টি-টোয়েন্টির জন্ম প্রহর

রাতের ক্রিকেট আর রঙিন জার্সি দিয়ে ক্রিকেটকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন ক্যারি প্যাকার, ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর মত বিপ্লবী আর আসেনি। ক্রিকেটের সেই বিপ্লবের পেছনে ছিল মূলত ব্যবসা আর অর্থের ঝকঝকানি। বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের নিয়ে তাঁর সেই ওয়ার্ল্ড সিরিজ পরিবর্তন করে দিয়েছিল বিশ্ব ক্রিকেটের গতিপথ।

২০০২ সালে বেনসন ও হেজেজ কাপের পর স্পন্সরশিপ শেষ হবার পর ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রয়োজন ছিল আরেকটা সীমিত ওভারের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা। মূলত কাউন্টি ক্রিকেটে দর্শকের সংখ্যা হ্রাস পাওয়াতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল ইসিবির ক্রিকেট কর্তাদের।

দর্শকদের মাঠে ফেরাতে এবং ক্রিকেটকে আরো বিনোদনপূর্ণ করতে তাদের প্রয়োজন পড়েছিল যুগান্তকারী এক পদক্ষেপের। ইসিবির বিপণন ব্যবস্থাপক স্টুয়ার্ট রবিনসনের মাথায় খেলে গেল এক অভিনব আইডিয়া। তিনি জরিপ চালিয়ে দেখলেন ম্যাচের দৈর্ঘ্য বড় হওয়াতেই দর্শকদের মাঠে আসতে অনীহা।

সেজন্য চাইলেন ক্রিকেট ম্যাচকে তিন ঘন্টার মাঝে ইতি টানতে। বোর্ড সভায় প্রস্তাব রাখলেন বিশ ওভার করে চল্লিশ ওভারের ক্রিকেটের। সেই প্রস্তাব ২০০১ সালে কাউন্টি দলগুলোর চেয়ারম্যানদের সভায় পাস হলো ১১-৭ ভোটে।

মাত্র তিনজন চেয়ারম্যান বিপক্ষে ভোট দিলেই ক্রিকেটের এই নতুন মোড় বদল হয়তো সম্ভব হতো না। সেদিন কে জানতো – এই একটা ঘটনাই আজীবনের জন্য বদলে দেবে ক্রিকেটের ইতিহাস। শুরু করা হলো নতুন টি-টোয়েন্টি সুপার কাপ।

২০০৩ সালে রোজ বোলে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দুই দল ছিল হ্যাম্পশায়ার ও সাসেক্স। রোজ বোলের সেই ম্যাচেই সূচনা ঘটে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের। শুরুর আগেই আলোড়ন তুলেছিল ম্যাচটি। দুই দলেই ছিল তারকাদের উপস্থিতি।

সাসেক্সের হয়ে খেলেছিলেন ম্যাট প্রায়র, ক্রিস অ্যাডামস, মুশতাক আহমেদরা। অন্যদিকে, হ্যাম্পশায়ার তাঁবুতে উজ্জ্বল ছিলেন ওয়াসিম আকরাম, সাইমন ক্যাটিচ, দিমিত্রি মাসকারেনহাস, জন ক্রাওলিরা। জেমস কার্টলির করা টি-টোয়েন্টির ইতিহাসের প্রথম বলটিই ছিল ওয়াইড। ম্যাচটি পাঁচ রানে জিতে নিয়ে হ্যাম্পশায়ার।

ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ছিল টি-টোয়েন্টি সুপার কাপ। সেবার এক মাসের বেশি সময় দীর্ঘ লড়াই শেষে ফাইনালে উঠেছিল দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ারউইকশায়ার এবং সারে। নটিংহ্যামে সেদিন যেন বসেছিল তারার মেলা। একপক্ষে নিক নাইট, ইয়ান বেল, ট্রেভর পেনি, কলিন্স ওবুইয়া, ওয়াকার ইউনিসরা তো অন্যপক্ষে ছিলেন মার্ক রামপ্রকাশ, আজহার মেহমুদ, সাকলায়েন মুশতাকরা।

কিন্তু, ফাইনাল হয়েছিল বড্ড একপেশে, টস জিতে ব্যাট করতে নামা ওয়ারউইকশায়ার দাঁড়াতেই পারেনি জিমি ওরমন্ড এবং সাকলায়েন মুশতাকের সামনে। ট্রেভর পেনি ৩৫ এবং টনি ফ্রস্টের ৩১ রানে ভর করে ওয়ারউইকশায়ার সংগ্রহ করে ১১৫ রান।

বাকিদের রান সংখ্যা যেন ছিল মোবাইল ডিজিট, দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি কেউই। ওরমন্ড চার ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে শিকার করেন চার উইকেট। জবাবে সারের দুই ওপেনারের সামনেই স্রেফ কচুকাটা হন প্রতিপক্ষের বোলাররা।

ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ইয়ান ওয়ার্ড এবং আলি ব্রাউন দুজনেই তুলে নেন ফিফটি। মাত্র এগারো ওভারে নয় উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় সারে। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন জিমি ওরমন্ড।

ফাইনালের একপেশে লড়াই দেখে দর্শকরা কিছুটা মন:ক্ষুণ্ণ হলেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল সেই টুর্নামেন্ট। আজকের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, হালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) বা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট – সবকিছুর শুরুটা সেই টি-টোয়েন্টি সুপার কাপ দিয়েই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link