সাকিব, শেষটা এমন না হলেও পারতো!

ফয়সাল নামের মানুষটাকে আপনি মুছে ফেলতে পারবেন না। তাঁকে মুছে ফেলতে চাইলে দেখবেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসই মুছে ফেলেছেন - তিনি থাকবেন ইতিহাসের প্রতিটা পাতায়, তিনি থাকবেন কোটি কিশোরের ভাবনায়।

সাকিব আল হাসানের দিনটাকে ভুলে যাওয়ার সুযোগ নেই। ১২ জানুয়ারি, ২০১৫। এদিনই তিন ফরম্যাটে র‌্যাংকিং শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় উঠেছিলেন। ১০ বছর বাদে, ঠিক ওই দিনটাতেই লেখা হয়ে গেল তাঁর ক্যারিয়ারের এপিটাফ। যে এপিটাফে লেখা থাকল, নাম্বার ওয়ানের শেষটা ছিল কি ভীষণ মলিন!

সাকিব আল হাসান, স্রেফ একজন অলরাউন্ডার? তিনি বল করতে পারেন, ব্যাট করতে পারেন এতটুকুই কি তাঁকে বোঝার জন্য যথেষ্ট? তাঁর সবচেয়ে বড় নিন্দুকও বোধহয় উত্তরে হ্যাঁ, বলতে পারবে না। সাকিব একজন অলরাউন্ডারের চেয়ে বেশি কিছু, সাকিব ব্যাটার আর বোলারের মিশ্রণের চেয়ে বেশি কিছু।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই বাঁ-হাতি যেভাবে সফলতার এভারেস্টে উঠে গিয়েছেন, সেটার বর্ণনা দেয়ার সাধ্য আছে ক’জনের। একটা মহাকাব্য লিখলেও বোধহয় তাঁর মাহাত্ম্য পুরোটা বলে শেষ করা যাবে না।

মাগুরার ছেলেটা কেন এতও বিশেষ, কেন এতও বন্দনা তাঁকে ঘিরে; এসব প্রশ্ন যতবার উঠে এসেছে আলোচনায় ততবার ক্রিকেটের ওই ডিম্বাকৃতির মাঠটা থেকে জবাব এসেছে। লাল-সবুজের জার্সিটাকে তিনি কেবল উপরে দিকেই নিয়েছেন।

বছর দশেক আগে, ২০১৫ সালের জানুয়ারিতেই তো বাংলাদেশের পতাকাটাকে টেনে সাকিব আল হাসান তুলে এনেছিলেন সবার শীর্ষে। ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার হয়েছিলেন তিনি; তাই তিন ফরম্যাটেই তালিকার এক নম্বরে জ্বলজ্বল করছিল সবুজের ভেতর লাল বৃত্তটা।

হালের বিরাট কোহলি থেকে শুরু করে কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন বা অন্য কেউ – আজ পর্যন্ত এমন ঘটনা দ্বিতীয়বার দেখা যায়নি। একই সাথে সবগুলো সংস্করণে একক আধিপত্য দেখা পারেননি কোন ক্রিকেটার। সাকিবকে অনন্য মানতে আর কোন দ্বিধা আছে আপনার?

পরিবেশ আর ফর্মের বিপরীতে দাঁড়িয়ে এই সাকিবই তো এনে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকিট, বিশ্বকাপে তাঁর অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে ভর করে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এ টুর্নামেন্টে জায়গা পায় বাংলাদেশ। অথচ ভাগ্যের পরিহাসে তিনিই নেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে – পনেরো জনের নাম কতশত বার এদিক থেকে ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়া শেষ, তবু চিরকালের চেনা নামটা খুঁজে পাওয়া গেল না।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের অভিষেকের পর এবারই প্রথম তাঁকে ছাড়া আইসিসির কোন ইভেন্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামক আকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী নক্ষত্রের পতন হলো, বাংলাদেশ নামক উপন্যাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। নীরবে, নিভৃতে তাঁকে বিদায় নিতে হলো।

তবু ফয়সাল নামের মানুষটাকে আপনি মুছে ফেলতে পারবেন না। তাঁকে মুছে ফেলতে চাইলে দেখবেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসই মুছে ফেলেছেন – তিনি থাকবেন ইতিহাসের প্রতিটা পাতায়, তিনি থাকবেন কোটি কিশোরের ভাবনায়।

Share via
Copy link