এ শুধু সমর্থকদের জন্য

এই মৌসুমটা সবার জন্যই কষ্টকর ছিল।

খেলোয়াড়, সমর্থক, কোচ, সকলের জন্যই। পুরো মৌসুমজুড়ে সমর্থকরা ছিলেন খেলা থেকে দূরে। মাঠে ঢোকার সুযোগ হয়নি মহামারির জন্য। পুরো মৌসুম খেলোয়াড়দের সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছেন বাসার সামনে টিভি স্ক্রিনের সামনে বসে। পুরো মৌসুম সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া সমর্থকদের জন্য তো কিছু করা প্রয়োজন। আর সেটাই করে দেখাচ্ছে আয়াক্স।

ডাচ লিগে একছত্র আধিপত্য আয়াক্সের। কিন্তু মহামারির জন্য গত মৌসুমে এগিয়ে থেকেও শিরোপা পাওয়া হয়নি তাদের। তাই এই মৌসুমটাকেই টার্গেট করেছিল তারা। পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা উদযাপন করা শেষ আয়াক্সের। শিরোপা নিয়ে খালি মাঠেই উদযাপন করেছে আয়াক্স। কিন্তু সবকিছু শেষেও কেমন যেন খালি খালি লাগছিল তাদের। লাগবে নাই বা কেন? সমর্থকদের ছাড়া ফুটবলের স্বাদ কী আগে মতন পাওয়া সম্ভব? সম্ভব না। তাই আয়াক্স ম্য্যানেজমেন্ট বসে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিল।

বুধবার টুইটারে অফিশিয়ালি একটি ভিডিও আপলোড দিয়েছে আয়াক্স। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পুরো ডাচ লিগ ট্রফি অর্থাৎ ইরিদিভিসের প্লেট শিরোপাটা গলিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আর সেটি গলিয়েই তৈরি করা হবে ছোট্ট ছোট্ট স্টার। রূপার তৈরি প্লেট থেকে তৈরি করা হবে মোট ৪২ হাজার স্টার। আর সেগুলো উপহার হিসেবে দেওয়া হবে আয়াক্সের সিজন টিকিট হোল্ডারদের।

শুনেই পিলে চমকে যেতে পারে, বলে কী? এমনটা হয় নাকি? নিজেদের কষ্টার্জিত শিরোপা এভাবেই দান করে দিবে সকলকে?

হ্যা, তাদের সিদ্ধান্ত এরকমই। সমর্থকদের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত আয়াক্স। শুধু আয়াক্স বললে ভুল হবে, ডাচ ক্লাব সবগুলোই সমর্থকদের সাথে বেশ কানেক্টেড। আর এই মহামারির সময়ে ক্লাবকে সাহায্য করতে দুইবার ভাবেনি ক্লাবের সমর্থকেরা। ডাচ লিগের বেশির ভাগ ক্লাবের আয়ের উৎস খেলোয়াড় আর টিকিট বিক্রি। মহামারির কারণে খেলোয়াড় বিক্রিতে তো মন্দা লেগেইছে, সেই সাথে চলে গিয়েছে সকল টিকিট বিক্রির রেভিনিউ। পুরো মৌসুমে এক ম্যাচেও মাঠে আসতে পারেনি কোনো সমর্থক। ৫৫ হাজার ধারণক্ষমতার ইয়োহান ক্রুইফ স্টেডিয়াম যেন শুণ্য মরু।

আয়াক্সের আয়ে তেমনই ধাক্কা পড়েছিল। তার উপর আগের মৌসুম বাতিল হয়ে যাওয়াতে প্রাইজমানিও পায়নি তারা। আর সেসময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল আয়াক্সের সমর্থকেরা। আয়াক্সের ৪২ হাজার সমর্থক মৌসুমের শুরুতেই নিজেদের রেজিস্ট্রি করান সিজন টিকিট হোল্ডার হিসেবে।

সিজন টিকিট হোল্ডার হলো একটা স্পেশাল টিকিট, যা দিয়ে পুরো মৌসুমের যেকোনো হোমম্যাচ মাঠে বসে দেখতে পারবেন সমর্থকেরা। এছাড়াও কিছু কিছু ট্রেনিং সেশন, খেলোয়াড়দের সাথে মিট করার সুযোগ তো থাকছেই। এই টিকিটের দামও হয় চড়া। এতে করে পুরো মৌসুমের অর্ধেক ম্যাচের টিকিট একেবারে কাঁটা হয়ে যায় তাদের।

প্রতি মৌসুমে যেখানে ১০-১২ হাজার সিজন টিকিট হোল্ডার থাকেন, সেখানে এই মৌসুমে আয়াক্সের ডাকে সারা দিয়ে পুরো মৌসুমের টিকিট কেটেছেন ৪২ হাজার সমর্থক। আর পুরো টাকাটা পেয়েছে ক্লাব, তাদের মৌসুম চালানোর জন্য, সেই সাথে কোভিড আক্রান্তদের সাহায্যার্থে।

ক্লাবের দুঃসময়ে ক্লাবের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছিলেন যারা, তাদের নিশ্চয় ফেলে দিতে পারে না ক্লাব। আর সেটাই করে দেখিয়েছে আয়াক্স। প্রত্যাক সিজন টিকিট হোল্ডার পাবেন একটি করে স্টার, কিংবা আয়াক্সের ভাষায়, ‘a piece of Ajax’ আর টুইটারে সমর্থকদের প্রতি ট্রিবিঊটও দিয়েছে তাদের মতন করেই।

এই পুরো মৌসুমটা আমাদের কাটাতে হয়েছে দর্শকদের ছাড়া। অন্তত গ্যালারির স্ট্যান্ডে তাদের উপস্থিতি ছাড়া। তা স্বত্বেও প্রতিটি মূহুর্তে আপনাদের সমর্থন আমরা এয়েছি। আর যখন আমরা বলি এই ট্রফিটা আপনাদের জন্যই,তখন সেটা আমরা আক্ষরিক অর্থেই বোঝাই। এই আয়াক্স আপনাদের।

ইতোমধ্যে ৪২ হাজার স্টার বানানো শেষ। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে ক্লাব লিজেন্ড মার্ক ওভারমার্স ব্রিফকেস হাতে চলছেন সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি। এর থেকে আনন্দের সংবাদ সমর্থকদের কাছে কী-ই বা হতে পারে? ক্লাবের জয়ের স্মারক, তাদের বাড়ির দেওয়ালে আজীবনের জন্য। সমর্থকদের জন্য এটুকু তো করতেই পারে আয়াক্স, তাই না?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link