২০১৩ মৌসুমের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। ৫১ তম ম্যাচ। মোহালিতে মুখোমুখি ব্যাঙ্গালোর এবং পাঞ্জাব। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে গেইল এবং ডি ভিলিয়ার্সের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে আরসিবি সংগ্রহ করে ১৯০ রানের বিশাল সংগ্রহ। জবাব দিতে নেমে নিজেদের ইনিংসের প্রথমার্ধ শেষে পাঞ্জাবের সংগ্রহ ছিল চার উইকেটে ৬৪।
কিন্তু অন্যরকম ভেবে রেখেছিলেন সে মৌসুমেই দলে আসা পাঞ্জাবের এক প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। আটটি চার এবং সাতটি ছয়ে ৩৮ বলে ১০১ রান করে যখন মাঠ ছাড়লেন ততক্ষণে পাঞ্জাব ম্যাচ জিতে গেছে দুই ওভার হাতে রেখেই। সেই ব্যাটসম্যানটি ছিলেন ডেভিড মিলার। সমর্থকদের কাছে যিনি ‘কিলার মিলার’ হিসেবেই পরিচিত।
১৯৮৯ সালের ১০জুন দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে জন্মগ্রহণ করেন ডেভিড মিলার। মিলার ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট অনুরাগী ছিলেন। ২০০৭-০৮ মৌসুমে ডলফিন্সের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। নিজের প্রথম ইনিংসেই ৫১ রান করেন তিনি। সে মৌসুমেই ঘরোয়া একদিনের টুর্নামেন্টে অভিষেক হয় তার। যদিও পুরো টুর্নামেন্টটা কাটে তার ভুলে যাবার মতোই, মাত্র ১৩ গড়ে রান করেন।
২০১০ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা এ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরের দলে ডাক পান। সে সফরে ভালো করার কারণেই সে বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দলে ডাক পান। জ্যাক ক্যালিসের অনুপস্থিতিতে অ্যান্টিগাতে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। টি-টোয়েন্টি অভিষেকের দুদিন পরেই ওডিয়াইতে অভিষেক হয় তার। নিজের প্রথম ম্যাচেই ২৩ রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন। সে বছরের অক্টোবরেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পান তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি পান মিলার। দারুণ সব শটে বলকে মাঠছাড়া করতে তার জুড়ি মেলা ভার। বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবে বোলারদের ত্রাস ছিলেন তিনি। এছাড়া দলের বিপদের সময় সবসমই হেসেছে মিলারের ব্যাট।
২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে ররি ক্লেইনভেল্টের সাথে ৯৫ রানের জুটি গড়েন তিনি। এছাড়াও শ্রীলংকার বিপক্ষে ৭২ বলে অপরাজিত ৯৫ রানের ইনিংস খেলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
দুর্দান্ত পারফরমেন্সের দরুণ সে বছরের আইপিএলে ডাক পান তিনি। রীতিমতো যুদ্ধজয়ের মতো করে ৬ কোটি রুপিতে তাকে দলে ভেড়ায় পাঞ্জাব। দুর্দান্ত পারফরমেন্স করে নিজের দামের প্রতি সুবিচার করেন তিনি।পাঞ্জাবের ঘরের ছেলে হয়েই ছিলেন গত সাত মৌসুম। অবশেষে ২০২০ সালে পাঞ্জাব তাকে ছেড়ে দিলে তাকে দলে ভেড়ায় রাজস্থান।
২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ছয় নম্বরে ব্যাট করে ১৩৯ স্ট্রাইকরেট এবং প্রায় ৬৫ গড়ে ৩২৪ রান সংগ্রহ করেন তিনি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে দলকে ভালো সংগ্রহ এনে দেন তিনি।
যদিও পরবর্তীতে ফিল্ডারদের ব্যর্থতা এবং গ্রান্ট এলিয়টের অতিমানবীয় ইনিংসে ম্যাচটি হেরে যায় প্রোটিয়ারা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার মাধ্যমে তিনি কাইরেন পোলার্ড এবং রোহিত শর্মার পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে কোনো টেস্ট না খেলেই ১০০ ওয়ানডে খেলে ফেলেন।
সে সিরিজেরই দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ানে পরিণত হন। সে ম্যাচে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হাঁকান তিনি। সে ম্যাচেই তিনি পঞ্চম প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার রানের মাইলফলক অর্জন করেন।
২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে ফাফ ডু প্লেসিস সরে দাঁড়ালে ডেভিড মিলার অধিনায়ক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন। এখনো পর্যন্ত ১৩৪ টি একদিনের ম্যাচ খেলে ১৬ অর্ধশতক এবং ৫ শতকে ৪১.১২ গড়ে ৩,৩৩১ রান সংগ্রহ করেন তিনি। সর্বোচ্চ সংগ্রহ ১৩৯। ৮১ টি টি-টোয়েন্টি খেলে ৩১.১২ গড়ে ১,৫২৫ রান করেন তিনি। এছাড়াও সময়ের অন্যতম সেরা ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন মিলার।