এই তামিমকেই আমরা ভালবাসি

তামিম বললেন, ‘একটা ছোট্ট ঘোষণা দেয়ার ছিল।’ তবে যেই ঘোষণাটা দিলেন সেটা এই মুহুর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা। সবচেয়ে সাহসী ও পেশাদার ঘোষণা। যে দুটোই বাংলাদেশের ক্রিকেটে বিরল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এরচেয়ে বড় ঘোষণা আর হতে পারতো না। এই বার্তাটুকুই এখন দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ওপেনিং পজিশন নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জটিলতা নতুন কিছু না। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখেও একই জটিলতায় পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে এবার চিত্রটা একটু ভিন্ন ছিল। এই মুহুর্তে দলে তিনজন ওপেনার আছেন যারা গত কয়েকটি সিরিজে রোটেট করে খেলেছেন। লিটন, সৌম্য ও নাঈম।

এই তিনজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভরসা করা হয় লিটনের উপর। তবে গত দুই সিরিজে তিনি ইনজুরির কারণে ছিলেন না। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি আবার ফিরেছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে এই সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই হয়তো তাঁকে ওপেন করতে দেখা যাবে। ফলে বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় তিনি খুব ভালো করেই আছেন।

ওদিকে সৌম্য জিম্বাবুয়ে সিরিজে দারুণ খেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যর্থ্য হলেও এখানে পিচের দায়ও আছে। বিশ্বকাপে যেমন পিচে খেলা হবে সেসব স্পোর্টিং উইকেটে সৌম্যের মত একজনকে দরকার। যিনি শুরুতেই আক্রমণাত্মক একটা ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলবেন। মূলত তাঁর ইমপ্যাক্টটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যবহার করতে চায় দল। ফলে নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাঁকেও পরীক্ষা করা হতে পারে।

ওদিকে নাঈম শেখের বিষয়টা একটু জটিল। নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই নিয়মিত রান করছেন। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে তিনি বেশ সফল। তবুও তাঁকে নিয়ে প্রশ উঠছে। কেননা অফ সাইডে নাঈমের দুর্বলতা চোখে পড়ার মত। এছাড়া পাওয়ার প্লের পর তাঁর স্ট্রাইকরেট অনেক কমে যায়। আবার ডট বল খেলার প্রবণতাও বেশি। ফলে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এতকিছুর পরেও যে ওপেনার দলের জন্য নিয়মিত রান করছেন তাঁকে একেবারে পরিকল্পনার বাইরেও রাখা যায় না। ফলে বিশ্বকাপ আলোচনা আছেন নাঈম শেখও।

বোঝাই যাচ্ছে এই তিনজনের মধ্যে ওপেনিং পজিশন নিয়ে দারুণ একটা লড়াই হচ্ছে। তবে এই তিনজনের মধ্যে কোন দুইজন খেলবেন কিংবা আদতেই দুইজন খেলবেন কিনা তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। কেননা লম্বা সময় ধরে টি-টোয়েন্টি দলের বাইরে ছিলেন বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। তিনি বিশ্বকাপের আগে দল ফিরলে, একাদশেও থাকবেন এটাই স্বাভাবিক।

সবমিলিয়ে দল, তিন ওপেনার, নির্বাচক এবং দর্শকদের মধ্যেও একটা অস্থিরতা কাজ করছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দল একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে পারছিল না। বিশ্বকাপের দুই মাস আগেও দল জানেনা তামিম ইকবাল ফিরবেন কি ফিরবেন না। তামিম ইকবাল ফিরলেও বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাবেন কিনা এমন প্রশ্নও ছিল। বিশ্বকাপ তাঁর আগের পারফর্মেন্স ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবুও নির্বাচকরা তামিমের অভিজ্ঞতাকে বিশ্বকাপে চাচ্ছিলেন।

ওদিকে তামিম যদি দলে ফিরতেন তাহলে এটাও খুব স্বাভাবিক যে তিনিই ওপেন করতেন। তামিমের মত একজন ক্রিকেটারকে বিশ্বকাপ দলে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ দল নিশ্চই তাঁকে বসিয়ে রাখতো না। কিংবা তামিম বিশ্বকাপে খারাপ খেললেও সেই সময় তাঁর জায়গায় অন্য কাওকে খেলানোটাও সহজ কাজ হতো না।

ফলে পুরো বিশ্বকাপটাই তামিমকেই খেলতে হতো। সমস্যা আরেকটা ছিল। বিশ্বকাপ দলে বাংলাদেশ নিশ্চই চারজন ওপেনার নিয়ে যেত না। সর্বোচ্চ তিনজন ওপেনার হয়তো দলের সাথে যাবেন। সেক্ষেত্রে তামিম ফিরলে সৌম্য, লিটন কিংবা নাঈমদের একজন বাদ পড়তেন। যেই তিনজন কিনা শেষ কয়েক সিরিজে বাংলাদেশের ওপেনিং স্পট সামলেছেন।

এতকিছু বলার কারণ হচ্ছে তামিমকে বড় একটা ধন্যবাদ জানানো। ওপেনিং পজিশনকে ঘিরে যে জটলা পাকিয়েছিল তা একমাত্র তামিমই খুলতে পারতেন। তামিমের ছোট্ট ঘোষণাটিই বিশ্বকাপের আগে দলকে একটি স্বস্তির জায়গা করে দিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তামিমের গড় কত, স্ট্রাইকরেট কত কিংবা তিনি আদৌ টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পান কিনা সেই আলোচনাই আজ আর করতে চাই না। কেননা তিনি নিজেই সেই আলোচনার ইতি টেনেছেন।

এই ছোট্ট ঘোষণাগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেকে ঠিক সময়ে দিতে পারেন না। তামিমের বিকল্প যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তৈরি হয়েছে সেটা তিনি অনুধাবন করেছেন। সেজন্য জায়গাও ছেড়ে দিয়েছেন। তামিমের কাছে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো অনেক কিছু আশা করে। ওই দুই ফরম্যাটে নিঃসন্দেহে তামিম দেশের সেরা ওপেনার, তাঁর বিকল্পও নেই।

বাংলাদেশ দলের স্বার্থে নির্বাচক কিংবা টিম ম্যানেজম্যান্টেরও এই সিদ্ধান্ত গুলো নেয়ার কথা ছিল। এই বিষয়গুলো সামলানো তাঁদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। তামিম টি-টোয়েন্টি নাকি টেস্টে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কিপার মুশফিক নাকি ব্যাটসম্যান মুশফিককে বাংলাদেশের বেশি প্রয়োজন এগুলো তাঁদের আরো ভালো বোঝার কথা ছিল। তাহলে তামিমদের নিজে দায়িত্ব নিয়ে আর ফেসবুক বার্তা দিতে হয়না। আবারো বলছি এই সাহসটা, এই দায়িত্বটা ও এই পেশাদারিত্বটা দেখানোর জন্য তামিম ইকবালকে ধন্যবাদ। এই তামিমকেই আমরা ভালবাসি।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link