নাহিদ দেয় ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর সুখ

খেলা পাগল মানুষগুলো নিজেদের বারবার প্রশ্ন করে, 'সত্যিই কোন বাংলাদেশি বোলিং করছে?'

স্ট্যাম্প উড়ে কয়েকবার ঘুরপাক খেল। স্ট্যাম্পের গায়ে লেগে থাকা বাতিগুলো জানান দিল অন্য এক আলোক মশালের। বাংলাদেশের বুকে এক জলজ্যান্ত আগ্নেয়গিরি নাহিদ রানা। বল হতে বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। সেই বিস্ফোরণের ভয়াবহতা যেন টের পেলেন জাকির হাসান।

সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে নিজের প্রথম ওভারেই গতিতে চোখ ছানাবড়া করেছেন নাহিদ। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভেতরের দিকে অ্যাঙ্গেল করা লেন্থ বল, শুধু অফ স্ট্যাম্পেই আঘাত করল। চোখের পলকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়ল সেই স্ট্যাম্প।

অফ স্ট্যাম্প যদি কোন মানুষ হতো, তাহলে হয়ত বলেই বসত-  ‘এই আঘাত সইব আমি কেমন করে?’ সতীর্থ জাকিরের বিদায়ে খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখালেন না নাহিদ। জাকির আর মাথা তোলার সাহস পেলেন না। এরপর ক্রিজে এলেন অভিজ্ঞ পল স্টার্লিং।

প্রথম বলেই মনের ভেতর ভয় ধরিয়ে দিলেন নাহিদ। একটু বাড়তি বাউন্সি বলটা ব্যাটের একেবারে কোল ঘেঁষে চলে গেল নুরুল হাসান সোহানের দস্তানায়। খানিক তটস্থ হয়ে গেলেন স্টার্লিং। পরের বলটা ইয়োর্কার করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশের সত্যিকারের ‘স্পিডস্টার’। কিন্তু পিচ না করা বলটাকে সীমানা ছাড়া করেন স্টার্লিং। যদিও সেই শটে নিয়ন্ত্রণ কতটুকু ছিল সে প্রশ্ন তোলাই যায়।

ভয়ে ভয়ে কোন মতে নিজেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে ব্যাট চালিয়েছেন আইরিশ ব্যাটার। এরপর সেই ওভারেই পয়েন্টে ক্যাচ পাঠিয়েছিলেন স্টার্লিং। কিন্তু রাকিবুল হাসানের কাছে পৌঁছানোর আগেই বল মাটি ছুঁয়ে গেল। কিন্তু সেই ওভারে শেষ হাসিটা হেসেছেন নাহিদ রানাই। শর্ট বল ছুড়লেন। গতিতে পরাস্ত এবার স্টার্লিং। ব্যাট নামিয়ে আনতে আনতেই বেলা যেন শেষ।

টপ এডজ হয়ে মিড অনে সহজ ক্যাচ। এক ওভারে নাহিদের জোড়া আঘাত। তার থেকেও আকর্ষণের বিষয় সম্ভবত নাহিদের বোলিং। তিনি বোলিং প্রান্তে এলেই যেন আলাদা এক অনুরণ ছড়িয়ে যায় সর্বত্র। কমেন্ট্রি বক্স থেকে গ্যালারি সেখান থেকে হাজার খানেক ড্রয়িং রুমে কিংবা চায়ের দোকানে। একটা অন্যরকম ভাললাগা দোলা দিয়ে যায় নাহিদের বোলিং।

খেলা পাগল মানুষগুলো নিজেদের বারবার প্রশ্ন করে, ‘সত্যিই কোন বাংলাদেশি বোলিং করছে?’ চোখ যেন বিশ্বাস করতে চায় না। মনের ভেতর দোলা দিয়ে যায় শীতল তীব্র বাতাস, মন যেন হয়ে ওঠে কোন এক হলুদ সর্ষে ক্ষেত। নাহিদের বোলিং যেন দেয় ঝড়ের দিনে বাল্যকালে আম কুড়ানোর সেই উন্মাদনা।

হৃদয় থেকে ধ্বনিত হওয়া এই বন্দনা যেন কখনোই শেষ না হয়, সেই প্রার্থনাও জায়গা করে নেয় অবচেতন মস্তিষ্কে। নাহিদ রানা ঠিক এমন বিমোহিত করে তোলেন।

Share via
Copy link