নেইমার, এক অনাকাঙ্ক্ষিত রাজকুমার!

স্রেফ একজন নেইমার থাকলেই ব্রাজিলের চিত্রটা আজ ভিন্ন হত, এই বাস্তবতা খোদ ব্রাজিলও বোঝে!

১৯৯২ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারি, ব্রাজিলের সাও পাওলোর এক বস্তিতে জন্ম নেইমার জুনিয়রের। ছোটবেলা থেকেই বস্তি, দারিদ্র আর ফুটবল নিয়েই বেড়ে ওঠা শুরু তার। সালটা ২০০৯, ফুটবলের কিংবদন্তি পেলের ক্লাব সান্তোসে, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সুযোগ পেয়ে যায় নেইমার।

নিজের জাত চেনাতে খুব বেশিদিন লাগেনি তার। ২০১০ সালে নেইমারের নৈপুণ্যে সান্তোস ব্রাজিলিয়ান লিগ কাপ জিতে। লিগে নেইমার ১৯ ম্যাচে ১৪ গোল করেন।  নেইমার অর্জন করেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। ২০১১ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে সান্তোসকে ৪৮ বছর পর জেতান লাতিন আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের সেরা টুর্নামেন্ট কোপা লিবারোদোরেস।

নেইমারের জাতীয় দলের প্রথম মেজর অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ২০১৩ কনফেডারেশনস কাপ। ২১ বছর বয়সী নেইমারের ফাইনালের প্রতিপক্ষ ছিল স্পেন। যারা ২০০৮, ২০১২ ইউরো চ্যাম্পিয়ান, ২০১০ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। যাদের প্রতিটা পজিশনে বিশ্বসেরা ফুটবলার, স্পেনের এই গোল্ডেন পিরিয়ডের অবসান টানে নেইমার। স্পেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ম্যাচ সেরা হন নেইমার।

এরপরে আর পিছু পা হতে হয়নি নেইমারকে। নাম, খ্যাতি, যশ – সবই পেয়েছেন। পেলেকে টপকে ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা গোলদাতা বনে গেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ১২৮ ম্যাচে ৭৯ গোল, ৫৯ অ্যাসিস্ট তার। বর্তমানে অধিকাংশ ব্রাজিলিয়ানকে দেখা যায় ক্লাব ক্যারিয়ারে সফল অথচ জাতীয় দলে ব্যর্থ।

কিন্তু এখানেই নেইমার ব্যতিক্রম। বিশ্বকাপে ১৩ ম্যাচ খেলে ৮ গোল, ৪ অ্যাসিস্ট তার। কোপা অ্যামেরিকায় ১২ ম্যাচে পাঁচ গোল, চার অ্যাসিস্ট, ফেডারেশনস কাপে পাঁচ ম্যাচে চার গোল, দুই অ্যাসিস্ট।

হ্যাঁ, নেইমারের জীবনটা একটু বির্তকিত। সে যে অমরত্ব ছুঁতে পারতেন তার অর্ধেকও হয়ত সে হতে পারেননি। এর জন্য প্রতিপক্ষ বা ভক্ত – সবার ট্রল হজম করতে হয় তাঁকে। অথচ, আক্রমণভাগে ব্রাজিলের একজন নেইমারের অভাব পূরণ হয়নি।

নেইমারকে ছাড়া সর্বশেষ ১৩ টি ম্যাচ ব্রাজিল খেলেছে সেখানে তাদের জয় মাত্র চারটি। ব্রাজিলের দু:সময়ের চিত্র এখানেই স্পষ্ট। গেল বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও ১০ ম্যাচে আটটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট ছিল তাঁর।

২০১০ সালের পরের থেকে নেইমার খেলেছে এমন ম্যাচে ব্রাজিলের মোট গোলের প্র‍ায় ৬০ শতাংশ অবদান নেইমারের। ২৬৫ গোলের মধ্যে তারই গোল বা অ্যাসিস্ট ১৩৮টি। এই নেইমারকে ট্রল করাটা মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়।

স্রেফ একজন নেইমার থাকলেই ব্রাজিলের চিত্রটা আজ ভিন্ন হত, এই বাস্তবতা খোদ ব্রাজিলও বোঝে!

 

Share via
Copy link