ছেলেটার উচ্চতা ক্রিকেটার হতে যথেষ্ট নয় বলে কক্সবাজার চষে বেড়িয়েছেন সাইকেল চেপে, লম্বা হবেন বলে! ডেডিকেশনের সূত্রপাত বা উত্থানের শুভারম্ভের সে পথ পুরোটাই বালির স্বর্গরাজ্য ছিল, তার সাথে তাঁর প্যাডেল চাপার ক্লান্তি দূরীকরণে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের প্রকৃতি নিজের সবটা উজাড় করেছে তার জন্য! ফুলের সুবাস, জলকেলি, বিশুদ্ধ বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজে নিজের ভেতর নিজেকে তৈরি করেছেন তিনি, দেশের জন্যে, দশের জন্যে।
অভিষেক হয়েছে এমন একজনের জায়গায় যিনি বিশ্ব শাসাচ্ছেন বি শ্বসেরা হয়ে। উত্তপ্ত পজিশনে নেমে উত্তাপে পুঁড়ে না গিয়ে পোঁড় খেয়ে পোক্ত হয়েছেন, নিজেকে করেছেন সমীহ জাগানিয়া। ব্যাটিংয়ে নামতে নিরাপত্তার খাতিরে সঙ্গে করে নামা সরঞ্জামসমগ্রের সম্মিলিত ওজন হতে পারে তার ওজনের সমান কিন্তু দৃঢ়তায়, দক্ষতায় শুধু সরঞ্জাম নয়, বিশ্বের বাঘা বাঘা ওজনদার বোলারদেরও তুড়ি মেরেছেন উইলোর শুদ্ধ শব্দে।
একসময় গড় ছুঁয়েছে আকাশ। এক এক করে আসমানের ষষ্ঠ ধাপে পৌঁছে গেছেন। উপরে কেবল ডন, স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। ৯৯.৯৬ গড়ের মহামানবের আক্ষেপ দশমিক শূন্য চার। যে সম্পর্কে উনার স্ত্রী বলেছিলেন যথার্থ! ‘এই দশমিক শূন্য চারেই লুকিয়ে আছে লৌকিক-অলৌকিকের পার্থক্য’। মিমিও হয়ত তাই লৌকিকতার খাতিরে সপ্তশৃঙ্গ ছুঁতে পারেননি! সমসাময়িকদের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ গড়, শতাব্দী পুরনো ইতিহাসে বহু আগেই গত হওয়া ডন ব্র্যাডম্যান কেবল উপরে, ওপারে তো আরো অনেকেই আছেন, তারপরও! কম কিসে, তাও বাঙালি হয়ে!
মুমিনুল হকের অভিষেক হয়েছে সাকিব আল হাসানের জায়গায়, তাঁর ইনজুরিতে। তারিখটা নভেম্বর ৩০, ২০১২। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতেই যখন বিপক্ষে একসময়ে বিশ্বকাঁপানো দল, তিনি ভেঙ্গে পড়তে পারতেন। কিন্তু সাকিবের মমতায় মেশানো অসাধারণ ক্ষেত্রে কেউ সাধারণ হয়ে থাকতে পারে না। বাংলাদেশের শচীন কিংবা পকেট ডায়ানামাইট মিমিও পারেননি গড়পড়তা হতে। তাই তো দীর্ঘদিন তর্কবিতর্ক আর অফফর্মে পড়েও কাগজেকলমে এখনও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গড়ের টেস্ট ব্যাটসম্যান তিনি। তিনি শিখিয়েছেন ধারাবাহিকতার ধারাপাত! টানা এগারো টেস্টে ফিফটির দুঃসাহস দেখিয়েছেন প্রথম বাঙালি হয়ে।
টেস্ট মিমির পূণ্যস্থান। একজন ক্রিকেটার হিসেবে সব ফরম্যাটেই পারদর্শী হওয়াটা একটা গুণ। সবার সব গুণ থাকে না, আবার কারো কারো থেকেও নানা বাধায় তা প্রকাশিত হয় না। মুমিনুল মাঝেমধ্যে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু বিকাশ হয়নি! ছোট্ট কাঁধটা এখন আগের চেয়ে শক্তপোক্ত হয়েছে, শিখেছে ভার নিতে। একদিন ভারোত্তোলন নিশ্চয়ই হবে!
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আবির্ভাব হয় রীতিমতো ঝড়ো হাওয়া হয়ে। তারপর অজানা বাতাসে মিলিয়ে যান দূর দিগন্তে। সেখান থেকে গন্তব্য চিনে সবাই নতুন পথচলা শুরু করতে না পারলেও মিমি পারবেন বলে বিশ্বাস। বিশ্বাসের পালে জোর হাওয়া লাগে নামের আদ্যক্ষর ‘ম’ বলেই। আর শেষটাও সুরভিত। সৌরভ নামের অর্থ যে মিষ্টতায় ভরপুর।
বিকেএসপির ক্ষুদ্রকায় শারীরিক গড়নের মমিমুল এখন বড় হয়েছেন। বঙ্গ ক্রিকেট আর তুমি মাঠে ফিরলে আবার একটা ‘মিমি স্টাইলে’ মিনি বিস্ফোরণ করে দিয়ো। তোমার ক্ল্যাসি ব্যাটিং দেখার তৃপ্তি থেকে কতদিন বঞ্চিত হয়ে আছি আমরা!