দ্বিতীয় তালিকার তিনজন ফাস্ট বোলারই সর্বকালের সেরার তালিকায় নাম তোলার প্রবল দাবীদার – কার্টলি অ্যামব্রোস, ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনুস। তিনজনেরই সময়কাল গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক। এদের মধ্যে আক্রাম এবং ওয়াকার ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সর্বকালের উইকেট-শিকারির লিস্টে যথাক্রমে এক এবং দুই নম্বরে।
তবে আমরা আরম্ভ করব ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও এক দৈত্যাকার বোলারকে নিয়ে। ছয় ফুট সাত ইঞ্চির এই বোলারের নিক নেম বেশ মজার – ‘লিটল বার্ড’। জোয়েল গার্নারের চেয়ে এক ইঞ্চি হাইট কম হওয়ার পরিনাম।
এমব্রজের সময়কাল ১৯৯২। গার্নারেরই মতো এমব্রজও অস্বাভাবিক উচ্চতা থেকে অত্যন্ত অসুবিধেজনক লেন্থ থেকে বাউন্স করাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তবে গতিতে তিনি গার্নারের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকায় টেস্ট বোলার হিসেবে তিনি তার রোল মডেলকেও ছাড়িয়ে যান। একদিনের ক্রিকেটে তার ইকনমি রেট বেশ নজর কাড়ার মতো – ৩.৪৮।
সময়ের সাথে রানস্ফীতিকে মাথায় রাখলে গার্নারের সঙ্গে অ্যামব্রোসের ইকনমি রেট তুলনিয়। ১৭৬ ম্যাচে ২৪.১৩ গড়ে ২২৫ উইকেট নিয়েছেন অ্যামব্রোস। আইসিসির তালিকায় তিনি বিশ্বের এক নাম্বার ওয়ানডে বোলার ছিলেন আট বছর ধরে। সর্বাধিক পয়েন্ট ৮৭৭। নাম্বারগুলি যথেষ্ট ইম্প্রেসিভ তবুও তা এমব্রজের বোলিঙের ভয়াবহতা সম্পূর্ণভাবে বোঝাতে অক্ষম।
তবে অ্যামব্রোসের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন ‘সুলতান অফ স্যুইং’ – ৫০২ শিকারের অধিকারী ওয়াসিম আকরাম। গড় – ২৩.৫৩, ইকনমি ৩.৯। অর্থাৎ, স্ট্রাইক রেট এবং গড়ে আকরাম এগিয়ে, ইকোনমিতে অ্যামব্রোস।
আকরামের সময়কাল ১৯৯৪। এই তালিকার সব বোলারদের মধ্যে আকরামের বৈচিত্র সবচেয়ে বেশি। স্যুইং, কাটার, গতি, বাউন্সার, রিভার্স স্যুইং, গতির পরিবর্তন – একজন ফাস্ট বোলারের যা যা অস্ত্রের প্রয়োজন তার সবই আক্রামের ঝুলিতে ছিল। এবং বেশ উঁচুমানের। এবং সেই সঙ্গে তার বাঁ হাতি হওয়াটা ব্যাটসম্যানদের পক্ষে বাড়তি উদ্বেগের কারণ ছিল।
টেস্টের মতোই একদিনের ক্রিকেটেও আকরামের উইকেটের মধ্যে টেল এন্ডারদের আধিক্য রয়েছে – মোট উইকেটের ২৫.৩% উইকেট উনি ৮-১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানদের নিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে অন্যদের থেকে তফাৎ সামান্যই – হ্যাডলির ক্ষেত্রে এই হার ২৪.১, কপিলের ২২.১। আকরাম সর্বাধিক যাদের আউট করেছেন তাদের মধ্যে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের সংখ্যা যথেষ্ট থাকায় এই ক্রাইটেরিয়ায় এক দিনের ক্রিকেটে পাশ করে যাচ্ছেন আকরাম।
আইসিসির তালিকায় মোট ছয় বছর বিশ্বের এক নাম্বার একদিনের বোলার ছিলেন আকরাম। তার সর্বাধিক পয়েন্ট খুব একটা আহামরি নয় – ৮৫১। তবে ৩৫৬ ম্যাচ ধরে নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্যে এক্সট্রা পয়েন্ট দিতেই হবে আকরামকে।
সব মিলিয়ে আকরাম – গার্নার এবং অ্যামব্রোসের সঙ্গেই সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারের দৌড়ে থাকবেন।
একদিনের ম্যাচে ওয়াকার ইউনুসের পারফর্মেন্স যথেষ্ট সম্ভ্রমের। মাত্র ২৬২ ম্যাচে ৪১৬ উইকেট নেওয়া ওয়াকারের ম্যাচ প্রতি উইকেট এই লিস্টের মধ্যে সর্বাধিক। তার স্ট্রাইক রেটও অন্যান্যদের চেয়ে সবচেয়ে কম – প্রতি ৩০.৫২ বলে একটা করে উইকেট নিয়েছেন ওয়াকার যা এক কথায় অকল্পনীয়। উইকেট প্রতি ২৩.৮৪ রান দিয়েছেন ওয়াকার, এই ক্ষেত্রে আকরাম আর তাঁর মধ্যে পার্থক্য সামান্যই।
দুরন্ত গতি আর স্যুইং – বিশেষ করে রিভার্স স্যুইং – ছিল ওয়াকারের বোলিঙের মূল বৈশিষ্ট। আর সেই সঙ্গে মারাত্মক ইয়র্কার। স্লগ ওভারে ওয়াসিম আর ওয়াকারের বলে রান তোলার মতো দুরহ কাজ একদিনের ক্রিকেটে খুব বেশি নেই। প্রায়ই দুজনের যৌথ আক্রমনে নাভিশ্বাস উঠত ব্যাটসম্যানদের, হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ত ব্যাটিং লাইন আপ।
তবে যে জায়গায় ওয়াকার পিছিয়ে পড়েন সেটা হচ্ছে ইকোনমি রেটে – ওভার প্রতি ৪.৬৯ রান দিয়েছেন ওয়াকার। অথচ তার সময়কাল (১৯৯৬) আকরাম বা অ্যামব্রোসের থেকে খুব বেশি পরে নয়। মূলত এইজন্যেই ওয়াকার কোনদিন আইসিসির একদিনের বোলারদের তালিকায় এক নাম্বার স্থান অধিকার করতে সমর্থ হন নি – দুই নাম্বার অব্দি তিনি উঠেছিলেন।
তবে ওয়াকার মূলত স্ট্রাইক বোলার – তার প্রধান কাজ ছিল উইকেট নেওয়া। আক্রমণাত্মক বোলারদের একটু বেশি রান দেওয়া অ্যালাউড। স্ট্রাইক রেট ছাড়াও একটা ক্ষেত্রে ওয়াকার অন্য সবাইকে অনেকটাই পেছনে ফেলে দিয়েছেন। এই বিষয়ে শেষে আলোচনা করব।
তবু সব মিলিয়ে সর্বসেরার তালিকায় ওয়াকারকে রাখা গেল না মূলত রান বিতরণের ক্ষেত্রে কিঞ্চিৎ মুক্তহস্ত হওয়ায়। সুতরাং গার্নারের সঙ্গে এই প্রজন্ম থেকে অ্যামব্রাস এবং আকরাম যোগ দেবেন আমাদের এলিট তালিকায়।