‘সাকিবের যত্ন নিতে হবে’

তাঁর পরিচয় দিতে যাওয়া বৃথা। খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছেন। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও দেখছেন। সাকিবের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক কোচ-খেলোয়াড় হিসেবে। কলকাতা নাইট রাইডার্সে বোলিং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ওয়াসিম আকরাম। আর এই বহুমুখী অভিজ্ঞতা থেকে সাকিব সম্পর্কে ২০১৪ সালে বলেছিলেন কিংবদন্তি এই বোলার, যেটা প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে।

প্রথমে একটু সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে বলেন। সাকিব আসলে কতো ভালো ক্রিকেটার?

বাংলাদেশের প্রেক্ষপটে বলি আগে। আমি বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং বাংলাদেশে অনেক ক্রিকেট খেলেছি। বাংলাদেশে সবসময়ই কিছু ভালো খেলোয়াড় ছিল। আমি আকরামের কথা বলতে পারি। বুলবুল অবশ্যই অসাধারণ একজন ব্যাটসম্যান ছিল। রফিকও অসাধারণ ছিল। আমার মতে বাংলাদেশ থেকে বেরিয়ে আসা সর্বকালের সেরা প্রতিভা হল সাকিব আল হাসান। অলরাউন্ডার হিসেবে তার যে দক্ষতা, যোগ্যতা, তাতে সে যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ম্যাচ জিতিয়ে আনার ক্ষমতা রাখে। এটাই আসলে একজন গ্রেটের বৈশিষ্ট্য। সাকিব যে কোনো ফরম্যাটে সমান কার্যকর এবং ম্যাচ উইনার একজন খেলোয়াড়। টেস্টে দেখুন। ও ১৪০-এর ওপরে ইনিংস খেলেছে। ওয়ানডেতে অনেক সেঞ্চুরি করেছে। এই বয়সে একজন অলরাউন্ডার যখন ৩৫-৩৬ এভারেজ নিয়ে ব্যাট করে, তাতেই বুঝতে পারেন তার যোগ্যতাটা। আবার বোলিংটা দেখুন। ওয়ানডে-টেস্ট দু জায়গাতেই ১০০-এর ওপরে উইকেট।

সাকিব কতোদূর যেতে পারবে?

ওর বয়স মনে হয় ২৬। আমি প্রথমেই বলবো, বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডকে সাকিবের ব্যাপারে আরও সতর্ক এবং যতœশীল হতে হবে। আমার মতে সে এখনই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার। এখান থেকে তাকে গ্রেটরে কাতারে যেতে গেলে সমর্থনটা দরকার। একটা দলের জন্য সে অমুল্য সম্পদ। সেভাবে দেখলেও ওকে যত্ন নিতে হবে। আমি মনে করি, ওর মধ্যে ওই গ্রেটদের তালিকায় যাওয়ার ব্যাপারটা আছে।

আপনি কেকেআরে তার কোচ ছিলেন। ছাত্র হিসেবে কেমন সে?

ছাত্র? আগে বলি, অসাধারণ মানুষ। খুব ভালো টিম ম্যান। নিজের খেলা নিয়ে পরিশ্রম করে খুব। অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দিয়েই দলের জন্য কিছু করতে চেষ্টা করে। আমি ওর সঙ্গে কাজ করাটা খুব উপভোগ করি। ও কথা শোনে, শুনতে পছন্দ করে। আমার মনে হয়েছে, ওর মধ্যে ওই বিশ্বসেরা হওয়ার লক্ষটা আছে। গত বেশ কিছুদিন দেখা হয় না। আশা করি, সবকিছু আগের মতোই আছে।

কলম্বোতে আপনি একদিন বলছিলেন, সাকিবেরই অধিনায়ক থাকা উচিত বাংলাদেশের।

আমি জানি না, বাংলাদেশের ক্রিকেটে কী ঘটছে! আমাকে যদি বলেন, আমি এখনই সাকিবকে অধিনায়ক করে দেব। অবশ্যই সে সেরা পছন্দ। তবে এটা ঠিক যে, এখনকার উইকেটকিপার ছেলেটি ভালোই করছে (মুশফিকুর রহিম)। অন্তত ওর চেষ্টাটা আ,ে রানও আচ্ছে। তবে অধিনায়কের ব্যাপারটা ঠিক এরকম নয়। এখানে লম্বা দৌড়ে, ধারাবাহিকভাবে চিন্তা করতে হয়। আমি তখন বলেছিলাম, যেসব যুক্তিতে সাকিবকে সরানো হয়েছে! অবশ্যই কোনো কারণ ছিল না। তবে এই ছেলেটা যেহেতু ভালো করছে, তাই এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। সাকিবকে আমি বলবো, নিজের খেলাটায় মন দিতে। তাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন হতে হবে।

ওয়াসিম ভাই, র‌্যাংকিং বলে সাকিব এক নম্বর অলরাউন্ডার। কিন্তু ধরুন ওয়াটসন, হাফিজ এদের মাথায় রেখে আপনি কী আসলেই সাকিবকে এক নম্বর বলবেন?

টি-টোয়েন্টিতে তো অবশ্যই। টেস্ট বা ওয়ানডেতেও সম্ভবত তাই। ও ব্যাটিং করে ম্যাচ জেতাতে পারে, বোলিং করে পারে; ট্রিমেন্ডাস একজন ফিল্ডার। আমার মনে হয়, ওর টানা একটা কাউন্টি সিজন খেলা দরকার। ওকে আরও পরিণত অলরাউন্ডার করে তুলবে এটা।

প্রথম প্রকাশ: সাকিব আল হাসান, আপন চোখে ভিন্ন চোখে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link