প্রায় চার বছর পর জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন নুরুল হাসান সোহান। জিম্বাবুয়ে সিরিজ শেষে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান খেলেছেন ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। এই দুই সিরিজের পরিসংখ্যান দিয়ে হয়তো সোহানকে বিচার করা যাবে না। কিন্তু উইকেটের পিছনে তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি নজর কেড়েছে সবার। দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফিরে খেলা ৭১ – কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জানালেন তাঁর ক্রিকেটে ফেরা, নিজের পারফরম্যান্স, অতীত ও বর্তমান ক্রিকেট দর্শন নিয়ে।
__________________
- অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেললেন, এই দুই সিরিজে নিজের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে?
– নিজের প্রত্যাশার থেকে সব সময় দলের লক্ষ্যটা গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। দুইটা সিরিজই যেহেতু জিততে পেরেছি আমরা। দুইটা সিরিজই ভিন্ন কন্ডিশনে ছিল। যদি দল হিসাবে বলি আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশি। আর নিজের কথা যদি বলি, ক্রিকেটটা যেহেতু টিম গেম, নিজের কোন লক্ষ্য থাকেনা। সব সময় চেষ্টা করি দলের জয়ে অবদান রাখতে। সেটা দশ রান করেই হোক আর পাঁচ রান করেই হোক। এটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে।
- অনেক দিন দলের বাইরে ছিলেন, সেই সময়ে আপনার উপলব্ধি কেমন ছিল, আর এখন সেটা কেমন?
– হ্যাঁ, তিন চার বছর যখন দলের বাইরে ছিলাম। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি আর ঘরোয়া ম্যাচ খেলি, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ধরেই বলি, খারাপ করার একটা ভয় কাজ করতো সব সময়। যে খারাপ করলে কি হবে, ভবিষতে কি হবে। এখন আর সেই চিন্তা হয়না, ওরকম চিন্তা করিও না। এখন সব সময় পরিশ্রম করতে চাই। নিজের প্রসেসটা ঠিক রাখতে চাই। আমি বিশ্বাস করি পরিশ্রম করলে সফলতা পাবো। আমি এই তিন চার বছরে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতাম আমি আমার শতভাগ দিতে পারছি কিনা, পরিশ্রম করছি কিনা। এখন থেকে ঘরোয়াতে খেলি আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি সেটা বিষয় না, আমি যেখানেই খেলি পরিশ্রমটা করতে চাই। আমার ভিতর যদি আবার কখনো প্রশ্ন আসে আমি যেনো উত্তর দিতে পারি যে চেষ্টাটা করেছি।
- চার বছর পর দলে ফিরে খেলার সময় কখনো কি মনে হয়েছে খারাপ করলেই বাদ পড়তে পারি?
– হ্যাঁ, আগে এগুলো নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করতাম। আগে খেলার সময় এমন চিন্তা খুব হতো যে একটু খারাপ করলেই হয়তো বাদ পরে যাবো। একটা বাড়তি চাপও কাজ করতো। এগুলো ভাবতাম সব সময়। কিন্তু এখন আর এগুলো নিয়ে ভাবি না।
- একেক ম্যাচে একেক পজিশনে ব্যাট করেছেন, নিজের পছন্দের কোন পজিশন ছিল?
– না, আমার এরকম কোন পজিশন চাওয়া ছিল না। আমার কাছে দলের চাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দল যেখানে চেয়েছে সেখানেই ব্যাট করতে প্রস্তুত ছিলাম।
- আগের দুই সিরিজে মুশফিক লিটন ছিল না, পরের সিরিজে দু’জন ফিরলে জায়গা ধরে রাখাটা আপনার জন্য একটু কঠিনই হবে, এই চ্যালেঞ্জটা কি ভাবে নিচ্ছেন?
– আসলে এই গুলো নিয়ে ভাবছি না, আমি শুধু আমার নিজের কাজটা ঠিক মতো করে যেতে চাই। যেটা বললাম আমি নিজের কাজ ঠিক ভাবে করে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না। আমি আমার পরিশ্রমটা করে যেতে চাই। নিজের প্রসেসটা ঠিক রাখতে চাই। এছাড়া আর কোন ভাবনা নেই।
উইকেটের পিছন থেকে বলা আপনার অনেক কথা ভাইরাল হয়েছে, বিশেষ করে ‘নেন ভাই নেন, তাড়াতাড়ি শেষ করেন, বাসায় যাবো’ ফিরছিলেন কখন? কি করলেন?
– না, (হাসি)। আমরা যখন ক্রিকেট খেলতে নামি তখন মাঠেই সবাই শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। মাঠের ভিতর অন্য কিছু নিয়ে মজা করার সময়ও থাকেনা। ম্যাচটা শেষের দিকে ছিল এই জন্যই মজা করে বলা কথাটা। অন্য কোন কারণে বলা না। আর সকালে বাসায় ফিরছি। একটা বাচ্চা আছে, বাচ্চাটাকে বেশি দিন না দেখে থাকতে পারিনা। এজন্যই অন্য কিছু না।
- উইকেটের পিছনে থেকে সতীর্থদের সাথেই শুধু কথা বলেছে নাকি অস্ট্রেলিয়ানদেরও স্লেজিং করেছেন?
– আমি আসলে উইকেটের পিছনে থেকে স্লেজিং করাটা পছন্দ করি না। উইকেটের পিছন থেকে অন্য ফিল্ডারদের থেকে আমি ভালো ভাবে পুরো মাঠ দেখতে পাই। তাই আমি মনে করি আমার সতীর্থদের সাথে কথা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যা দেখি সেটা শেয়ার করতে চাই। উইকেটে ব্যাটসম্যান যেই থাক আমি স্লেজিং করতে পছন্দ করিনা। আমার কাছে মনে হয় যখন উইকেটে ব্যাটসম্যান থাকে তাঁর অনেক কিছু চিন্তা হয়। তখন ক্রিকেট বিষয়ে কিছু কথা আমরা বলতে থাকি। যেমন রানরেট কমছে বা বাড়ছে – এগুলো বলি। এগুলো বললে ব্যাটসম্যান অনেক কিছু ভাবে, তার চিন্তা হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে কখনো কিছু বলা পছন্দ করিনা।
- অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা স্লেজিং এমনিতেই বেশি করে, এই সিরিজেও কি তেমন কিছু করেছে?
– হ্যাঁ, ওরা করতো। ওরাও কথা বলতো। বিশেষ করে দ্বিতীয় ম্যাচে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে এটা খেলার একটা অংশ। ব্যাক্তিগত ভাবে কাউকে কিছু বলেনি।
- মার্শের সাথে সে দিন শরিফুলের কি হয়েছিল, আপনিও সেখানে ছিলেন, তর্ক তো আপনার সাথেও হয়েছিল?
– না, ওটা সিরিয়াস কিছু না। এগুলো খেলারই একটা অংশ। ওদের ভিতর একটু তর্ক হয়েছিল। সে শরিফুলকে গালি দিয়েছিল। আমি এগিয়ে গিয়ে বলেছি গালি দেওয়ার তো কোন প্রয়োজন ছিলো না। এই একটু কথা হয়েছে এর বেশি কিছু না।
- বিশ্বকাপের দলে থাকার জন্য, বা বিশ্বকাপ নিয়ে আসলে কি কোন ভাবনা আছে?
– না, যেটা বললাম যে আমি এখন অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে চাইনা। আমি শুধু পরিশ্রম করতে চাই ও আমার প্রসেসটা ঠিক রাখতে চাই।
- দলে ফিরে কোচিং স্টাফ বা সিনিয়র ক্রিকেটারদের সমর্থন কতটুকু পেলেন?
– সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছে সবাই সমর্থন করে সব সময়। তারা সব সময়ই সাহায্য করে। এটা শুধু জাতীয় দলেই নয়, তারা যখন ঘরোয়াতে খেলে তখনও খুব সাহায্য করে সবাইকে। জাতীয় দলের কথা বললেও বলবো সবাই একজন আরেক জনকে সমর্থন করে। কোচিং স্টাফের সদস্যরাও খুব সমর্থন দিয়েছে। এভাবে একজন যদি আরেক জনকে সমর্থন দেয় তবে পারফরম করাটাও সহজ হয়ে যায়।
- অ্যাশওয়েল প্রিন্সের (নতুন ব্যাটিং কোচ) সাথে একটা সিরিজ কাজ করেছেন, এখন তাকে দীর্ঘমেয়াদে কোচ করা হয়েছে। কেমন দেখলেন তাকে?
– ও অনেক ভালো, সব সময় সমর্থন দিয়েছে। একটা সিরিজ তো মাত্র ওর সাথে কাজ করলাম।