দ্য উইম্যান বিহাইন্ড কপিল দেব

১৯৮৩ সালে যখন ভারত বিশ্বকাপ জিতে কপিলের সাথেই ছিলেন রোমি। যদিও, দু’জনের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে কথা হত সামান্যই। বিশ্বকাপ জিতে কপিল শুধু এসে দীর্ঘ সময় জড়িয়ে ধরে রাখেন রোমিকে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কখনো কখনো কথা না বলেও তো কত কথাই বলে দেওয়া যায়!

ভারতে ক্রিকেট আর বলিউড নাকি হাঁটে পাশাপাশি। কথাটা স্রেফ গালগল্প নয়। টাইগার পতৌদির সাথে শর্মীলা ঠাকুর কিংবা আজকের বিরাট কোহলির সাথে আনুশকা শর্মা – এমন অনেক স্মরণীয় ও সফল দাম্পত্য জীবনের গল্পগুলো তো সবারই মুখে মুখে ঘুরে ফিরে আসে।

তেমনি ভারতীয় ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টারের জীবনেও এসেছিলেন একজন। তিনি হলেন অভিনেত্রী সারিকা। যদিও, সেই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি। সারিকা পরে বিয়ে করেন দক্ষিণী কিংবদন্তি কমল হাসানকে। ক্রিকেটের সেই সুপারস্টারটি কে – তা নিশ্চয়ই আর ভেঙে বলার প্রয়োজন পরে না। তিনি হলেন কপিল দেব।

ভারতকে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ট্রফি এনে দেওয়া নেতা। সেই বিচ্ছেদটা কপিলের জীবনে সাপেবর হয়েছিল। কারণ, জায়গাটা নিতে পেরেছিলেন রোমি ভাটিয়া। তিনি তখন কিংবা আজও কপিলের জীবনের ধ্রুবতারা, যার ছোঁয়ায় কপিলের জীবন পায় পূর্ণতা। আর এই কপিলের ছোঁয়ায় তো পাল্টে যায় গোটা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসই।

নিজের জীবনসঙ্গীকে বিচিত্র উপায়ে কপিল দিয়েছিলেন বিয়ের প্রস্তাব। যদিও, পরিচয়টা আগে থেকেই, বন্ধু সুনীল ভাটিয়ার সুবাদে। পরিচয় ১৯৭৯ সালে। পরিনয় ১৯৮০ সালে। সেই গল্পটাই এখন করা যাক।

ভারত ক্রিকেটের প্রথম মেগাস্টার কিংবা সুপারস্টার কিংবা পোষ্টারবয় আপনি যেকোন তকমা দিয়েই কপিল দেব-কে আখ্যায়িত করতে পারবেন। কেননা ভারতের প্রথম মিরাকেল ঘটানো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের অন্যতম কাণ্ডারিতো ছিলেন তিনি।

১৯৮৩ সালে যখন কেউ প্রত্যাশা করেননি ভারত জিততে পারে বিশ্বকাপ ঠিক সে সময়ে তিনি বিশ্বাস করতেন এবং শেষমেষ শিরোপা জিতেই তিনি ফিরেছিলেন ইংল্যান্ড থেকে স্বদেশে।

ভারতের হারিয়ানা অঙ্গরাজ্য থেকে উঠে আসা কপিল পরবর্তীতে বিশ্বদরবারে ভারতের সুপরিচিতি ছড়িয়েছেন। ১৯৯৪ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেও কপিল দেবকে এখনও বিবেচনা করা হয় ভারতের সর্বকালের সেরা পেস-বোলিং অলরাউন্ডারদের একজন।

তাঁর প্রতিনিধিত্বেই ১৯৮৩ সালে ভারত দেখা পেয়েছিল তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার। তৎকালীন বিশ্ব ক্রিকেটের অত্যন্ত শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারিয়েছিল ভারত।

ভারতের ক্রিকেট উত্থানের পেছনে কপিল দেবের অবদান অনস্বীকার্য। ভারত ক্রিকেটের এই যে উন্নয়ন, এই যে সুখ্যাতি, বর্তমান প্রভাব এ সবকিছুর পেছনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছেন কপিল দেব।

মহেন্দ্র সিং ধোনির আগে তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত তরুণদের রোল মডেল, আইডল। যাকে দেখে তরুণরা ক্রিকেটের প্রতি হয়েছিল আগ্রহ এবং চলমান প্রক্রিয়ায় এখন বিশ্ব নন্দিত ব্যাটার এবং বোলারদের বিচরণভূমি ভারত।

ভারতের ক্রিকেটের প্রথম তারকাকে নিয়ে সম্প্রতি বলিউডে তৈরি হতে যাচ্ছে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচিত্র। তাঁতে কপিল দেবের ভূমিকায় রুপালী পর্দায় দেখা যাবে ভারতীয় তারকা অভিনেতা রনবীর সিং।

তাছাড়া কপিল দেবের স্ত্রী চরিত্রে দেখা যাবে দীপিকা পাডুকনকে। স্বাভাবিকভাবেই বাস্তব-জীবনে কপিল ও তাঁর স্ত্রী রোমি ভাটিয়ার সম্পর্কে নিয়ে নানারকম কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। সেই কৌতূহলে একটি, কপিল দেব কিভবে দিয়েছিলেন রোমি ভাটিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব?

এই প্রশ্নের উত্তর খোদ কপিল দেব দিয়েছেন ভারতীয় মিডিয়ার একটি টক শো-তে। তিনি জানিয়েছেন তাঁর বিচিত্র বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের ঘটনা। তাঁর ভাষ্যমতে, কোন একখানে যাত্রাপথে তিনি রোমিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

কপিল সেই টক শো-তে বলেছিলেন যে তিনি এবং রোমি একদিন গাড়িতে করে ভ্রমণ করেছিলেন। পথিমধ্যে এক জায়গায় তাঁরা একটি বিজ্ঞাপনের বিশাল বিলবোর্ড অতিক্রম করেছিলেন। সেই বিলবোর্ডে ছিল কপিল দেবের ছবি সংবলিত একটি বিজ্ঞাপন।

সেই বিজ্ঞাপনে কপিল দেবের দাঁতে মাখনের একটা স্তর স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল কেননা সেটা ছিল একটি মাখন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন। রোমিকে সেই বিলবোর্ডের ছবি তুলতে বলেন কপিল।

রোমি তাঁকে পাল্টা প্রশ্নে এর কারণ জানতে চাইলে, কপিল তাঁকে বলেন, ‘এই ছবি আমাদের ভবিষ্যত সন্তনদেরকে দেখাব।’ রোমি তৎক্ষণাৎ বুঝে ফেলেন কপিল তাঁকে পরোক্ষ এবং খুবই বিচিত্র উপায়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন।

৬১ বছর বয়সে এসে নিজের যুবক বয়সের প্রণয়ের স্মৃতিচারণের এক পর্যায়ে কপিল তাঁর এবং রোমির বিয়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তাঁদের বিয়েতে রোমির বাবা রাজি হয়ে গেলেও তাঁর ঠাকুর দাদা প্রশ্নের মেশিনগান চালিয়েছিলেন কপিলের দিকে। পরিশেষে কপিল ও রোমি ১৯৮০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৬ সালে তাঁদের কোল জুড়ে ভুমিষ্ট হয় তাঁদের একমাত্র কন্যা আমিয়া দেব।

১৯৮৩ সালে যখন ভারত বিশ্বকাপ জিতে কপিলের সাথেই ছিলেন রোমি। যদিও, দু’জনের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে কথা হত সামান্যই। বিশ্বকাপ জিতে কপিল শুধু এসে দীর্ঘ সময় জড়িয়ে ধরে রাখেন রোমিকে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কখনো কখনো কথা না বলেও তো কত কথাই বলে দেওয়া যায়!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...