জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার জন্য জন্য ভারতীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের সামর্থ্য প্রমাণ করার একটি বিরাট মঞ্চ হল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। বরাবরই নিজস্ব প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে নির্বাচকদের নজরে আসতে তরুণ ক্রিকেটারদের বেশ সাহায্য করে আসছে আইপিএল।
যদিও, আইপিএলের মতো লম্বা সূচির টুর্নামেন্টে বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন ‘এক মৌসুমের বিস্ময়’ এর সাক্ষীও হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টটি।
আইপিএলের কোনো এক মৌসুমে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে সকল আলো কেড়ে পরবর্তী মৌসুমগুলোতে ব্যর্থতার অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাঁদের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি একাদশ সাজানো হচ্ছে আজ।
- ওপেনার: স্বপ্নীল আস্নোদকার ও মনবিন্দর বিসলা (উইকেটরক্ষক)
২০০৮ সালে আইপিএলের প্রথম আসরে রাজস্থান রয়্যালসের শিরোপা জয়ের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ভক্তদের ভূয়সী প্রশংসায় সিক্ত হন শেন ওয়ার্ন, সোহেল তানভীর ও ইউসুফ পাঠান। তবে পর্দার আড়ালে থেকে যায় যাঁর অবদান তিনি স্বপ্নীল আস্নোদকার। ৯ ম্যাচে ৩৪.৫৫ গড়ে ৩১১ রান তোলা এই ক্রিকেটার ছিলেন রাজস্থানের ওপেনিংয়ে এক নির্ভরতার প্রতীক। যদিও পরবর্তী আসরে প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটাতে ব্যর্থ হন স্বপ্নীল। ২০০৯ আইপিএলে ৯ ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ মোটে ৯৮ রান।
অন্যদিকে আইপিএলের ছয়টি আসরে খেলা মানবিন্দর বিসলা স্বপ্নীলের মতো ‘এক মৌসুমের বিস্ময়’ না হলেও পারফরম্যান্সের বিচারে ধারাবাহিক ছিলেন না। ব্যাট হাতে তাঁর সেরা সময়টি কাটে ২০১২ আইপিএলে যেখানে ৭ ম্যাচে তিনি সংগ্রহ করেন ২১৩ রান। সে আসরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটি তিনি খেলেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে এসে। ফাইনালে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রথম শিরোপা জয়ে অবদান রাখেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
- পল চন্দ্রশেখর ভালথাটি
তিনি ছিলেন সেসব ক্রিকেটারদের একজন যিনি আইপিএলের মাধ্যমে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ভালথাটি প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন ২০১১ আইপিএলে পারফর্ম করে। ওই আসরে ১৩৬.৯৮ স্ট্রাইকরেটে ১৪ ম্যাচে তিনি সংগ্রহ করেন ৪৬৩ রান।
মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৬৩ বলে খেলা ১২০ রানের ইনিংসটি ছিল ভালথাটির ক্যারিয়ারসেরা। তাঁর এই ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ১৮৯ রানের বড় লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জয় পায় কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। দুর্ভাগ্যবশত ২০১১ সালের পর ইনজুরির কারণে তাঁর ক্যারিয়ারে ছেদ পড়ে এবং ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যান ভালথাটি।
- তিরুমলসেত্তি সুমন
তিরুমলসেত্তি সুমন ‘এক মৌসুমের বিস্ময়’ ছিলেন না। তবে টানা দুই আসরে পারফর্ম করেও ধীরে ধীরে তিনি হারিয়ে যান।
২০০৯ সালের আইপিএল চ্যাম্পিয়ন ডেকান চার্জার্সের হয়ে ১২ ম্যাচে ২৩৭ রান সংগ্রহ করেন সুমন। পরের আসরে ৩৪.১১ গড়ে ১৪ ম্যাচে ৩০৭ রান তুলেন তিনি যেখানে ৫৭ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের একটি ইনিংস তাঁর মেরে খেলার সক্ষমতার পরিচয় বহন করে। যদিও পরবর্তী মৌসুমগুলোতে বলার মতো কিছুই করে দেখাতে পারেননি তিনি।
- সৌরভ তিওয়ারি (অধিনায়ক)
লম্বা চুলের অধিকারী সৌরভ তিওয়ারিকে অনেকটা ধোনির মতো দেখাত। যদিও মাঠের পারফরম্যান্সে এই সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের প্রতিচ্ছবি হতে পারেননি তিনি।
২০১০ আইপিএলে প্রচণ্ড মারকুটে ধরণে খেলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন সৌরভ। পুরো আসরে ১৬ ম্যাচ খেলে ৪১৯ রান তুলতে সমর্থ হন তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে খুব তাড়াতাড়ি তিনি ছন্দ হারিয়ে বসেন। তার পর আইপিএলে মাঝে মাঝে সুযোগ পেলেও পুরনো ছন্দটা আর ফিরে পাননি সৌরভ।
- লুক পোমার্সবাচ
টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত এই অজি ব্যাটসম্যান নিজের অভিষেক আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের জার্সি গায়ে খেলেছেন। আসরে ৫ ম্যাচে ১৫২ রান করে আলোচনায় আসেন তিনি যেখানে রয়েছে ৫০ বলে হার না মানা ৭৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস। তবে হতাশাজনকভাবে পরের আসরগুলোতে ওই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি পোমার্সবাচ। ২০১৩ সালে শেষবারের মতো আইপিএলে দেখা যায় তাঁকে।
- সোহেল তানভীর
আইপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পূর্বে সালমান বাট, শহীদ আফ্রিদি, উমর গুলসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার টুর্নামেন্টটির প্রথম আসরে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পারফরম্যান্সের বিচারে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে যান সোহেল তানভীর।
অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের জন্য পরিচিত এই পেসার মাত্র ৬.৪৬ ইকোনোমি রেটে ১১ ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেন ২২টি উইকেট। তাঁর সেরা বোলিং ফিগারটি ছিল ১৪ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট। এমনকি শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে রাজস্থানের জয় নিশ্চিতে ব্যাট হাতেও অবদান রাখেন তিনি। তবে পরবর্তীতে আইপিএলে অংশগ্রহণে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ওপর বিসিসিআই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় এটিই হয়ে যায় তানভীরের প্রথম ও শেষ আইপিএল।
- কামরান খান
আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ম্যাচকে সুপার ওভারে টেনে নেওয়ার কারিগর তিনি। ২০০৯ আইপিএলে কলকাতা ও রাজস্থানের মধ্যকার লড়াইয়ে শেষ ওভারে মাত্র ৬ রান খরচায় ম্যাচটি টাই করেন কামরান। ওই আসরে ৫ ম্যাচে ৬টি উইকেট সংগ্রহ করেন তিনি যেখানে রয়েছে সৌরভ গাঙ্গুলি ও রবি বোপারার মতো বড় বড় নাম। কিন্তু অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য পরবর্তীতে তিনি নিষিদ্ধ হন এবং অ্যাকশন শুধরে পুনরায় মাঠে ফিরলেও বোলিংয়ে পুরনো ধারটা আর ফিরে পাননি।
- প্রবীন তাম্বে
২০১৪ সালের আইপিএলে হ্যাটট্রিকসহ ১৩ ম্যাচে ১৫ উইকেট তুলে নিয়ে রাজস্থান রয়্যালসের আরেকজন অখ্যাত ক্রিকেটার হিসেবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন প্রবীণ তাম্বে। সে আসরে স্পিন ঘূর্ণিতে ব্যাটসম্যানদের হিমশিম খাইয়ে আলোচনায় আসেন এই লেগ স্পিনার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রতিপক্ষরা তাঁর কার্যকরী বোলিংয়ের রহস্য খুব শীঘ্রই ভেদ করে ফেলায় পরের আসরগুলোতে বেশ ছন্নছাড়া হয়ে যায় তাঁর পারফরম্যান্স।
- ইকবাল আব্দুল্লাহ
২০০৮ যুব বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত দলের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ইকবাল আব্দুল্লাহর আইপিএল অভিষেক ঘটে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। ২০০৮ থেকে নাইট রাইডার্সের সাথে থাকলেও ২০১১ সালে এসে নিজেকে মেলে ধরেন তিনি। মাত্র ৬.১ ইকোনোমি রেটে ১৬ উইকেট নিয়ে ওই আসরের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটার নির্বাচিত হন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। যদিও পরবর্তীতে এ পারফরম্যান্সের ধারা অব্যাহত রাখতে ও প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে অসমর্থ হন তিনি।
- মানপ্রীত গোনি
আইপিএলের প্রথম আসরে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছিলেন মানপ্রীত গোনি। ১৬ ম্যাচ খেলে সংগ্রহ করেছিলেন ১৭ টি উইকেট। পুরষ্কারস্বরূপ সে বছরই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পান তিনি। তবে আইপিএলের পরের আসরগুলোতে ওই পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন এই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার।