তিনি যখন মাঠে নামলেন দলের রান তখন ২ উইকেটে ২৩। পর পর দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে হ্যাট্রিক বল খেলতে নামলেন অধিনায়ক জো রুট। তিনি জানেন এখান থেকে এই দলকে কাঁধে চাপিয়ে পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। অবশ্য প্রতি ম্যাচেই তিনি সেটি করে আসছেন। সাদা পোশাকে তিনিই যে এখন দলের মূল ভরসা।
বাকিদের হতাশাজনক ফর্মে তিনিই তো দলকে পিঠে চড়িয়ে প্রতি ম্যাচে ব্যাট হাতে একাই প্রতিরোধ গড়ছেন। হ্যাঁ, এবারো তিনিই কিনা বিপদের সময়ে আবারো দলের ত্রানকর্তা হিসেবেই ২২ গজে রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন। দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে করলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।
তাঁর জন্য এটা অবশ্য নেহাৎ কঠিন কিছুই নয়। সিরিজের প্রথম টেস্টেও করেছিলেন সেঞ্চুরি। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে দলকে শুধু উদ্ধারই করেননি তিনি; বরং নিজের নামে পাশে যোগ করেছেন বেশ কয়েকটি রেকর্ড। ২৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ররি বার্নসের সাথে এক নতুন শুরু করেন রুট।
৮৫ রানের জুটির পথে বার্নস ফিরলে জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে ভীত গড়েন তিনি। বেয়ারস্টোর সাথে ১২১ রানের জুটির পথে রুট তুলে নেন ব্যক্তিগত ফিফটি। এরপর বেয়ারস্টো ফিরলে জস বাটলারের সাথে ৫৪ রানের জুটির পথে রুট তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২ তম সেঞ্চুরি।
বাটলার, মইন আলি, স্যাম কুরানরা আসা যাওয়ার মাঝে থাকলেও একপ্রান্তে আঠার মতোন চিপকে দাঁড়িয়ে ছিলেন রুট। তিনি যেনো দূর্ভেদ্য এক দেওয়াল। ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির কোনো অস্ত্রের সামনেই মাথা নোয়াচ্ছিলেন না এই ইংলিশ অধিনায়ক। এভাবেই এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থেকে তুলে নেন অনবদ্য দেড়শো! সেই সাথে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লর্ডসে চারটি দেড়শোর কীর্তি গড়েন তিনি।
একপ্রান্তে টপাটপ উইকেট পড়ছে, আরেক প্রান্তে দ্রুত রান তুলতে ব্যস্ত রুট। দিনের শেষ বল; স্ট্রাইকে অ্যান্ডারসন, অপরপ্রান্তে ১৮০ রানে অপরাজিত রুট। এই বলটা ডিফেন্স করতে পারলেই কাল সকালে হয়তো রুটের আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পাবে ক্রিকেট বিশ্ব। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে থাকা সবাই হয়তো সেটাই কল্পনা করছিলেন।
কিন্তু, না মোহাম্মদ শামির শেষ বলেই বোল্ড হয়ে গেলেন অ্যান্ডারসন! ৩৯১ রানেই থামলো ইংলিশদের ইনিংস। আর দলের অদম্য সেই কান্ডারি জো রুট অপরাজিত থাকলেন ১৮০ রানেই। ২০ রানের আক্ষেপটা কতটা আছে জানি না। শুধু জানি দলের প্রয়োজনে একা হাতে লড়াই করাটা অভ্যাসে পরিণত করেছেন তিনি!
এই টেস্টের আগে চলতি বছর ২০২১ সালে ১০ টেস্টে ৬২ গড়ে ৪ সেঞ্চুরিতে করেছিলেন ১১১৭ রান। এর মাঝে একটি ডাবল সেঞ্চুরিও আছে বটে। ভারতের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে সেঞ্চুরির মাধ্যমে রুট তুলে নিলেন এ বছরে পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরির পথে সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচকে টপকে রুট এখন সাদা পোশাকে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। সেই সাথে অ্যালেস্টিয়ার কুকের পর দ্বিতীয় ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৯ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
একই সাথে সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৯ হাজার রানের মাইলফলকে অ্যালিস্টেয়ার কুকের পর এখন জো রুটের নাম। ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার ৩০ বছর ২৫৩ দিন বয়সে ৯ হাজার রানে পৌঁছান। সেটি টপকে ৩০ বছর ২২৭ দিনেই এই রানের মাইলফলকে পা দেন রুট। ৩০ বছর ১৫৯ দিনে ৯ হাজার রান পূর্ণ করে এই তালিকার সবার উপরে আছেন কুক।
অবশ্য ভারতের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডে নাম উঠিয়েছন রুট। টেস্টে ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় ছয়ে আছেন তিনি। ২৫৫৫ রান নিয়ে তালিকার সবার উপরে আছেন অজি তারকা রিকি পন্টিং। আর ভারতের বিপক্ষে ২১৪২ রান করে ছয়ে আছেন রুট। তবে ফর্ম বিবেচনায় এই সিরিজেই হয়তো এই তালিকায় পন্টিংকে টপকে যেতে পারেন ইংলিশ অধিনায়ক
টেস্টে জো রুটের সেঞ্চুরির সংখ্যা ২২। আর একটি সেঞ্চুরির করলেই ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির তালিকায় কেভিন পিটারসেনের সাথে যৌথভাবে দুই-য়ে উঠে যাবেন তিনি। সেই সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতে ৩৮ সেঞ্চুরি নিয়ে যৌথভাবে কুকের সাথে শীর্ষে আছেন রুট। চলতি টেস্টেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৬ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। একমাত্র ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়েন রুট।
তিনি ২২ গজের এক চিত্রকর। ব্যাট হাতে ২২ গজে নিজের প্রতিভার ছাপ এঁকে যাচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই। রুট ছিলেন দলের বিপদে; রুট এখনো আছেন। সাদা পোশাকে দলকে কাঁধে চাপিয়ে নিজেও চলেছেন সফলতার শীর্ষে। জো রুট থামবেন কোথায় কেউ জানে কি?