‘আদরের’ ব্যাটিং লাইনআপই নষ্টের গোড়া

কেন উইলিয়ামসন ও রস টেলরের অসাধারণ এক জুটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ঘরে তুলেছে নিউজিল্যান্ড। তবে ফাইনাল ম্যাচে হেরে যাওয়া ভারত টেস্ট ক্রিকেটে কতটা শক্তিশালী তা নিয়েও কোনো সংশয় নেই। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সবচেয়ে বেশি ১২ টি ম্যাচ জিতে ফাইনাল খেলতে আসা ভারত শেষ ম্যাচে কেনো খেই হারালো সেটিও এক বড় প্রশ্ন।

ছোট করে উত্তর দিতে হলে বলতে হয় ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতা। তবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালি ও ব্যালেন্স ব্যাটিং লাইন আপ বড় ম্যাচে ব্যর্থ হওয়াটা ক্রিকেটীয় অপরাধ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচটা বাদ দিলে সবচেয়ে সফল দল ভারত। সর্বোচ্চ ৫২০ পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে খেলতে এসেছিল দলটি। ফলে ফাইনালের আগে অধিকাংশ ক্রিকেট বোদ্ধারই বাজি ছিল ভারত।

ভারতের প্রতি এই ভরসার কারণ গত কয়েক বছরে টেস্ট ক্রিকেটে দেশটি যেনো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে প্রচন্ড শক্তিশালি ব্যাটিং লাইন আপও ছিল ভারতে আস্থা রাখার বড় কারণ। তবে সেই ব্যাটিং বিপর্যয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হারতো হলো ভারতকে।

এখন পর্যন্ত তিনটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নেতৃত্ব দেয়া কোহলি তাই একবারও পেলেন না শিরোপার স্বাদ। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনবারই ভারত ব্যর্থ হয়েছে তাঁদের ব্যাটিং এর কারণে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত।

২০১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও কলাপ্স করেছিল টপ অর্ডার। ফলে নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৩৯ রানের টার্গেটও ছুতে পারেনি ভারত। এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ২১৭ ও ১৭০ রানে অল আউট হয়েছে বিরাট কোহলিরা।

অবশ্যই কন্ডিশন ভারতের পক্ষে ছিলনা। মেঘে ঢাকা আকাশে ব্যাট করতে নামাটা একেবারেই সহজ কাজ ছিল না। এছাড়া ইংল্যান্ডে এসে তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই ফাইনাল খেলতে নামার কথাও বলা যেতে পারে। এছাড়া আইপিএলের পর কোনো টেস্ট না খেলেই ফাইনাল খেলতে আসাটা একটা কারন হতে পারে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তো এসব বাঁধা পেরোতেই হয়।

ফলে বড় ম্যাচে হারের ভারটা নিতে হচ্ছে পূজারা, রাহানে ও কোহলিকেই। টেস্টে ভারতের সবচেয়ে পরীক্ষিত তিন পারফর্মার। তিনজনই ব্যর্থ হয়েছেন সাউদাম্পটনে। চেতেশ্বর পূজারা টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানদের একজন। লম্বা সময় ক্রিজে টিকে থাকার জন্য কত প্রশংসিতই না হয়েছেন। তবে ক্রিকেটে ম্যাচের পরিস্থিতি, দলের প্রয়োজন বোঝাটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম ইনিংসে এই ব্যাটসম্যান ৮০ বলে করেছেন ১৫ রান। এই ধরনের পিচে টিকে থাকা যেহেতু কঠিন ফলে ব্যাটসম্যানদের উচিত বাজে বলগুলো থেকে যতটা সম্ভব রান বের করা। যেটা উইলিয়ামসন ও টেলর করেছেন। তবে পূজারা সেই ৮০ বলে অনেক বাজে বল পেয়েও শুধু টিকে থাকার চেষ্টাটাই করে গিয়েছেন। রানের চাকা সচল না থাকায় চাপটা এসেছে ভারতের উপরেই।

ওদিকে আজিঙ্কা রাহানে যথাক্রমে ৪৯ ও ১৫ রান করে আউট হয়েছেন। তারচেয়ে বড় কথা তিনি কীভাবে আউট হয়েছেন সেটা। দুই ইনিংসেই তাঁর আউটে ধরণ নিয়ে আছে বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এত বড় ম্যাচে তাঁর মত অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের এভাবে আউট হওটাও তো বিশাল অপরাধই বটে।

বিরাট কোহলি অনেকদিন ধরেই টেস্ট ক্রিকেটে বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। লম্বা সময় ধরে সেঞ্চুরিও নেই কোহলির ব্যাটে। তবে বড় মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারদের থেকে আশাটাও বেশি থাকে। কোহলিকে নিয়ে ফাইনালে বড় আশায় বুক বেধেছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা।

তবে, ফাইনালেও তাঁর অফ ফর্মের ধারাবাহিকতা বজা রেখেছেন  কোহলি। এই পিচে সেঞ্চুরি পাওয়াটা কঠিন তবে একটা হাফ সেঞ্চুরি তো কোহলির ব্যাট থেকে আস্তেই পারতো। তিনি দুই ইনিংসে যথাক্রমে আউট হয়েছেন ৪৪ ও ১৩ রানে।

ফলে বড় ম্যাচে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ ছিল না ভারতের। আর ভারতের ব্যাটিং লাইন আপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যাটসম্যানই যেদিন ক্লিক করতে পারেননা সেদিন তো জয় পাওয়াটা সত্যিই কঠিন হয়ে যায়। এদিকে ঋষাভ পান্তের আউট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে দলে তাঁর রোল কিন্তু এটাই ছিল।

তিনি যতক্ষণ থাকবেন নিজের মত খেলে যাবেন এমন স্বাধীনতা টিম ম্যানেজম্যান্টই তাঁকে দিয়েছে। ফলে তাঁকে খুব একটা দোষ দেয়া যাচ্ছেনা। তবুও সময়ের সাথে সাথে আরো দায়িত্ব নিতে শিখবেন সেই আশা তো করাই যায়।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link