প্রতিটি ক্লাবের জন্যই ট্রান্সফার মৌসুমটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টাতেই একটি ক্লাব পারে তাদের পছন্দের খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে। প্রতি মৌসুমেই দুইবার করে এই সময়টা আসে। একবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগে আরেকবার মৌসুমের মাঝামাঝি। এই ট্রান্সফার মৌসুম সফল করানোর পেছনে থাকে কিছু ব্যক্তি। এই সকল ব্যক্তি তাদের দক্ষতা এবং ক্ষমতার বলে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয় তাদের পছন্দের খেলোয়াড়দের। শীর্ষ ক্লাব গুলোর ট্রান্সফার মৌসুম সফল করার পেছনে অবদান কাদের, চলুন দেখে নেওয়া যাক।
- ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ,৭৭ (প্রেসিডেন্ট, রিয়াল মাদ্রিদ)
খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জুড়ি মেলা ভার। ফুটবল ইতিহাসে তার মতো সফল আর কেউ নেই খেলোয়াড় দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে।
২০০০ সালে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এর পরেই শুরু হয় তার দাপট ট্রান্সফার বাজারে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরেই তিনি ফুটবল বিশ্বের বড় বড় তারকাদের দলে ভেড়াতে শুরু করেন। ডেভিড বেকহ্যাম, লুইস ফিগো, রোনালদো নাজারিও, জিনেদিন জিদানের মতো খেলোয়াড়দের দলে টানেন তিনি।
বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকেও দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে রিয়াল মাদ্রিদে টানতে সক্ষম হয়েছেন পেরেজ।
- ডেকো, ৪৭ (ক্রীড়া পরিচালক, বার্সেলোনা)
ডেকো এই পেশায় নতুনই বলা যায়। মাত্র দেড় বছর হলো তিনি বার্সেলোনার ক্রিয়া পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। ট্রান্সফার বাজারে তার পক্ষে তেমন কারিকুরি দেখানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। বার্সেলোনার অর্থনৈতিক মন্দা চলার কারণে ট্রান্সফার বাজারে তেমন একটা দাপট দেখাতে পারছে না ডেকো।
এই অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে থেকেও বার্সেলোনা একটি ভালো দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। লা মাসিয়ার থেকে আসা তরুণ খেলোয়াড়দের বলে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে এখন বার্সেলোনা। এছাড়াও ডেকো সক্ষম হয়েছেন দানি ওলমো, পাউ ভিক্তরের মতো খেলোয়াড়দের এই মৌসুমে দলে ভেড়াতে।
- ম্যাক্স এবার্ল, ৫১ (ক্রীড়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,বায়ার্ন মিউনিখ)
সম্প্রতি বায়ার্ন মিউনিখের ক্রিয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ম্যাক্স এবার্ল যোগদান করেন। এই জার্মান এর আগে বোরোশিয়া মুনচেনগ্ল্যাডব্যাক এবং আর বি লাইপজিগের মতো ক্লাবে কাজ করেছেন।
তিনি প্রথম মার্কো রিয়ুসের প্রতিভা দেখে মুনশেনগ্ল্যানব্যাচ দলে ভেরান। এছাড়াও তিনি আর বি লাইপজিগে জাভি সিমন্স এবং লোইস ওপেন্দার মতো খেলোয়াড়দের দলে নিতে সক্ষম হন।
- লরেন্স স্টুয়ার্ট,৩৮ এবং পল উইনস্ট্যানলি,৪৫ (ক্রীড়া পরিচালক, চেলসি)
চেলসি অন্য শকল ক্লাবের মতো একজন ক্রীড়া পরিচালক না রেখে দুইজন ক্রিয়া পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি একটু অদ্ভুত হলেও চেলসির জন্য ভালই কার্যকরী হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। ২০২২ সালে পল উইনস্ট্যানলি এবং ২০২৩ সালে লরেন্স স্টুয়ার্ট চেলসিতে ক্রিয়া পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছেন।
এর আগে উইনস্ট্যানলি ব্রাইটনের হয়ে কাজ করেছেন এবং স্টুয়ার্ট এএস মোনাকোর হয়ে কাজ করেছেন। চেলসিতে যোগদান করার পর তারা দুজনই খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর সকল কাজ সামলে নিচ্ছেন। তারা যোগদান করার পর চেলসিতে অনেক তরুণ খেলোয়াড়দের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। চেলসিকে আবারও একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করতে সাহায্য করে যাচ্ছেন এই দুইজন। তাদের বদৌলতে আমরা চেলসিতে কোল পালমার, এনজো ফার্নান্দেজ, মোইসেস কাইসেডোর মতো খেলোয়াড়দের দেখতে পাচ্ছি।
- জিকি বেগিরিস্টাইন,৬০ (ক্রীড়া পরিচালক, ম্যানচেস্টার সিটি)
ম্যানচেস্টার সিটির এই সাফল্যের পেছনে আরেকজন নায়ক হলেন জিকি বেগিরিস্টাইন। ২০১২ থেকে তিনি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এর আগে তিনি ২০০৩ হতে ২০১২ পর্যন্ত বার্সেলোনার হয়ে কাজ করেছেন। সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলাকে দলে আনার পেছনেও রয়েছে এই ব্যক্তি।
ম্যানচেস্টার সিটিতে তিনি রুবেন দিয়াস, রদরি, কেভিন ডি ব্রুয়েনা, আর্লিং হালান্ডের মতো তারকাদের টানতে সক্ষম হয়েছেন। সিটির বর্তমানে খারাপ সময় চলার ফলে তাকে আবারও কারিকুরি সাজাতে হচ্ছে যে কি করে আবারও শীর্ষ স্থানে ফিরে আসা যায়।
- মাইকেল এডওয়ার্ডস,৪৫ (ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক, লিভারপুল)
দুই বছরের পর মাইকেল এডওয়ার্ডস লিভারপুলের হাল ধরতে আবারও ফিরে আসেন। এর আগে তিনি ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত লম্বা সময় ধরে লিভারপুলের হয়ে কাজ করেছেন। বর্তমানে বলা যায় তাঁর অধীনেই লিভারপুলের সকল ফুটবলীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হচ্ছে।
ট্রান্সফার বাজারেও তার দাপট রয়েছে। ক্লাবের মালিকপক্ষের তার উপরে যথেষ্ঠ আস্থা রয়েছে। বর্তমানে তিনিই কোন খেলোয়াড়কে দলে টানতে হবে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইউর্গেন ক্লপ চলে যাওয়ার পর আর্নে স্লটকে আনার পেছনেও রয়েছেন এই ব্যক্তি।