নিশ্চয়ই এই ইনিংসটাকে অনেকদিন মনে রাখবেন মুমিনুল হক সৌরভ। তিন অংকের ম্যাজিকাল ফিগারে পৌঁছে যাওয়ার পরই হেলমেট খুলে কানপুরের মাটিতে সিজদাহ করলেন, কৃতজ্ঞতা জানালেন স্রষ্ঠার প্রতি। সাথে নিশ্চয়ই জলাঞ্জলি দিলেন হাজারো আক্ষেপের।
ক্যারিয়ারের ১৩ তম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন মুমিনুল। মুমিনুলের ক্যারিয়ার নিয়ে অসংখ্য হতাশা আছে। নিন্দুকের দাবিকে সত্য প্রমাণ করে পরিসংখ্যানও বলে ভিনদেশি কন্ডিশনে রান করতে জানেন না বাঁ-হাতি এই ব্যাটার।
মুমিনুলের সেই আক্ষেপ এবার কিছুটা হলেও কমতে পারে। দ্বিতীয়বারের মত বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করলেন। এর আগের সেঞ্চুরিটা ছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে। মাত্র দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে ভারতে সেঞ্চুরি করলেন।
কানপুরের গ্রিন পার্কে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বাকি ব্যাটারদের কেউই যখন হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারলেন না, সেখানে ভারতীয় স্পিন আক্রমণকে শাসন করে সেঞ্চুরি পেয়ে গেলেন মুমিনুল। চতুর্থ দিন লাঞ্চে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের রান ছয় উইকেটে ২০৫। এর মধ্যে ১০২ রানই করেছেন মুমিনুল।
লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারেই সুইপ করে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বাউন্ডারি মারেন, পৌঁছে যান তিন অংকের ম্যাজিকাল ফিগারে। ব্যাটিংয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখেছেন। হাঁকিয়েছেন ১৬ টি চার ও একটি ছক্কা। ইনিংস জুড়েই সুইপ আর কাটে ভারতকে ভুগিয়েছেন তিনি। অথচ, যখন ব্যাটিংয়ে এসেছিলেন, পিচে কিছুটা ঘাঁস ও মুভমেন্ট থাকায় মোটেও সহজ ছিল না।
অপর প্রান্তে ব্যাটারদের যাওয়া আসার মিছিল দেখেছেন। তবে, মুমিনুল ছিলেন অবিচল। চাইলে এটাকেই মুমিনুলের সেরা টেস্ট সেঞ্চুরি বলে ফেলা যায়। প্রথম টেস্টে এই মুমিনুলেরই অভাব ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে। রান করার ক্ষুধাটাই যেন হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
সেই ক্ষুধাটা আবারও ফিরে পেয়েছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে, তাঁদেরই মাঠে সেঞ্চুরি – নিশ্চয়ই এই ইনিংস খুবই স্পেশাল। এই ইনিংস থেকেই শুরু হোক মুমিনুল হকের বদলে যাওয়ার সূচনা। আর সেটা হলে লাভবান হবে বাংলাদেশ দলই।
একটা পরিসংখ্যান উল্লেখ না করলেই নয়। সেই ১৯৮৪ সালের পর কানপুরে এবার দ্বিতীয়বারের মত সফরকারী কোনো ব্যাটার সেঞ্চুরি করলেন। ২০০৪ সালে এখানে সেঞ্চুরি করে ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যান্ড্রু হল। মুমিনুল এবার নাম লেখালেন তাঁর পাশে। সত্যিই, এই সেঞ্চুরিটা খুবই স্পেশাল!
মুমিনুলের এই স্পেশালিটি অব্যহত থাকুক।