আলাদা ষ্টেডিয়াম আর জনপ্রিয়তা থাকার পরও হকি এখন ভুলতে বসা খেলাগুলোর একটি।
সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু ৯ম বাংলাদেশ গেমসে খেলাটি টার্ফে গড়ালেও আশাপ্রদ কিছু পাওয়া যায়নি। তিন বছর হতে চলল দেখা নেই প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগের। প্রথম বিভাগ আর দ্বিতীয় বিভাগ লিগের কি অবস্থা হতে পারে সেটি সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। খেলোয়াড়রা হকি ছেড়ে জীবিকার তাগিদে বেছে নিচ্ছেন নতুন নতুন পেশা। আর যারা বিভিন্ন বাহিনীতে চাকুরি করছেন তারাই কেবল খেলাটি নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। এই অবস্থার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন খেলাটিতে।
ক্লাবগুলো মিলে হকি ফেডারেশনের কাছ থেকে অনুদান পেলে লিগ খেলার আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। তাদের অনুরোধের পর হকি ফেডারেশনের সভাপতি ও বিমানবাহিনী প্রধান চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী নিরাশ না করে এক কোটি টাকা অনুদানের ঘোষনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে টাকা প্রাপ্তির বিষয়ে ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, ‘হকি ফেডারেশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া কোটি টাকার চেক আমরা হাতে পেয়েছি। এখন এই টাকা দিয়ে ক্লাবগুলোকে কিছু অনুদান প্রদাণ করে হলেও লিগ শুরু করতে চাই।’
প্রশ্ন হলো, এই কাজটা এখন হবে কি না।
প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগ যেন ভুলে যাওয়া একটি আসরে পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসের পর আর বল-ষ্টিকের লড়াই দেখা যায়নি। খেলোয়াড়দের দাবীর মুখেও রুটি-রুজির এই আসর নিয়ে আসেনি কোন সুখবর। হকি ফেডারেশনে নির্বাচন হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু নির্বাচিত কমিটির সাধারন সম্পাদক নিজেই অপরাধকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পদ হারিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক যেন আর ভার সইতে পারছেন না।
সব দলকে নিয়ে লিগ মাঠে গড়াতে গিয়ে বর্তমান কমিটি বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। হকির জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এই লিগ শুধু পেছাচ্ছে। সর্বশেষ গত মার্চে শুরু পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল ফেডারেশন থেকে। ২০১৯ সালে নির্বাচিত নতুন কমিটির প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে ছিল প্রিমিয়ার হকি লিগ মাঠে গড়ানো। করোনা ভাইরাসের আগে ও পরে চারটি টুর্নামেন্ট হয়েছে হকিতে। শহীদ স্মৃতি হকি, স্কুল হকি, প্রেসিডেন্ট কাপ হকির পর সর্বশেষ বিজয় দিবস হকি। সেখানে প্রত্যাশিত প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে কোন সুখবর দিতে পারেনি ফেডারেশন। বছরের প্রথম সভায় লিগের নিয়ে সিদ্বান্ত নেওয়ার কথা থাকলে সেটি হয়নি।
ফুটবল, ক্রিকেটসহ ছোট-বড় অনেক খেলাই নিয়মিত মাঠে গড়ালেও হকিতে যেন এই অবস্থা উধাও হয়ে গেছে! এই যেমন প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগ নিয়ে খেলোয়াড়দের অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। ২০১৮ সালের জুন মাসে সর্বশেষ আসরটি মাঠে গড়িয়েছিল, এরপর সময়ের হিসেবে প্রায় তিন বছর হতে চলল। গেল ডিসেম্বরে বিজয় দিবস হকির পর মাঠে গড়িয়েছে শহীদ স্মৃতি হকি।
এই অবস্থার মধ্যেই ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের কথা শোনা যাচ্ছে। ক্রিকেটে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে নিয়মিতই চলছে। ফুটবলে এই লিগ আয়োজনের চেষ্টা করেছিল বেসরকারী প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড। কিন্তু সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। এবার হকিতে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের বিষটি ফেডারেশন সুত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই লিগ আয়োজনের বিষয়ে নাকি এরই মধ্যে ফেডারেশন থেকে সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ছাড়াও প্রিমিয়ার লিগ যতটা সম্ভব দ্রুত আয়োজনের ব্যাপারেও সভায় আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি মে মাসে কমপক্ষে ছয়টি দল নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজন করতে চায় ফেডারেশন। দুটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল থেকে ইতোমধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের জন্য হকি ফেডারেশনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একটি টেলিভিশন ছয়টি বিভাগ নিয়ে লিগ আয়োজনের প্রস্তাবও দিয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটা দলে ২ থেকে ৪ জন করে বিদেশি খেলোয়াড় থাকবে, বাকি খেলোয়াড়রা বাংলাদেশী। অন্য টেলিভিশন চ্যানেলটি যদিও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব এখনো দেয়নি। এরপর দুটি প্রস্তাবকে একসাথে নিয়ে দ্রুত লিগ আয়োজনের সিদ্বান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ভারতে ক্রিকেট দিয়ে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ শুরু হলেও এখন ফুটবল, কাবাডি, হকিতেও লিগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই লিগগুলো খেলাটির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর পাশাপাশি খেলোয়াড়দের জন্যও বেশ লাভজনক হিসেবে দেখা দিয়েছে। ছয়টি বিভাগীয় দল নিয়ে হকির নীল টার্ফে লিগ আয়োজন করা হতে পারে। যেহেতু এখন মওলানা ভাসানী হকি ষ্টেডিয়ামে টার্ফ বসানো হয়েছে তাই লিগটা জমজমাট হবে বলেই বিশ্বাস হকি সংশ্লিষ্টদের।