অ্যামব্রোস আগ্রাসনের বলি জোন্স

জোন্স পরে বলবেন, ‘অ্যামব্রোসের করা পরের তিনটে বল আমার জীবনে খেলা দ্রুততম।’ জোন্স মজার ছলে আরো বলেছেন, ‘অ্যামব্রোসকে ব্যান্ড খুলতে দেখে আমাকে যেন ১২ জন মিলে স্লেজ করতে শুরু করেছে। ১১ জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এবং মার্ক টেলর।’ জোন্সের কথায়, টেলর নাকি তাঁকে বলেন, ‘অ্যামব্রোসকে খোঁচালে তো। এবার আমাকে কে বাঁচাবে? আমার বাড়িতে স্ত্রী সন্তান আছে হে।’

এটা সেই সময়ের গল্প যখন বাৎসরিক ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন, পাটালি, পিকনিক, চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাওয়ার মতোই অস্ট্রেলিয়ার একদিনের ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট শীতকালের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। আজকাল তো ওয়ানডে ক্রিকেট কুড়ি-বিশের জঠরে প্রায় হারিয়ে গেছে। কিন্তু তখন ক্রিকেট বিনোদনের অন্যতম অংশ ছিল একদিনের ক্রিকেট। এবং ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীর কাছে ভারতের ম্যাচ বাদে, অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ড সিরিজ ছিল যাকে বলে ‘স্টেপল ডায়েট’।

সেরকমই একটি দিনের কথা। ১৯৯৩ সালের ১৬ জানুয়ারি। ওয়ার্ল্ড সিরিজের প্রথম ফাইনাল। স্থান সিডনি। এবং দুই প্রধান পাত্র, ডিন জোন্স ও কার্টলি অ্যাম্ব্রোস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমে ব্যাট করে করেছে ২৩৯।

তৎকালীন বিচারে এমনিতেই বেশ ভালো স্কোর। তার মধ্যে আবার কার্টলি অ্যামব্রোস, বেঞ্জামিন,বিশপ, কামিন্স। ৪১ রানে ১ উইকেট, এই অবস্থায় ক্রিজে এলেন ডিন জোন্স। ততক্ষণে আগুন ছোটাতে শুরু করে দিয়েছেন এম্ব্রোস। এমনিতেই তাঁর বাড়তি তেতে থাকার কথা।

কারণ ইয়ান বিশপের সাথে অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন নতুন বল তুলে দিয়েছিলেন ফিল সিমন্সকে। মনে রাখতে হবে, এটা সেই অস্ট্রেলিয়া সফর যেবার অ্যামব্রোস তাঁর সেই বিখ্যাত ১ রানে ৭ উইকেট নেন। আর তিনি থাকতে কিনা, অ্যামব্রোসের অধিনায়ক নতুন বল দিয়েছেন সিমন্সকে!

ডিন জোন্স নেমে দেখলেন, অ্যামব্রোসের বলগুলো প্রায় দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে না। এতো জোর! ডিন জোন্স অনেক ক্ষেত্রেই ওয়ানডে ক্রিকেটের ধোনি বা বেভান স্কুল অব ব্যাটিংয়ের পথপ্রদর্শক। এবং এই ধরণের ব্যাটিং করতে গেলে চকিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একান্ত জরুরি। অ্যামব্রোসের গোলাগুলি গুলো দেখেও জোন্স একটি চকিত সিদ্ধান্ত নিলেন। দুঃখের বিষয়, সেটা একটি চরম ভুলে পরিণত হয়।

জোন্স ঠিক করলেন, অ্যামব্রোসকে একটু বেলাইন করে দিতে হবে। যদি ছন্দ হারিয়ে কয়েকটা বাজে বল করে ফেলেন। জোন্স আম্পায়ারকে গিয়ে বলেন, অ্যামব্রোসের ডান হাতে সাদা রিস্ট ব্যান্ডটা তাঁর বল দেখার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এম্ব্রোসকে আম্পায়ার গিয়ে বললেন কথাটা। অ্যামব্রোস তো অবাক। অধিনায়ক রিচিও। শেষ পর্যন্ত এম্ব্রোস খুললেন। কিন্তু তিনি ততক্ষনে ঠিক করে নিয়েছেন, এবার জোন্স ব্যাটাকে শিক্ষা দিতে হবে।

জোন্স পরে বলবেন, ‘অ্যামব্রোসের করা পরের তিনটে বল আমার জীবনে খেলা দ্রুততম।’ জোন্স মজার ছলে আরো বলেছেন, ‘অ্যামব্রোসকে ব্যান্ড খুলতে দেখে আমাকে যেন ১২ জন মিলে স্লেজ করতে শুরু করেছে। ১১ জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এবং মার্ক টেলর।’ জোন্সের কথায়, টেলর নাকি তাঁকে বলেন, ‘অ্যামব্রোসকে খোঁচালে তো। এবার আমাকে কে বাঁচাবে? আমার বাড়িতে স্ত্রী সন্তান আছে হে।’

অ্যামব্রোস পরে স্বীকার করবেন, ‘আমাকে ব্যান্ড খুলতে বলার পর আমি সত্যিই চরম রেগে যাই। মনে হচ্ছিলো জোন্সকে যতটা সম্ভব পীড়া দেওয়া যায়, তাই দেব। অবশ্য ওদের আঘাত দেবার অভিপ্রায় আমার ছিল না।’

কথাটার সত্যতা নিয়ে অবশ্য আমি একশো শতাংশ নিশ্চিত নই। এম্ব্রোস সেই ম্যাচে নেন ৩২ রানে ৫ উইকেট। এই ম্যাচে আরেকটি অবিস্মরণীয় দৃশ্য এম্ব্রোসের স্লোয়ারে হিলির আউট। অস্ট্রেলিয়া হারলো সেটা অবশ্য বলাই বাহুল্য।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...