ব্যাটিংয়ে গুরুত্ব দিতে গিয়ে…

গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেট। মুহূর্তে মাঝেভ্যেমন বদলে যেতে পারে খেলার গতিপথ তেমনি এক মুহূর্তেই পুরো ঘুরে যেতে পারে একজন ক্রিকেটারের ভবিষ্যত। ব্যাটিং কিংবা বোলিং যেকোনো রোলেই দলে জায়গা পেতে ক্রিকেটারদের প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং লেগে থাকার ধৈর্য্য।

কখনো কখনো একটি শট কিংবা বলের ভ্যারিয়েশন আয়ত্ত্বে আনতেই কেটে যায় বছর তিনেক। কিন্তু কিছু ক্রিকেটার আছেন যারা কিনা শুরুতে বোলার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে। আজ তাঁদের কথা বলবো, যারা ক্যারিয়ারের গোড়ায় দিব্যি বোলিংটা করতেন। পরে ব্যাটিংয়ে মন দিতে গিয়ে বোলার পরিচয়টা হারিয়ে যায়।

  • নাসের হুসেইন (ইংল্যান্ড)

ধারাভাষ্যকার হিসেবে পুরো বিশ্বে জনপ্রিয় হবার আগে ক্রিকেটার হিসেবে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন নাসের হুসেইন। দীর্ঘ সময় ধরে ইংল্যান্ড জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন।

ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন লেগস্পিন দিয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে বোলিংয়ের দিকে ফোকাস কমিয়ে মনোযোগী হন ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে ৯৬ টেস্ট খেলে

  • ক্যামেরন হোয়াইট (অস্ট্রেলিয়া)

মাইকেল বেভান, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের পর অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের হাল ধরেছিলেন ক্যামেরন হোয়াইট। দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দেয়া কিংবা শেষের দিকে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলা দুটো কাজেই তিনি ছিলেন সমান সফল। যদিও জাতীয় দলে তিনি প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন লেগস্পিনের ভেলকি দেখিয়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি ব্যাটিংয়ে উন্নতি আনতে শুরু করেন।

একসময় পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হয়ে যান। বিগ হিটার হবার সুবাদে বিশ্বজুড়ে ফ্যাঞ্চাইজি টি টোয়েন্টি টুর্নামেন্টগুলোতে তার চাহিদা ছিল বিশাল। বিগ ব্যাশ কিংবা আইপিএলের মতো টুর্নামেন্টে তাকে দলে নিতে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। খেলেছেন ডেকান চার্জার্সে এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর মতো দলে।

  • শচীন টেন্ডুলকার (ভারত)

তর্ক সাপেক্ষে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে করেছেন ৩৩ হাজারের বেশি রান। বিশ্বের বাঘা বাঘা সব বোলারদের নাকের জল চোখের জল এক করে ছেড়েছেন। তবে জানেন কি শচীন কিন্তু বল হাতেও কম যান না।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে নিয়মিত বল করতেন। তার ডানহাতি অফস্পিনে নাকাল হয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানেরা। ওয়ানডেতে দেড়শোর বেশি উইকেটের মালিক লিটল মাস্টার। কিন্তু ক্যারিয়ারের পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাটিংয়ের মনোযোগী হতে ছেড়ে দেন বোলিং। ব্যাট হাতে অনবদ্য পারফরমেন্স করে ভারতকে এনে দেন ২০১১ বিশ্বকাপের শিরোপা।

  • মার্ক রিচার্ডসন (নিউজিল্যান্ড)

ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্পিনার হিসেবে। অভিষেকে জাতীয় দলে ব্যাট করতে নেমেছিলেন দশ নম্বরে। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারছিলেন নখদন্তহীন বোলিং দিয়ে দলে টিকতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন।

অবশেষে ২৯ বছর বয়সে জাতীয় দলে ওপেনার হিসেবে খেলতে শুরু করে। টেস্টে নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার ছিলেন মার্ক রিচার্ডসন। তার স্ট্রেট ড্রাইভগুলো আজও নস্টালজিক করে তোলে ক্রিকেট ভক্তদের। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৩৮ টেস্ট খেলে ২,৭৭৬ রান করেন তিনি।

  • স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)

তালিকার প্রথম নামটি দেখে বোধহয় কেউই অবাক হননি। বরং এক নম্বরে স্টিভ স্মিথ থাকবে এটা সবার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তার মাঝে খুঁজে পেয়েছিল শেন ওয়ার্নের ছায়া। স্বয়ং ওয়ার্ন নিজেও উচ্ছ্বসিত ছিলেন তাকে নিয়ে, নিজে যেচে পরামর্শ দিতে ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যবিধাতা ভেবে রেখেছিলেন অন্যরকম। ওয়ার্ন নয় স্মিথ হবেন ডন ব্র‍্যাডম্যানের উত্তরসূরি।

কখন যে লেগস্পিনের মায়াজাল ছেড়ে হাঁটতে শুরু করেছেন ব্যাট হাতে সেটা তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। ক্রিকেট ব্যাকরণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অপ্রচলিত স্টান্টে রান করেছেন অজস্র। সময়ের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান তো বটেই, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। গতিময় পেস বোলিং কিংবা স্পিন বোলিংয়ের রহস্যময়তা কিছুই আটকাতে পারেনি স্মিথকে রান করা থেকে। অজি ক্রিকেটের রাজপুত্র তাই ব্যাট হাতে ছুটে চলেছেন অমরত্বের পানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link