আরও পাঁচ বছর খেলবেন তামিম!

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ইভেন্টে স্বরণীয় কিছু জয় থাকলেও বড় কোন অর্জন নেই বাংলাদেশের। তাই ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতে সেই আক্ষেপ ঘুচাতে চান তামিম ইকবাল খান। বাংলাদেশে ওয়ানডে অধিনায়ক মনে করেন বিশ্বকাপ জেতার জন্য আগামী আসরই সবচেয়ে বড় সুযোগ।

এর আগের বিশ্বকাপ গুলোতে বাংলাদেশের অধিনায়করা শিরোপা জেতার কথা না বললেও তামিম জানিয়েছেন তিনি অধিনায়ক থাকলে শিরোপা জেতার ঘোষণা দিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন। আজ (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাসেল আর্নল্ডের শো ‘চিলিং উইথ রাসেল’-এর ফেসবুক লাইভে এসব কথা বলেন তিনি।

তামিম বলেন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপে যদি আমিই দলকে নেতৃত্ব দেই, প্রতিটি বিশ্বকাপেই আমরা যখন গিয়েছি, বিভিন্ন অধিনায়করা বলেছেন যে ‘আমরা ভালো করতে চাই বা সেমি-ফাইনাল খেলতে চাই কিংবা হারাতে চাই’, এসব নানা কথা… আমি ২০২৩ পর্যন্ত নেতৃত্বে থাকলে এই ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকাপে যে চাই যে, শিরোপা জিততে এসেছি। স্রেফ খেলতে বা লড়াই করতে নয়। আমি চাইব কাপ জিততে। এটাই আমার ভাবনায় আছে।’

২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ভারতে। ওটাই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হবে তামিম সহ দলের বাকি তিন সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমের। এই চার ক্রিকেটার বাংলাদেশের অনেক জয়ের নায়ক হলেও বড় কোন কিছু জিততে পারেননি এখনো। একমাত্র বড় অর্জন বলতে একটা ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ান হওয়া।

তিন বার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেননি তাঁরা। এছাড়া আইসিসির ইভেন্টে সর্বোচ্চ অর্জন ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলা। তামিম মনে করেন এই আক্ষেপ দূর করার বড় সুযোগ আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। আর তামিমকে আশাবাদী করছে তাদের চার জনের অভিজ্ঞতার সাথে তরুণদের পারফরম্যান্স।

তামিম বলেন, ‘ওয়ানডে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি আমি। যদি দেখেন, আমি, সাকিব, মুশফিক এবং অবশ্যই মাহমুদউল্লাহ – আমরা অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের হয়ে খেলছি। তবে এখনও আমরা বড় কিছু অর্জন করতে পারিনি আমাদের ক্রিকেটে। ম্যাচ জিতেছি, সিরিজ জিতেছি। কিন্তু আইসিসি ইভেন্টে বড় কিছু জিততে পারিনি। ২০২৩ বিশ্বকাপকে আমি মনে করি, আমাদের জন্য দারুণ সুযোগ।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ দিকে। তিন-চার-পাঁচ বছর আছে আমাদের। আমরা এমন কিছু করে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই যা বাংলাদেশ সবসময় মনে রাখবে। আমাদের চারজনের যে অভিজ্ঞতা, পাশাপাশি তরুণ যে ক্রিকেটাররা আছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমাদের অবশ্যই সুযোগ আছে (২০২৩ বিশ্বকাপে)।’

টেস্ট এবং ওয়ানডে খেললে গত দেড় বছর ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন তামিম। অনেকেই মনে করছেন টি-টোয়েন্টিতে আর নাও ফিরতে পারেন তিনি। আজ এই বিষয়ে কিছু না বললেও তামিম জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে তাঁর অর্জনের এখনো অনেক কিছুই রয়েছে।

আর অন্তত পাঁচ বছর খেলতে চান তিনি। তামিম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও আমার অনেক অনেক কিছু অর্জনের আছে। এখন আমার বয়স ৩২-৩৩, আরও বছর পাঁচেক বেশ ভালোভাবেই আছে আমার সামনে।’

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে নিজকে প্রত্যহার করে নিয়েছেন তামিম। আজ তামিম কথা বলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সম্ভাবনা নিয়েও। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ এই ওপেনার জানিয়েছেন এটাই বাংলাদেশের প্লাস পয়েন্ট।

তামিম বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ম্যাচ জিতেছি, বড় দলগুলিকে হারিয়েছি। তবে আদর্শ হতো, যদি সত্যিই স্পোর্টিং উইকেটে কয়েকটি ম্যাচ খেলতে দেখতাম দলকে। কারণ, বিশ্বকাপে খেলা হবে ভিন্ন ব্যাপার। ম্যাচ জেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমি তাতে একমত। তবে যেহেতু এটা এত বড় একটা টুর্নামেন্টে, সামনের দুই সপ্তাহে (বিশ্বকাপে) যে ধরনের উইকেটে খেলতে হবে, সেসবের সঙ্গে মিল থাকলে ভালো হতো। বাংলাদেশ অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছে, যেটা প্লাস পয়েন্ট।’

বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা পেতে বাছাইপর্ব পার হতে হবে বাংলাদেশকে। বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামবে ১৭ অক্টোবর। প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। প্রথম রাউন্ডে বাংলাদেশ আছে ‘বি’ গ্রপে। সেখানে বাংলাদেশের অপর ‍দু’টি ম্যাচ ১৯ ও ২১ অক্টোবর। প্রতিপক্ষ যথাক্রমে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি।

তামিম জানিয়েছেন বাছাইপর্ব দিয়ে শুরুটা ভালো করলে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘প্রথম বাঁধা আমাদের যে কোনোভাবে পার হতে হবে, যেটা হলো বাছাইপর্ব (প্রথম রাউন্ড)। ওমান, স্কটল্যান্ডের মতো ছোট দলগুলি কখনও কখনও খুব ‘ট্রিকি’ হয়। শুরুটা ভালো করতে হবে আমাদের। ইতিহাস বলে, শুরু ভালো করলে বাংলাদেশ গোটা টুর্নামেন্ট ভালো করে। শুরুটা ভালো না হলে সমস্যা।’

এবারের বিশ্বকাপের মূল পর্বের ম্যাচ গুলো অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বিশ্বকাপের ভেন্যু গুলোতেই আজ থেকে শুরু হয়েছে আইপিএলের বাকি অংশ। আইপিএল শেষেই শুরু হবে বিশ্বকাপ। তাই তামিম মনে করছেন উইকেট গুলোতে টানা খেলা হওয়ার কারণে স্পিনাররা বাড়তি সুযোগ পেতে পারেন। আর এটা হলে ভালো করবে বাংলাদেশ।

তবে তামিম মনে করেন উইকেট ভালো হলে চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে বাংলাদেশ। তামিম বলেন, ‘মূল বিশ্বকাপে গিয়ে কৌতূহল জাগানিয়া হবে, কোন ধরনের উইকেট পাওয়া যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আইপিএল চলবে। উইকেটগুলো তাই ক্লান্ত থাকবে। স্পিনারদের যদি ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকে, আমরা অবশ্যই ভালো করব বলে আমি মনে করি। উইকেট ভালো থাকলে খুব চ্যালেঞ্জিং হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link