এর আগে যতগুলো ফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড – তাঁর সবগুলোতেই তাঁদের থেকে এগিয়ে ছিল প্রতিপক্ষরা। তবে, এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ভারতের সাথে সমতাতেই আছে ব্ল্যাক ক্যাপরা। শুক্রবার পর্দা উঠছে বহুল প্রতিক্ষিত আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের। ইংল্যান্ডের সাউদহ্যাম্পটনের রোজ বোলে মুখোমুখি হবে বিশ্ব ক্রিকেটের দুই পরাশক্তি ভারত ও নিউজিল্যান্ড।
কন্ডিশন কিংবা সাম্প্রতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পারফরম্যান্স বিবেচনায় খানিকটা এগিয়েই থাকবে কিউইরা। ইংলিশ কন্ডিশনের সাথে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনের কিছুটা মিল তো আছেই তার উপর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের আগে ইংলিশদের বিপক্ষে তাদের মাটিতেই সিরিজ জয় কিউইদের বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাবে।
অপরদিকে, ভারত সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ জিতলেও বেশ কয়েকজন নিয়মিত মুখ ছিলেন ইনজুরিতে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তাই কন্ডিশন আর প্লেয়ারদের প্রস্তুতির দিক দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে থাকবে ভারত। তবে শক্তিমত্তায় দুইদলই কেউ কারোর চেয়ে কম নয়!
ম্যাচ শুরুর আগে ভারতের একাদশ নিয়ে যেমন জল্পনা-কল্পনা আছে, তেমনি নিউজিল্যান্ডের একাদশ কেমন হবে? – সেই নিয়েও চলছে আলোচনা।
এখন পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচটি টেস্ট সিরিজে সাত জয় আর চার হারে কিউইদের জয়ের হার ৭০%! ব্যাটিং লাইনআপে অভিজ্ঞ টম লাথাম, হেনরি নিকোলসরা আছেন ফর্মে। নতুন অভিষিক্ত ডেভন কনওয়েও ইংলিশদের বিপক্ষে দাপুটে ব্যাটিং দেখিয়ে নিজের জায়গাটা পাঁকা করে নিয়েছেন ওপেনিংয়ে৷ টম লাথামের সাথে তাকেই দেখা যাবে ওপেনিং জুটিতে।
এরপর ইনজুরি থেকে ফেরা নিয়মিত অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন থাকবেন। যিনি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কিউইদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন। তবে তার সাম্প্রতিক ফর্ম কিছুটা চিন্তার বিষয়, তার উপর ইনজুরি সমস্যা! সব মিলিয়ে উইলিয়ামসন খুব যে স্বস্তিতে আছে তা একেবারেই নয়। তবে ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে এই কিউই অধিনায়ক নিজের অভিজ্ঞতার সবটুকুই উজাড় করে দিতে চাইবেন।
৯ ম্যাচে প্রায় ৫৯ গড়ে ৮১৭ রান করেছেন তিনি! এরপর আছেন আরেক অভিজ্ঞ রস টেইলর! টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে মাত্র ৩১ গড়ে ব্যাট করলেও তার অভিজ্ঞতা ফাইনালে কিউইদের বেশ কাজে দিবে৷ ১১ ম্যাচে তিন ফিফটিতে ৪৬৯ রান করলেও দেখা পাননি কোনো সেঞ্চুরির! তবু মিডল অর্ডারে কিউইদের মূল ভরসা হিসেবে থাকবেন টেইলর।
পাঁচে সম্ভাব্য দেখা যাবে তরুন উইল ইয়ঙ এবং ছয়ে ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বিজে ওয়াটলিং। এই জায়গাটায় মূলত নিউজিল্যান্ডের চিন্তার রেখা কপালে কিছুটা ভাজ কাটতে পারে! উইল ইয়ঙ তরুন খেলোয়াড়! এখন পর্যন্ত ২ টেস্টে করেছেন ৪৮ রান। ফাইনালের প্রেশার কতটা সামলাতে পারবেন সেটা সময়ই বলে দিবে। বিজে ওয়াটলিং ১০ ম্যাচে ২৯ গড়ে করেছেন ৪১৭ রান, আছে এক সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটি।
তারপর সাত নম্বরে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের। শেষদিকে দ্রুত রান তুলার পাশাপাশি বল হাতে উইকেটও নিতে পারেন তিনি। গ্র্যান্ডহোমের স্থলে অবশ্য স্পিনার ইজাজ প্যাটেলকেও বিবেচনা করতে পারে কিউরা! তবে ব্যাটিং ডেপথ এবং উইকেটে পেস সহায়ক ভাবনায় শেষ পর্যন্ত হয়তো গ্র্যান্ডহোমই একাদশে টিকে যাবেন।
এরপর পেস বিভাগের চার অস্ত্র! জেমিসন, সাউদি, ওয়াগনার, বোল্ট। জেমিসন ব্যাট হাতেও বেশ দারুণ করছেন, ওয়াগনারও শেষ দিকে রান তোলায় পারদর্শী। সাউদি এখন পর্যন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ৫১ উইকেট নিয়ে কিউইদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি! সাথে ট্রেন্ট বোল্ট, জেমিসন ও ওয়াগনাররা তো আছেনই গতি, বাউন্স আর স্যুইংয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। সব মিলিয়ে বোলিং বিভাগেও ভারতের চেয়ে এগিয়েই থাকবে ‘ব্ল্যাকক্যাপ্সরা’।
মূলত নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং গভীরতা বেশ দৃঢ়। সেই সাথে চার পেসারই আছে দূর্দান্ত ফর্মে। ইংল্যান্ডের উইকেট থেকেও তারা বেশ সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন। একই কন্ডিশনে সম্প্রতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়। সব মিলিয়ে বেশ দারুন ফর্মে আছে কিউইরা। এছাড়া মোটামুটি এই একাদশই আগামিকালের ম্যাচে মাঠে নামছে প্রায় নিশ্চিত ভাবে বলাই যায়।
- টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ: টম ল্যাথাম (সহ অধিনায়ক), ডেভন কনওয়ে, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), রস টেইলর, উইল ইয়ঙ, বিজে ওয়াটলিং (উইকেটরক্ষক), কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, কাইল জেমিসন, টিম সাউদি, নিল ওয়াগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট।