দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট পুন:র্জন্মের সময় দলটার হাল ধরেছিলেন তিনি। এর আগে ক্রিকেট খেলার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার হয়েও নিজের অভিষেক ম্যাচেই রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার দু:সময়ে দেশটির হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে রান করে গিয়েছেন। আবার দক্ষিণ আফ্রিকারও ত্রাণকর্তা হয়ে এসেছিলেন কেপলার ওয়েসেলস।
ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল কেপলারের। স্কুলে রাগবি, সাঁতার, টেনিস, ক্রিকেট সবই খেলতেন। এই সবগুলোতেই স্কুলের সেরাদের একজনও ছিলেন তিনি। তবে সাঁতারটা একসময় তাঁকে থামিয়ে দিতে হয়। একবার সাঁতার কাটতে গিয়ে বড় এক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন।
তবে টেনিসটা লম্বা সময় খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সীদের মধ্যে সেরা ছিলেন কেপলার। তবে এক সময় তাঁর বেশির ভাগ ম্যাচ পড়তো সিনিয়রদের সাথে। ফলে তখন আর পেরে উঠতেন না ১৬ বছর বয়সী কেপলার।
একদিন টেনিস ম্যাচ হেরে রাগে ব্যাটের সব স্ট্রিং ছিড়ে ফেলেছিলেন। মনে মনে ভেবেছিলেন এখন থেকে পুরো মনোযোগ দিবেন ক্রিকেটেই। অবশ্য কেপলারের ক্রিকেট যাত্রাটাও বেশ পুরোনো। মাত্র ছয় বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। ৯ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে খেলেন তিনি। নিজের থেকে চার বছরের বড়দের সাথে ব্যাটিং করে ঝড় তুলেছিলেন।
একই বছরে ৮০,৮০,৮৮ ও ১২১ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর থেকে দ্রুতই ঘরোয়া ক্রিকেটে এগিয়ে যেতে থাকেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। নয় নম্বরে নেমে করেছিলেন ৩২ রান। এরপর মাত্র ১৮ বছর বয়সেই খেলতে শুরু করেন কাউন্টি ক্রিকেট। এমন প্রতিভা নিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার সুযোগ হচ্ছিল না তাঁর। কেননা সেই সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
৭০ এর দশকের শেষের দিকে ক্রিকেট খেলতে পাড়ি দেন অস্ট্রেলিয়ায়। ২১ বছর বয়সে সিডনির একটি ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করেন। এক ম্যাচে ১২৩ রানের ইনিংস খেলার পর অস্ট্রেলিয়ার গনমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ঝড় উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পান এই ব্যাটসম্যান।
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেয়া কেউ সেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষিক্ত হয় ১৯৮২ সালে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্টেই তোলপাড় ফেলে দেন। প্রথম ইনিংসে খেলেন ১৬২ রানের বিশাল এক ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসেও করেছিলেন ৪৬ রান। সেই ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন কেপলার। ওই সিরিজে মোট চার ম্যাচে ৪৮.২৫ গড়ে করেছিলেন ৩৮৬ রান।
পরে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৮৩ বিশ্বকাপেও খেলেন তিনি। পরের বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও দারুণ খেলেছিলেন। ৪২.৬৬ গড়ে করেছিলেন ২৫৬ রান। এর মধ্যে এক ইনিংসে করেছিলেন ১৭৯ রান। এটিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কেপলারের সর্বোচ্চ স্কোর।
১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ খেলেন কেপলার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্ট ম্যাচের পর হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। তখন হয়তো কেপলার জানতেন না ছয় বছর পর আবার ভিন্ন একটি দেশের অধিনায়ক হয়ে ফিরতে হবে তাঁকে।
মাঝের এই সময়টাতেও নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। তবে ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান তিনি। ভারতের মাটিতে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সাথে নামেন অধিনায়ক হিসেবে।
দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ক্রিকেট যাত্রার হাল ধরেন এই ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও পরের বছর বিশ্বকাপ খেলেন তিনি। শেষে ১৯৯৪ সালে ক্রিকেটকে বিদায় জানান কেপলার।
সবমিলিয়ে দুই দেশের হয়ে মোট ৪০ টেস্ট ও ১০৯ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪০ টেস্টে ৪১.০০ গড়ে করেছেন ২৭৮৮ রান। ওদিকে ১০৯ ওয়ানডে ম্যাচেও ৩৫ গড়ে করেছেন ৩৩৬৭ রান। টেস্ট ও ওয়ানডেতে যথাক্রমে তাঁর ঝুলিতে আছে ৬ টি ও ১ টি সেঞ্চুরি।
ওদিকে ৩১৬ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৫০.৩৮ গড়ে করেছেন ২৪৭৩৮ রান। বিরাট এক কিংবদন্তি তিনি। দু’টি ভিন্ন দেশের হয়ে খেলে সমান সাফল্য পাওয়া মুশকিল। এই কঠিন কাজটাই মোটামুটি সহজেই করেছেন কেপলার ওয়েসেলস।