অন্যায়, অসন্তোষ ও অস্ট্রেলিয়া – এই তিনটি শব্দ ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। সর্বশেষ শব্দটার ব্যাখ্যা সহজ। অস্ট্রেলিয়া দল চলে এসেছে বাংলাদেশ সফরে, খেলবে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি। সেখানে নেই মুশফিকুর রহিম। সেখান থেকেই বাকি দু’টি শব্দের উদ্ভব। মুশফিকের সাথে অন্যায় হয়েছে – এমন মনে করার লোকের অভাব নেই। আর তার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষের।
জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ফেরা বাংলাদেশ দলের এক ক্রিকেটার মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ার সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুশফিকুর রহিমের সাথে কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় যেটা করা হয়েছে সেটা অন্যায়। মূলত অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়েই ঘরের মাঠের এই সিরিজে অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট শেষে বাবা মার অসুস্থতার কারণে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন মুশফিক। অস্ট্রেলিয়ার শর্ত ছিল জিম্বাবুয়ে সফরে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা ক্রিকেটাররাই শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলতে পারবেন।
যদি বাইরের কেউ খেলতে চায় তবে বাধ্যতামূলক দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থেকে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করতে হবে। মুশফিক দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি। আজ জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে হোটেলে তিন দিনের কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেখানেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি মুশফিককে।
অথচ আজ হারারে থেকে তিনটি বিমানবন্দর দিয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে দেশে এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এটা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঐ ক্রিকেটার। তিনি দাবি করেছেন তাদের সমস্য না হলে মুশফিকের ক্ষেত্রে সমস্য হলো কেনো। ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি জানিয়েছেন তাকে কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করতে না দেওয়াটা ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, ‘মুশফিকের সাথে যা ঘটেছে সেটা অন্যায়। আমরা তিনটি বিমানবন্দর দিয়ে একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এসেছি। এর পরেও মুশফিককে কেনো খেলতে দেওয়া হলো না তা আমি জানি না। পারিবারিক সমস্যার জন্য সে সফরের মাঝামাঝি দেশে ফিরে এসেছিল। দুই বা তিন দিন পর মুশফিককে কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করতে না দেওয়াটা ঠিক নয়।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে আগেই ছুটি নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে সিরিজ শেষেই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে ভেবেই নিজের সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বাবা মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে আবার সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সাথে মুশফিককে খেলানোর বিষয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু বিসিবির আবেদনে সাড়া দেয়নি অস্ট্রেলিয়া।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সিএ এবং বিসিবির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাইরে থেকে কারো জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। আমাদের কেবল জৈব সুরক্ষা বলয়ের ভিতর থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলতে হবে। আমার মনে হয় নির্বাচকরা এমন পরিস্থিতিতে সেরাদেরই বেছে নিয়েছে।’
চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ থেকে আগেই নাম প্রত্যহার করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এছাড়া পারিবারিক কারণে দুই দিন আগেই জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে আসা লিটন দাসও রয়েছেন জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে। আর বাবার মৃত্যুতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলে জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরে ছিলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লবও। তিনিও জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে রয়েছেন।
এই তিন ক্রিকেটার ছিটকে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড ২০ সদস্যের থেকে এখন ১৭ সদস্যের হয়েছে। হালকা চোট রয়েছে সাকিব আল হাসানেরও। তাকে নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। চোট রয়েছে সৌম্য সরকারেরও।
কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। ডিআরএসের টেকনিশিয়ানরা সাধারণতো ম্যাচ অফিসিয়ালদের সাথে একই রুমে থাকে। ম্যাচ অফিসিয়ালরা দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও টেকনিশিয়ানরা এখনো জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করেননি। তবে বিসিবির ঐ কর্মকর্তা হাতে এখনো সময় থাকাতে ডিআরএস নিয়ে আশাবাদী।
তিনি বলেন, ‘টেকনিশিয়ানের এখনও সময় রয়েছে। তাকে তিন দিনের কোয়ারানটাইন মেনে চলতে হবে, তবে সিএর শর্ত রয়েছে যে, কেউ দশ দিনের কোয়ারান্টিনে না থাকে তবে সে যেনো কারো কাছা কাছি না আসতে পারে।
এই ব্যক্তি যদি কাজটি দূর থেকে পরিচালনা করতে পারেন তবে আমাদের ডিআরএস থাকতে পারে।’
এই সিরিজের জন্য বিসিবি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। ম্যাচ অফিসিয়াল, হোটেল স্টাফ, যোগাযোগ এবং গ্রাউন্ড স্টাফদের জন্য দুটি আলাদা কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন না করে সরাসরি হোটেলে এসেছে। হোটেলেই তাদের পাসপোর্টের কাজ শেষ করে তা আবার ফেরত দেওয়া হবে।
অস্ট্রেলিয়া শর্ত দিয়েছিল প্রতিটা ম্যাচই একই ভেন্যুতে আয়োজন করতে হবে। তাদের শর্ত অনুযায়ী পাঁচ ম্যাচই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্টিত হবে। বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন দেখেই সব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কেবল সিএ আমাদের শর্ত দিয়েছে শুধু শর্ত অনুযায়ীই আমরা সব করিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসেছ। এটাতেই বোঝা যায় যে তারা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যকে কতটা গুরুত্ব দেয়। আমরা কেবল তাদের কিছু অতিরিক্ত প্রয়োজন পূরণ করছি।’
তবে এতো কিছুর পরেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন উদ্বেগজনক। গতকার দেশে করোনায় মৃত্যু বরণ করেছে ২৫৮ জন ও আজ মৃত্যু বরণ করেছেন ২৩৯ জন। গতকাল আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪৯২৫ জন ও আজ আক্রান্ত হয়েছে ১৫২৭১ জন।
এই সফরটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে নিউজিল্যান্ডের ও এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ও পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসার কথা রয়েছে ইংল্যান্ডের।