রহস্যময় এক ফ্র্যাঞ্চাইজি গ্রেট

০, ০, ০, ০, উইকেট, ০!

সংখ্যাগুলো দেখে হয়তো আপনি ভ্রু কুঁচকে উঠছেন, এ আর আলাদা করে বলার কি হলো। মেইডেন ওভার দিয়ে উইকেট পাবার ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে অহরহ। কিন্তু যখন আপনি শুনবেন ঘটনাটি টি-টোয়েন্টির তখন কিছুটা নড়েচড়ে বসবেন। আপনি হতবাক হয়ে যাবেন তখন, যখন শুনবেন ঘটনাটি ঘটেছে সুপার ওভারে।

হ্যাঁ, ভুল পড়েননি, সুপার ওভারে। ২০১৪ সালের সিপিএলে গায়ানা বনাম ত্রিনিদাদের ম্যাচে ঘটে এই অভূতপূর্ব ঘটনা। দুই ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান এবং রস টেলর পাঁচটি বলে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি, কেবল এলোপাথাড়ি ব্যাটই চালিয়েছেন। একমাত্র যে বলটি ব্যাটে লাগিয়েছিলেন, সেটিতে হয়েছেন আউট।

সেই বোলারটি ছিলেন সুনীল নারাইন; সুনীল ফিলিপ নারাইন।

১৯৮৮ সালের ২৬ মে, বৃহস্পতিবার। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর ছোট্ট দ্বীপ আরিমার বাসিন্দা শহীদ নারাইন আর ক্রিশ্চিনা নারাইনের সংসারে নতুন সদস্যের আগমন। সুনীল গাভাস্কারের ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ের পাঁড় ভক্ত শহীদ তার নামের সাথে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখলেন সুনীল নারাইন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে কুইন্স পার্ক স্যাভানাতে যেতেন নারাইন। খেলা দেখতেন, সেখানে অনুশীলনরত ক্রিকেটারেদের বিভিন্ন শৈলী দেখে নিজে চেষ্টা করতেন তেমনটা করার। এভাবেই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয় তার।

সাত বছর বয়সে ভর্তি হন আরিমা বয়েস স্কুলে। সেখানেই কোচ তারেনডাথ স্যামির অধীনে শুরু হয় তার ক্রিকেট যাত্রা। ছোটবেলা থেকেই লারার ভক্ত নারাইন লারার মতোই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছিলেন। বোলিং ছিল তখন দ্বিতীয় পছন্দ। স্কুল ক্রিকেটে ভালো ব্যাটিং করার সুবাদেই ২০০৫ সালে ডাক পান ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনুর্ধ্ব-১৯ দলে । সেখানে ক্যাম্পে গিয়েই মূলত শৈল্পিক অফস্পিনের প্রেমে পড়া।

বানার্ড জুলিয়েন এবং রোল্যান্ড সাম্পাথের অধীনে শুরু করেন অফস্পিন রপ্ত করার অনুশীলন। ২০০৬ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পান তিনি। বিশ্বকাপে আহামরি ভালো করতে পারেননি নারাইন। ফলে বাদ পড়ে যান ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগো দল থেকে। অন্যদিকে, ত্রিনিদাদে তখন তরুণ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা।

জেসন মোহাম্মদ, কাইরেন পোলার্ড, ড্যারেন ব্রাভো, আদ্রিয়ান বারাথ, ডিনেশ রামডিন, লেন্ডল সিমন্সদের মতো প্রতিভাবানরা তখন মাঠ কাপাচ্ছেন ত্রিনিদাদের হয়ে। এমতাবস্থায় ক্রিকেট ছেড়ে দেবার কথা ভাবেন নারাইন। কিন্তু নারাইনের পিতা শহীদ এসময় পাশে দাঁড়ান নারাইন। মূলত পিতার অনুপ্রেরণাতেই আবার নতুন উদ্যমে ক্রিকেটে মনোযোগী হন নারাইন।

অবশেষে ২০০৯ সালে ত্রিনিদাদের দল ঘোষণার ঠিক আগ মূহূর্তে ট্রায়াল ম্যাচে এক ইনিংসে ৫৫ রানে ১০উইকেট নিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন নারাইন। সুযোগ পেয়ে যান ত্রিনিদাদ দলে। ফেব্রুয়ারিতে আঞ্চলিক চার দিনের ম্যাচে অভিষেক ঘটে নারাইনের। কিন্তু অভিষেকটা সুখকর হয়নি, সে ম্যাচে মাত্র এক উইকেট পান। ২০১১ সালে ক্যারিবিয়ান টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেন নারাইন। কিন্তু সে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলে আর বল করতে পারেননি তিনি।

তবে, পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে বেশ ভালোই বল করেন এবং ১৩.৪০ গড়ে ৫ উইকেট নিয়ে টোবাগোকে চ্যাম্পিয়ন করান। সে বছরেরই অক্টোবরে লিস্ট এ ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। কিন্ত সে ম্যাচে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। নারাইন প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন ২০১১ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টির মাধ্যমে। এই টুর্নামেন্টে ১৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন তিনি।

এই পারফরম্যান্সের সুবাদেই ২০১২ আইপিএল মৌসুমে প্রায় ৭কোটি রুপিতে তাকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। তাদের আস্থার প্রতিদানও দেন নারাইন দারুণভাবে, ২৪ উইকেট নিয়ে সেবারের আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হন তিনি এবং কলকাতাও তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপা জিতে নেয় তার হাত ধরে।

এর আগেই ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে নারাইনের। অভিষেক ম্যাচেই বিরাট কোহলী এবং রবিচন্দন অশ্বিনের উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয়দের ১৬ রানের জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওডিয়াই সিরিজে ১১ উইকেট নিয়ে হন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। সে বছরেরই মার্চে অজিদের বিপক্ষে সুযোগ পান টি-টোয়েন্টি দলে।

২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। কেমার রোচের ইনজুরির সুবাদে সে বছরেরই জুনে সুযোগ পেয়ে যান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে। নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টেই কিউইদের বিপক্ষে তুলে নেন আট উইকেট। নিজের দুরন্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ২০১২ সালে আইসিসি বর্ষসেরা ওডিয়াই এবং টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পান তিনি। ২০১৪ সালে সাঈদ আজমলকে পেছনে ফেলে টি-টোয়েন্টিতে আইসিসি বোলিং ্যাংকিংয়ে এক নম্বরে উঠে আসেন তিনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link