসিকতার জায়গায়। পথের এখনও অনেক বাকি এখানে। টেস্টে হারের ভয় কাজ করে এখনও, সেটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের।’
‘জয়ের জন্য খেলতে হবে আমাদের। আমার মনে হয়, এখন আমরা খেলছি না হারার জন্য। এই মানসিক বাধা দূর করতে হবে। এটার জন্য সময় লাগবে। ছেলেরা টেস্টে সাফল্য পায়নি। মানসিকতার বদল না এলে, এই গড়পড়তা মান নিয়েই আমরা স্বস্তিতে থাকব। আমি এমন কিছুর অংশ হতে চাই না।’
‘আমরা দলকে সামনে এগিয়ে নিতে চাই এবং জয়ের জন্য খেলতে চাই। কঠিন কন্ডিশনে আগে ব্যাটিং করতে হবে। প্রতিপক্ষকে অলআউট করার যথেষ্ট সময় নিজেদের দিতে হলে সময়মতো ইনিংস ঘোষণা করতে হবে আমাদের। সত্যিকারের ভালো টেস্ট জাতি হয়ে উঠতে হলে এসব মানসিক পরিবর্তনগুলো দরকার।’
কোচের কথাগুলো অবশ্যই আদর্শ। পড়তে, শুনতে ভালো লাগে। এবং অবশ্যই একটা দলের এরকম মানসিকতাই থাকা উচিত।
কিন্তু বাংলাদেশ দলের বাস্তবতা তো আদর্শ নয় ! এই দলের শক্তির ঘাটতি আছে, স্কিলের ঘাটতি আছে, কোয়ালিটি ক্রিকেটারের ঘাটতি আছে এবং দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর, আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি আছে। কোচের আইডিয়াল ভাবনা বাস্তবায়নের আইডিয়াল জায়গা আপাতত বাংলাদেশ দল নয়।
কিছুটা নমুনা দেখাই গেছে ওই টেস্টেই। শেষ দিনে দ্রুত দুটি উইকেট হারানোর পর কিছু সময়ের জন্য হলেও শঙ্কার চোরাস্রোত কি বইতে শুরু করেনি? তামিম তখন দ্রুত আউট হলে কে জানে কী হতো! তামিম-মুমিনুলের জুটিতে শঙ্কা দূর হয়েছে।
এই দল নিজেদের চেনে, জানে এবং অতীতও মনে আছে। এজন্যই তারা ৬০০ করে ইনিংস ঘোষণা করতে চেয়েছিল। তারা জানে, দলের এই দুঃসময়ে ম্যাচ ড্র নিশ্চিত করা আগে জরুরি ছিল। জিততে পারলে তো কথাই নেই, কিন্তু তারা জানে, শ্রীলঙ্কা থেকে সিরিজ ড্র করে ফিরতে পারা এই সময়ে বেশ ভালো ফল তাদের জন্য।
তাই ডমিঙ্গোর ভাবনা আর দলের ভাবনার একটা ভালো সমন্বয় দরকার। অবশ্যই জয়ের জন্য মাঠে নামা উচিত। কিন্তু সেটির জন্য উচিত দলকে সেভাবে তৈরি করা ও সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেখানে ডমিঙ্গোর দায়িত্ব আছে, বোর্ডের দায়িত্ব আছে, নির্বাচকদের আছে, অধিনায়কের আছে।
সবাই একসঙ্গে বসে সুনির্দিষ্ট ছক করা যায়, কোন পথ ধরে কিভাবে এগোবে দল, কোন সময়ের মধ্যে কোন জায়গায় পৌঁছতে চান তারা। চেক অ্যান্ড ব্যালান্স থাকতে হবে যেন সব পরিকল্পনা ঠিকমতো এগোয়।
কিন্তু হচ্ছেটা কি? বিসিবি সভাপতি খুবই খুশি যে এখন ম্যাচের আগের দিন একাদশ ও টসের সিদ্ধান্ত তিনি জানেন। যেন দেশের ক্রিকেটের বড় সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে!
শ্রীলঙ্কায় টিম লিডার বলছেন, এক বছর অন্তত ড্র করুক দল। ড্র করতে করতেই জিততে শিখবে। এই কথার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোচ বলছেন, ড্র নয়, জয়ের জন্য খেলতে হবে।
দল তাহলে বার্তাটা কি পাচ্ছে?
সবার কথা মিলে হচ্ছে খিচুড়ি। দল তা খাচ্ছে। এখন বদহজম না হলেই হয়।
–ফেসবুক থেকে