‘টেস্ট ক্রিকেট সবার ওপরেই আছে’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের জমজমাট ফাইনালের পর্দা নেমেছে খুব বেশি দিন হয়নি।

শিরোপা জয়ের আনন্দটা এখনো নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে আছে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন অবশ্য এখন পরিবারকেই সময় দিচ্ছেন। এর মাঝে সময় করে প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয় আর পেছনের গল্প নিয়ে দিলেন সাক্ষাৎকারও। অনেকটা সময়ের এই কথোপকথনে তিনি জানিয়েছেন পরিবারের সাথে কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন সেটা নিয়েও।

এক সপ্তাহ’র বেশি হয়ে গেল। আপনি নিশ্চয়ই যথেষ্ট সময় পেয়েছেন সেই বুধবার সাউদাম্পটনে কি হয়েছে সেই স্মৃতি মনে করার। এটা কি এখনো মনে ভাসে?

হ্যাঁ, এটা মজার। তবে আমি এখন বাবা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তাই ওই ব্যাপারটা এখন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিন্তু অন্যান্যদের সাথে মাঝেমধ্যে টুকটাক কথা হয়। গত দুই বছর ধরে চলা ওই টুর্নামেন্টটা নিয়ে দেশে এখনো সবার মাঝে একটা আমেজ ভাব আছে। আর হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ধরে একটা রোমাঞ্চকর টুর্নামেন্ট ছিলো। আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি এবং ফাইনালে পৌঁছেছি। এরপর এমন অসাধারণ এক ম্যাচ, বেশ ক্লোজ একটা ম্যাচ ছিলো। এরপর শিরোপা জয়, এটা খুব স্পেশাল।

যেদিন আপনি ফাইনাল জিতলেন এর পরদিন সকালে আপনি গাড়ি ড্রাউভ করে টন্টন গেলেন!

এটা আমার পরিকল্পনার অংশ ছিলো। আমার ফ্যামিলি সমারসেটে ছিলো। তাই আমি ড্রাইভ করে সেখানে গিয়েছি তাদের সাথে দেখা করতে। এর আগে আমি কিছু ফটোশ্যুট করেছি এবং কিছু সাক্ষাৎকারও দিয়েছি। এরপর গাড়ি ড্রাইভ করে সমারসেট গেলাম আর বাচ্চার ন্যাপিস পরিবর্তন করা শুরু করেছিলাম! এটা জয়োৎসব করার আরেকটা অসাধারণ পদ্ধতি।

অনেক সময় পর আমাদের জন্য খুব অসাধারণ একটা রাত ছিলো সেটা। বাকি টিম মেম্বাররা তখন নিউজিল্যান্ডে চলে যায় এবং দুই সপ্তাহের জন্য সেখানে কোয়ারেন্টাইনে ছিলো। আসলে এভাবেই আমরা এখন বাস করছি (করোনা পরিস্থিতি)। আমি জানি এটা শুনতে হাস্যকর লাগলেও সত্যি যে, একটা লম্বা সময় বাইরে কাটানোর পর আসলে পরিবারের সাথে থাকার চেয়ে আসলে ভালো কোনো জায়গা হতে পারে না।

আমি এখনো টন্টন পর্যন্ত আপনার ড্রাইভ করা নিয়ে ভাবছি। যদিও এটা খুব লম্বা জার্নি ছিলো না। তবে আপনি যখন একা ড্রাইভ করছিলেন, আপনার মাথায় কি ঘুরপাক খাচ্ছিলো? আপনি কি বাইরে পরিবেশ দেখছিলেন নাকি কিভাবে শামি, অশ্বিন, বুমরাহদের সামলালেন সেটা নিয়ে ভাবছিলেন?

সত্যি বলতে, আমি যখন আমার গাড়িতে বসলাম দেখলাম যে এটা ম্যানুয়াল সিস্টেম! আমি ভয় পাইনি। তবে দীর্ঘদিন ম্যানুয়াল সিস্টেমের কোনো গাড়ি আমি ড্রাইভ করিনি। আমি শুধু ফোকাস করেছি, আমাকে এখান থেকে পরিবারের কাছে পৌঁছাতে হবে। অবশ্য পরবর্তীতে জার্নিটা সফল হয়। বাইরের পরিবেশের চেয়ে আমি জিপিএস ট্র‍্যাকিং এবং গিয়ার পরিবর্তনের দিকেই বেশি মনযোগী ছিলাম।

এটা আশ্চর্যজনক! আমি জানি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট, বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) এর মতো না। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কের জন্য ম্যানুয়াল সিস্টেমের ভাড়া করা গাড়ি!

(হাসি), আমি আসলে ওই মূহুর্তে এটা পরিবর্তন করিনি আর। কারণ অল্প সময়ের জন্য এটা মজারও। তবে আমি অটোমেটিক সিস্টেম পছন্দ করি। এটা (গাড়ি) আমাদের ম্যানেজার ঠিক করেছিলো।

আপনি কি রাস্তায় কোথাও দাঁড়িয়েছিলেন? আমি ভাবতেও পারছিনা এই ব্যাপারটা; আপনি কোথাও গাড়ির তেল কিংবা কফির জন্য দাঁড়ালেন এবং সেখানে মানুষজন যেয়ে বললো ‘কেন উইলিয়ামসন নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছে’!

(হাসি), হ্যাঁ। সেটাও আবার কিনা ম্যানুয়াল গাড়িতে। না, আমি কোথাও দাঁড়াইনি। এটা মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাপার ছিলো। আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম সেখানে পৌঁছানোর এবং একসাথে কফি খাওয়ার।

আমি জানি আপনি এখন অনেক খুশি। তবে সবশেষ দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের আক্ষেপ কি এই জয় দ্বারা কমেছে? নতুন রেকর্ড গড়লেন, আগের সেই আক্ষেপকি মুছে ফেলবেন?

(মৃদু হাসি), আমি মনে করি এটা একটা দারুন অভিজ্ঞতা। সেই সাথে এটাও বলবো যে ওই দুইটা টুর্নামেন্ট নিয়ে। কখনো কেউ শিরোপা জেতে, আবার কখনো কেউ পরাজিত হয়। তাদের দিকে আমাদের ভালো করে তাকানো উচিত। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন আবেগ কাজ করে আমাদের মধ্যে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আমার মতে ক্রিকেটের সৌন্দর্য উপভোগ করা উচিত। হ্যাঁ, ক্রিকেটের এই শিরোপা জয় আমাদের দেশের জন্য বড় একটা ব্যাপার। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের ফল। যদিও আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আমি মনে করি এটা বেশ গুরত্বপূর্ণ যে আমরা অসাধারণ খেলেছি এবং ফাইনালের অংশ হতে পেরেছি।

আপনার সাথে ট্রফির ছবি দেখলাম। আপনি বলেছেন আপনি টের পেয়েছেন যে এটা অনেক ভারী যা আপনি চিন্তাও করেননি?

প্রথমবার আমরা এটা তুলে ধরতে পেরেছি। না আমি এটা কখনো ভাবিনি। কিন্তু এটা অনেক ভারী ছিলো। আমরা যার সাথেই খেলি আমরা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেই। আমরা বিশ্বের সেরা দলের সাথেই খেলেছি। আমাদের সামনে যেটা ছিলো আমরা গ্রহণ করেছি। এমন একটা ম্যাচ জয়ের পর এটা বেশ বিস্ময়করই ছিলো আমাদের জন্য। এবং ট্রফিটাও বেশ সুন্দর ছিলো। আমরা দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেছি এমন মূহুর্তের জন্য। আমার জন্য এটা বেশ অসাধারণ ব্যাপার। এটা বেশ স্পেশাল। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অনেক উন্নতি করেছে এবং শিরোপা জিতেছে। এবং আপনি যত বেড়ে উঠবেন সামনে দেখবেন বাকিরাও এটা জিতছে। তাই মানসিক ভাবে সাধারণ থাকা দরকার এবং সবার প্রতি সম্মান দেখানোটাও প্রয়োজন।

কেন উইলিয়ামসনের ব্যাপারে যার সাথেই কথা বলা হোক সে বলবে উইলিয়ামসন একজন বিনয়ী এবং ভদ্র লোক। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছিলেন, ‘কেন সবসময়ই অবাক হয় যে মানুষ তার সমপর্কে কথা বলতে চায়’। তবে আমাকে সত্যি করে বলুন, আপনার মুখের যে হাসিটা শেষে আমরা দেখেছি সেটা ক্রিকেট মাঠে এখন পর্যন্ত আপনার সবচেয়ে দীর্ঘ হাসি?

আমি মনে করি আমার জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো যখন আপনি বলেছেন আমার সুন্দর একটা হাসি। আমি আসলে পিছনে তাকিয়ে ড্রেসিং রুমের জানালায় বাকিদের দেখছিলাম, এই ১৪০ রান তাড়া করাটা বিশাল ব্যাপার ছিলো। এরপর তো সবাই মিলে সেই সেলিব্রেশন! আমি আগেই বলেছি যে আমি অসাধারণ অনুভব করেছি। এটা একটা ভিন্ন ব্যাপার ছিলো। পুরো দলের জন্যই এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার। সেই সাথে ফ্যানদের এবং যারা আমাদেরকে এই ট্রফি জিততে সহায়তা করেছে সেই খেলোয়াড়দের জন্যও।

আপনার সাথে রস টেইলরের কি কথা হলো জয়ের পর। আপনারা দীর্ঘদিন ধরে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সাথে আছেন। যদিও সে একটু বেশি আপনার চেয়ে। কিন্তু ম্যাচ শেষে আপনাদের দুইজনের একে অপরকে আলিঙ্গন এবং মাঠ থেকে একসাথে বেরিয়ে আসা… সেটা নিয়ে যদি বলেন।

হ্যাঁ, এটা আসলেই দারুন। সে আমাদের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তার সাথে সেখানে থাকাটা…! আমি তাকে সরাসরি তেমন কিছু বলিনি। তবে আমার মনে হয় এটা তার ক্যারিয়ারের সেরা মোমেন্ট হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন। এটা আসলেই অসাধারণ ব্যাপার, যে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ এবং সে তার অভিজ্ঞতা সেদিন সবাইকে প্রমাণ করেছে। তার অভিজ্ঞতা পুরো দলের জন্যই বেশ কাজে দিয়েছে।

মাঠে সেদিন আপনি আপনার মাথা বিরাটের কাঁধে রেখেছিলেন। আপনাদের দুইজনের মাঝে মাঠের বাইরেও দারুন বন্ধুত্ব আছে। সবকিছুই আসলে একজনের প্রতি আরেকজনের সম্মান। কিন্তু ওই মূহুর্তে তার দলের বিপক্ষেই জয় এরপর তার কাঁধেই মাথা রাখলেন!

সেটা সত্যি অসাধারণ। ভার‍তের সাথে খেলা যে মাঠেই হোক বেশ চ্যালেঞ্জের হবে। ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই তারা তাদের বেঞ্চ শক্তি এবং তাদের পাইপলাইনের শক্তিমত্তা দেখিয়েছে। আর বিরাটের সাথে আমার বন্ধুত্ব বেশ কয়েক বছরের। বেশ কয়েকবার আমাদের আলাপ হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। দুই দলই সেখানে ভালো খেলেছে, বেশ ক্লোজ খেলা ছিলো। এমন একটা ম্যাচের পর দুইদলের জন্য প্রশংসা হওয়া উচিত। কেউ শিরোপা পাবে কেউই পাবে না এটাই নিয়ম। তবে আমাদের বন্ধুত্ব আরো দৃঢ়, ক্রিকেটের বাইরেও ভালো সম্পর্ক আমাদের। এবং আমরা দু’জনেই সেটা জানি।

নিশ্চিতভাবেই সে রাতে বেশ আনন্দ করেছিলেন! সব মিলিয়ে নিশ্চয়ই দারুন সময় কেটেছে।

আমরা তখনো বায়ো বাবলে ছিলাম। তাই আমরা যার যার রুমে কয়েকজন মিলে মজা করছিলাম। দীর্ঘদিন পর এমন একটা খুশির মূহুর্ত। আমরা সবাই বেশ আনন্দ করছিলাম। এটা একটা ফাইনাল হলেও, শুধুমাত্র একটা খেলাই ছিলো। তবে এখানে আসা, লম্বা একটা ভ্রমণ এবং আরো অনেক খেলোয়াড় যারা কিনা ফাইনালের স্কোয়াডে ছিলো না! আমরা সবাইকে নিয়েই কথা বলছিলাম, গান করছিলাম। এটা আসলেই অনেক সুন্দর রাত ছিলো এবং অসাধারণ সময় ছিলো।

একজন অধিনায়ক হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছেন। আপনি কি কোনো পর্যায়ে ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং পুনরায় আবার মূহুর্তের মধ্যে সবকিছু ঠিক করেছিলেন?

আমি আসলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমার জন্য কয়েক প্রকার চ্যালেঞ্জ ছিল। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আমাকে বলেছিল, ‘সবকিছু ভেবেচিন্তে করো।’ তবে মাঝে মাঝে এগুলো হতেই পারে। যখন পরদিনই আপনার খেলা আছে। যাই হোক এখন তো সব খেলোয়াড়ের এক বা দুই মাস ছুটি আছে। পূর্বের সব চ্যালেঞ্জ ভুলে যাওয়ার জন্য ভালো সময়। এবং আমি এটার অপেক্ষায় আছি, আগামি কিছু মাসের মধ্যে আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। আমি সেটার দিকেই তাকিয়ে আছি।

এটা বেশ ভালো ব্যাপার। ভালো খারাপ যাই হোক না কেনো, আপনি কখনোই দ্রুত কোনো কিছুর প্রভাব আপনার মধ্যে দেখান না। কিন্তু এই জয়ের ব্যাপারে কি এটার উপর আপনি একক ভাবে ভালো বোধ করছেন?

এটা একটা ব্যাপার মাত্র যেটা আপনি দলের সাথে শেয়ার করছেন। এবং পুরো দলের স্টাফ সহ সবাই সেটা দেখছে।আমাদের ভক্তরা বাড়ি ফিরছে আনন্দ নিয়ে এবং পুরো বিশ্ব আমাদের প্রসংশা করছে। আমি মনে করি এটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে না দেখে সর্বোপরি দেখা উচিত। এটা সবচেয়ে আনন্দদায়ক ব্যাপার যে গ্রুপের সবার সাথে শেয়ার করা যে আপনি কোন দিকে যাচ্ছেন! এবং কতটা পরিশ্রম করছেন। আমি জানি আমি কেমন। এবং আমি আমার পথেই আরামদায়ক ফিল করছি। এটা খুব বিশেষ দিন বেশ কয়েকটি কারণে।

আপনি তো ম্যাচ শেষে বলেছেন যা হবার তাই হয়েছে। যেখানে চারদিনের খেলা ম্যাচ ছয়দিনে গড়ালো। আবহাওয়াও একটা ব্যাপার ছিলো আপনি কি ভেবে নিয়েছিলেন এই ট্রফিটা বিরাটের সাথে শেয়ার করবেন?

হ্যাঁ। যেমনটা আপনি জানেন একটা ম্যাচে সময় যত গড়ায় ম্যাচটা ততোটা ড্র এর দিকেই এগোয়। তবে এখানে দুই দলই জিততে পারতো। এতো লম্বা সময় একটা টুর্নামেন্ট খেলার পর যখন আপনি ফাইনালের শেষ দিনে থাকেন। আপনি অবশ্যই চাইবেন নিজেদেরকে সেরা জায়গায় দেখতে। তবে আবহাওয়া দুই দলের জন্যই ছিলো বিরক্তিকর।

যেখানে তিনটা ফলাফলই সম্ভব ছিলো। এবং ড্র টাই বেশ বেশি সম্ভাব্য ছিলো। তবে এটা (আবহাওয়া) তো আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই আপনাকে ওই দিনটা অবশ্যই দলগতভাবে সেরাটা দেওয়ার ছিলো। আমরা শুরুতেই কিছু দ্রুত উইকেট তুলে নিয়েছিলাম এবং ম্যাচের রঙ দ্রুত বদলানো শুরু করলো। আমরা এটা সবসময়ই মাথায় রেখেছিলাম ইংল্যান্ডে ডিউক বলে খেলা তাই যেকোনো সময়ই ম্যাচে মোড় আসতে পারে। কারণ ডিউক বল বাতাসে ম্যুভমেন্ট বেশি করে। দিনের শুরুতে সেটা আরোও বেশি সমস্যা করে। ভাগ্য ভালো ছিলো যে আমরা প্রথম সেশনে ব্যাট করছিলাম না।

আমি খুশি হলাম যে আপনি এটা বলেননি ‘যা হবার তাই হয়েছে’। এতো বড় একটা ফাইনালের পর এই কথা যথেষ্ট বার বলেছেন।

(হাসি), আমি মনে করি এটা তখনো ছিলো। এটা সবসময় যে নেগেটিভ কিছু এমন না। অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। আপনি আপনার সেরাটা দিয়েছেন এবং দিনশেষে সেটার প্রাপ্যটা পাবেন।

সেখানে ব্যাটিং করাটা কেমন ছিলো? খুব বেশি উপভোগ করেছেন বলে মনে হয় না?

ভালো। ব্যাটিং করাটা উপভোগ করছিলাম তবে বেশ কঠিনও ছিলো। প্রতিটা বিভাগেই ভারতের খেলোয়াড়দের কোয়ালিটি বেশ উপরেই। পেস বিভাগ সেখানে সবচেয়ে উপরে। আমরা দুই ইনিংসেই দেখেছি দুই দলই ব্যাট করতে বেশ সমস্যায় পড়েছে। আপনি এমন একটা জায়গায় খেলছেন যেখানে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি মনে করি এটাই মূল লড়াই ছিলো। আমি মনে করি এটা দর্শকদেরও বেশ মুগ্ধ করেছে।

আপনাদের জয়ের পেছনে যে ভিতটা গড়ে দিয়েছে প্রথম সেশনেই। তিনি হলেন কাইল জেমিসন। অধিনায়ক হিসেবে বা একজন ক্রিকেটার হিসেবে কাইলের এই উন্নতি কিভাবে দেখছেন? আইপিএলের অংশটা একপাশে রেখে তার যেই প্রতিভা এবং দক্ষতা। আপনি কি মনে করেন জেমিসন ক্রিকেটে কতটা উন্নতি করবে?

সে অসাধারণ একজন প্রতিভাবান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমাদের হয়ে এখন পর্যন্ত দারুন পারফরম্যান্স দেখিয়েছে সে। আমি মনে করি সবচেয়ে দারুন ব্যাপার হলো সে সবসময় তার খেলায় কিভাবে উন্নতি করবে সেটা শিখতে চায়। সে ইতিমধ্যেই সফলতা পেয়েছে কিন্তু সে এখনো শিখতে চায় এবং তার আশেপাশে যারা আছে আমি মনে করি সে আরো উন্নতি করবে। সে খুব বেশি সামনে দেখতেও পছন্দ করে না। যেটা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সে তরুন হলেও তার শারীরিক ভাষা অসাধারণ। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সে দারুন একজন। আমি সত্যি বলতে পারবো না কাইল কিভাবে এসেছে এবং নিজেকে ধরে রেখেছে। শেষ ১৮ মাস তার পারফরম্যান্সই তাকে চিনিয়েছে। সে তার ক্যারিয়ারে এখন সঠিক জায়গাতেই ফোকাস করছেন এবং তার জন্য এটাই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

সে এখনো তরুণ। ম্যাচ শেষে আপনি তাঁকে মাঠ থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সামনে দেন। সে যখন মাঠ থেকে বের হচ্ছিলো দর্শকদের সাথে সেও তালি বাজাচ্ছিলো! যে দর্শকরা তার জন্যই তালি বাজাচ্ছিলো।

সে অসাধারণ একজন মানুষ। আমি যেটা বলেছি সে এখনো তরুন এবং সে দলকে একটা সঠিক পথ দেখিয়েছে তার পারফরম্যান্স দিয়ে। সে দারুন একটা পুরস্কার পেয়েছে যেটা সে ডিজার্ভ করে। শুধু বল হাতেই নয়, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়েও সে দারুন। আমি মনে করি তার মনোভাবটা সেরা একটা পার্ট। সে ইতিমধ্যেই অনেক দিক থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার মতো! কিন্তু আমি জানি সে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।

আপনার দলের মধ্যে কোনো আইডেন্টিটি ক্রাইসিস নেই। মানে সবাই, নিজেদের ভূমিকা নিয়ে পরিস্কার ধারণা রাখেন। এটাই কি শিরোপা জয়ে সবারই কম-বেশি ভূমিকা রাখতে পারার অন্যতম কারণ?

আমি মনে করি এটা (নিজেদের দায়িত্ব) খুব গুরুত্বপূর্ণ সব দলের জন্যই। মূলত, আমি আমাদের সবাইকে একটা দল হিসেবেই দেখি। আমরা আমাদের দলের জন্য কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, কোনটার ভ্যালু বেশি সেটাই দেখি। আমরা সামনের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে ভাবি এবং সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করি। ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সবসময়ই। আপনি অবশ্যই চাইবেন সবাই সবার নিজের দায়িত্ব টা পালন করুক।

আপনার পুরোনো এক সাক্ষাৎকার থেকে একটা কথা মনে আসে। এক ছোট বাচ্চাকে বলেছিলেন ‘প্রত্যেকেই তার জীবনে আলাদা। কখনো অন্য কারো মতো হবার চেষ্টা করো না।’ অধিনায়ক হিসেবেও কি এটাই আপনার ভাবনা?

আমি মনে করি, এটাই বাস্তব যে প্রত্যেকেই আলাদা। আমরা সবাই অন্যর প্রতি আকৃষ্ট হই। এবং আমরা অনেক সময় কারো ব্যাটিং দেখে আনন্দ পাই। এটা উৎসাহ যোগাতে পারে। তবে তার মতো হতে চাওয়াটা ভালো কিছু নয়। হ্যাঁ, অন্যকে দেখে আপনি শিক্ষা নিতে পারেন। অন্যর থেকে কিছু শিক্ষা নিয়ে নিজের মধ্যে উন্নতি করতে পারেন। সেটা হতে পারে। আমি মনে করি আমাদের দলের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ আমার সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাহলে নিজের দায়িত্বটা তখন ভালো ফল এনে দিবে।

‘অল ব্ল্যাকস’ দের (নিউজিল্যান্ডের রাগবি দল) নিয়ে যদি বলি। তাদের পক্ষ থেকে আপনাদের প্রশংসা করে একটা মেসেজ দিয়েছে।

আমি এখন পর্যন্ত ওই মেসেজ দেখিনি। আমাদের দলের অনেকেই রাগবি খেলোয়াড় হতে চেয়েছিলো যখন কম বয়সী ছিলো। আমি জানি আমাদের দলের কয়েকজনের সাথে তাদের বেশ ভালো সম্পর্ক আছে।

আপনি কি মনে করেন যে এটা একটা দলের সংস্কৃতি এবং নীতি যে, দলের কোনো দূর্বলতা থাকলে সেটা নিয়ে আপনার কথা বলা। এবং দলে কতটুকু রিসোর্স এবং কোয়ালিটি আছে সেগুলো নিয়েই ফোকাস করা উচিত?

এটা আমাদের দলের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক দল ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের পরিকল্পনা সাজায়। এটা একটা চ্যালেঞ্জ যে আপনি আপনার দলের বাকিদের কিভাবে পরিচালনা করবেন। এটা কোনো স্থায়ী কিছুনা। এটা পরিবর্তন হয়। এবং সবার সাথেই সবার মানিয়ে নিতে হয়। এটা হতে পারে খেলোয়াড় কিংবা স্টাফের কেউ। যখন আপনি সব কিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তখন দেখবেন সবকিছুই ঠিক হচ্ছে। আরো অনেক দল আছে যাদের বড় একটা গ্রুপ আছে, অনেক তারকা ক্রিকেটার আছে। আমি মনে করি আমাদের কাছে কি আছে কারা আছে। একসাথে কাজ করে সবার সেরাটা নিয়ে আসা।

প্রথম টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এখন শেষ। এবং আমরা জানি যে এই ফরম্যাট টা একই ভাবে চলবে পরবর্তীতে। একজন আন্তর্জাতিক অধিনায়ক হিসেবে এটা কি আপনার জন্য ভালো মনে হয়েছে? এবং কতটা উন্নতি হবে টেস্ট ক্রিকেটে?

তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো একটা নতুন পদ্ধতি এনে এটাকে চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় নেওয়াটা। এই প্রতিযোগিতায় সব দলই লড়াই করেছে এবং ফাইনালে যাওয়ার জন্য সেরাটা দিয়েছে। আর এই টুর্নামেন্ট পুরো ক্রিকেট বিশ্বকেই অসাধারণ কিছু খেলা উপহার দিয়েছে। আমি মনে করি এতে বেশ উপকার হয়েছে। আমি এখনো মনে করি টেস্ট ক্রিকেট সবার ওপরেই আছে। এটার একটা ঐতিহ্য আছে। আমি মনে করি এই টুর্নামেন্ট টেস্ট ক্রিকেটকে আরো উপরে নিয়ে যাবে। দারুণ একটা চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ফাইনালে খেলার মতো এমন একটা মুহূর্ত, এরপর শিরোপা জয় সব মিলিয়ে সেরা।

শেষ করার আগে, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই জানতে চায় কেন উইলিয়ামসন বাচ্চার ন্যাপি পরিবর্তনে কতটা ভালো?

আমি এটা বেশ কয়েকবার করেছি। আমি লম্বা সময় বায়ো বাবলে ছিলাম। তবে আমি আমি এসবে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। এখন প্রতিদিন কিছু ন্যাপিস পরিবর্তন করি। আমার স্ত্রীই করে বেশিরভাগ। আর সেও (মেয়ে) এখন আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link